ফেসবুক ব্যবহার থেকে সন্দেহ স্বামীকে ফোনের লাইনে রেখে স্ত্রীর আত্মহত্যা

ক্রাইমবার্তা রিপোট:ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে দুই বছর প্রেম। মা-বাবার অমতে পালিয়ে বিয়ে। কিন্তু বিয়ের কয়েক দিন পরই ফেসবুক ব্যবহার নিয়েই স্ত্রীকে সন্দেহ করতে শুরু করেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সিপাহি সোয়াইব খান। এ সন্দেহ থেকে কলহের একপর্যায়ে সোমবার স্বামীকে ফোন করে লাইনে রেখেই গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন স্ত্রী মোহনা আক্তার মারিয়া। হাজারীবাগের ৪৬/২/এ, বাড্ডানগরের ভাড়া বাসা থেকে সোমবার সন্ধ্যায় তার লাশ উদ্ধার করে হাজারীবাগ থানা পুলিশ। নিহত মারিয়া গজমহল ট্যানারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল।

মোহনা আক্তার মারিয়া
বাড়ির মালিক আবদুর রাজ্জাক ও তার স্ত্রী হামিদা খাতুন যুগান্তরকে জানান, ১ নভেম্বর মারিয়া ও বিজিবির সিপাহি সোয়াইব খান তাদের বাসাটি ভাড়া নেন। মারিয়া জানান, চার মাস আগে তারা বাড়ি থেকে পালিয়ে আদালতের মাধ্যমে বিয়ে করেছেন। মাসে তিন হাজার টাকা ভাড়ায় ওই কক্ষটিতে মারিয়া তার বোন মাহফুজাকে নিয়ে থাকত। আর সোয়াইব থাকেন রংপুরে।

হামিদা খাতুন জানান, মারিয়া সারা দিন ফোনে তার স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া করত। প্রায়ই জোরে জোরে ঝগড়ার শব্দ শোনা যেত। মারিয়ার স্বামী তাকে প্রচণ্ড রকম সন্দেহ করত। মারিয়া তাকে (হামিদা) জানিয়ে সে ফেসবুক ব্যবহার করে। ফেসবুকে তার ছেলে বন্ধু আছে কেন, এ নিয়ে তার স্বামী তাকে বকাঝকা করে। এছাড়াও মারিয়ার ফেসবুকের ফ্রেন্ড লিস্টে যেসব ছেলে আছে তাদের ফোন করে বিভিন্ন কথা বলত। এ নিয়ে তারা দিনরাত ঝগড়া করত। সোমবার বিকালে ফোনে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। সন্ধ্যায় মারিয়া ফোনে তার স্বামীর সঙ্গে কথা বলছিল। কথা বলার একপর্যায়ে স্বামীকে লাইনে রেখেই মারিয়া সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়ানা পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দেয়।

মারিয়ার ছোট বোন মাহফুজা জানায়, বিকালে সে তার মামার বাসায় যায়। তখন মারিয়া বাসায় ছিল। সন্ধ্যায় মামার বাসা থেকে ফিরে দেখে দরজা বন্ধ। পরে জানালা দিয়ে ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখে, মারিয়ার লাশ সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছে। বাড়ির মালিক থানায় ফোন করার পর পুলিশ এসে দরজা ভেঙে মারিয়ার লাশ উদ্ধার করে।

মারিয়ার মামি জানান, মাত্র চার মাস আগে পরিবারের অমতে মারিয়া ও সোয়াইব বিয়ে করে। এরপর তারা এক মাস অন্য এলাকায় ছিল। মারিয়ার মা-বাবা বাধ্য হয়ে বিয়ে মেনে নেন। বিয়ের পর মারিয়া ১০৭ গজমহল রোডে তার মা-বাবার সঙ্গে ছিল। নভেম্বরে নতুন বাসা ভাড়া নেয়। মারিয়া স্বামী তার খরচ দিত না। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে সে সাত দিনের ছুটিতে আসে। এ সময় তার জন্য একটি সোনার চেইন ও কিছু জামা-কাপড় নিয়ে আসে। স্বামী-স্ত্রী ঘুরতে বেরিয়ে স্ত্রীর ছেলেবন্ধু আছে, এ সন্দেহ থেকে রাস্তার মধ্যেই ঝগড়া করে। পরে আত্মীয়রা তাদের বুঝিয়ে শুনিয়ে মীমাংসা করে দেন। কিন্তু রংপুর ফিরে যাওয়ার পর থেকেও এসব নিয়ে কলহ অব্যাহত রাখে মারিয়া।

মারিয়ার বাবার নাম আনোয়ার হোসেন। তার বাড়ি ঠাকুরগাঁও সদরের শান্তিনগর গ্রামে। তিনি পেশায় সিএনজি অটোরিকশা চালক। মঙ্গলবার তাকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তিনি অটোরিকশার লাইসেন্স করার জন্য বাড়িতে গিয়েছেন দু’দিন আগে। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ফিরে আসেনি। মারিয়ার মা সালমা বেগম একটি জুতার কারখানায় কাজ করেন। সোয়াইবের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর সদর থানার সফরখালী পাথালিয়া গ্রামে। বিয়ের কাবিননামায় মারিয়ার বয়স লেখা হয়েছে ১ মে ১৯৯৮ আর ছেলের বয়স লেখা হয়েছে ২০ মার্চ ১৯৯৪।

স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন সোম ও মঙ্গলবার কয়েক দফায় বিজিবি সদস্যরা মারিয়ার বাসায় গিয়েছেন এবং তার আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলেছেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মারিয়ার স্বামীকে বিজিবির সংশ্লিষ্ট দফতরে ডাকা হয়েছে। হাজারীবাগ থানার ওসি কাজী আলীমুজ্জামান যুগান্তরকে জানান, এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। আত্মহত্যার নেপথ্যে অন্য কোনো কারণ আছে কিনা, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মারিয়ার স্বামী যেহেতু বিজিবি সদস্য তাই বিজিবিকে অবহিত করা হয়েছে।

Please follow and like us:

Check Also

ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সন্তান নিয়ে ট্রেনের নিচে নারীর ঝাঁপ: মারা যান মা-ছেলে

হাজীগঞ্জে এক বছরের সন্তান আব্দুর রহমানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেন মা তাহমিনা (২৩)। এতে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।