গুলশান মার্কেটে আগুন পরিকল্পিত : রিজভী

ক্রাইমবার্তা রিপোট: রাজধানীর গুলশানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মার্কেটে আগুন লাগার ঘটনাকে পরিকল্পিত বলে দাবি করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, মার্কেটটি আত্মসাৎ করার জন্য ডিএনসিসি মার্কেটে আগুন লাগার ঘটনা একটি পরিকল্পিত নাশকতা। সরকার এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে তিনি অভিযোগ করেন।
আজ শুক্রবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গুলশানের ডিএনসিসি মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে মার্কেটটি সম্পূর্ণরুপে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। শত শত দোকান মালিক ও ব্যবসায়ীরা তাদের কোটি কোটি টাকার ব্যবসা হারিয়ে এখন নি:স্ব হয়ে পথে বসেছেন।

বিএনপির পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিক ও ব্যবসায়ীদের প্রতি আন্তরিকভাবে সহানভুতি প্রকাশ করার পাশাপাশি অবিলম্বে আগুন লাগার কারন অনুসন্ধানে বিশেষজ্ঞ দিয়ে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করা হয়েছে। রিজভী বলেন, ডিএনসিসি মার্কেটের ব্যবসায়ীসহ সকল মহলের দাবিকে পাশ কাটিয়ে এবং কোন প্রকার তদন্তের পূর্বেই ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বললেন-আগুন লাগার ঘটনা নাশকতা নয়, এটি একটি দূর্ঘটনা, পরে তিনি এই বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেন। কোন ঘটনা বা দূর্ঘটনা ঘটলেই প্রধানমন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীন দলের নেতৃবৃন্দ এবং প্রশাসনের দলীয় কর্মকর্তারা উদ্ভট আগাম মন্তব্য করে ঘটনা বা দূর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তকে বাধাগ্রস্ত করতে প্রভাব বিস্তারকে একটি রেওয়াজে পরিণত করে ফেলেছে। তারা এভাবে অশুভ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেন। মূলত: নিজেদের একটি বিশেষ উদ্দেশ্য সাধন করার জন্য নাশকতা, খুন, জখমের আশ্রয় নেয় ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী। তাদের এই সহিংস অপকর্ম ঢাকতে গিয়ে ঘটনা ঘটার সাথে সাথেই কোন রকম তদন্ত ছাড়া বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপানো। মনে হয়-রক্তাক্ত অপকর্মের ঘটনা ঘটানো হবে বলেই তারা আগাম বিবৃতি প্রস্তুত করে রাখেন।
তিনি বলেন, মার্কেটটি আত্মসাৎ করার জন্য ডিএনসিসি মার্কেটে আগুন লাগার ঘটনা একটি পরিকল্পিত নাশকতা। ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ সরকারের লোক দেখানো তদন্ত কমিটিও ইতোমধ্যে প্রত্যাখান করেছেন। গোটা দেশের মালিক হওয়ার জন্যই শাসকদল দেশবাসীর সম্পত্তি গ্রাস করে নিতে চাচ্ছে। আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র পক্ষ থেকে ডিএনসিসি মার্কেটে স্মরণকালের ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনাটি যাতে সুষ্ঠু তদন্তের অভাবে ঢেকে না যায় এবং ব্যবসায়ীদেরকে যাতে মার্কেটটি থেকে উচ্ছেদ করতে না পারে সেজন্য সকল মহলকে সচেতন থাকার পাশাপাশি নাশকতা সৃষ্টিকারীদের মুখোশ উন্মোচন করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। আমি অবিলম্বে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের যথাযথ ক্ষতিপূরণেরও জোর দাবি জানাচ্ছি।
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
রিজভী ক্ষমতাসীন দলের এমপি মনজুরুল ইসলাম লিটন হত্যার দায় তদন্ত ছাড়াই সরকারের তরফ থেকে বিরোধীদলের উপর চাপানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, সরকার এক চোখা নীতিতে চলছে। তারা কোনো অনুষ্ঠান করলে ডিএমপি অনুমতি দেয়। কিন্তু বিএনপি করতে গেলেই যত সমস্যা তৈরি করে।
লিটন হত্যা প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, লিটনের ভাই ও স্ত্রীর কথায় অন্য কিছু বোঝাচ্ছে। কিন্তু তদন্ত ছাড়াই সরকার বিরোধীদলের উপর দোষারোপ করার অভ্যাস হয়ে গেছে।
তিনি আগামীকালের কর্মসূচীর ব্যাপাওে বলেন, আপনারা জানেন-৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপি ঘোষিত সমাবেশ সফল করতে বিএনপি সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। আগামীকালের সমাবেশের অনুমতি চেয়ে গণপূর্ত বিভাগসহ পুলিশ প্রশাসনকে চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সমাবেশের অনুমতি মেলেনি। সরকারী দল ঢাক-ঢোল পিটিয়ে সভা-সমাবেশ করলেও বিরোধী দলের বেলায় যত বিপত্তি। মূলত: সরকার বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক অধিকারকে কেড়ে নিয়ে একদলীয় দেশে পরিণত করেছে। রিজভী আরো বলেন, বিএনপির মতো দেশের একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের যেকোন অনুষ্ঠান সার্বিকভাবে সফল করতে হলে কমপক্ষে দু’তিন আগে থেকে প্রস্তুতি গ্রহণের প্রয়োজন হয়। কিন্তু দূর্ভাগ্য হলেও সত্যি যে, বড় কোন সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে সরকারের অনুমতি পাওয়ার নজীর আছে। আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র পক্ষ থেকে আবারো সরকারের নিকট আহবান জানাচ্ছি এই মূহুর্তে বিএনপি’র সমাবেশের অনুমতি দেয়া হউক। বিএনপি’র শান্তিপূর্ণ সমাবেশকে সাফল্যমন্ডিত করতে আমি বিএনপি’র পক্ষ থেকে দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীসহ দেশবাসীর প্রতি আহবান জানাচ্ছি।
এদিকে বিএনপি ঘোষিত গতকালের কালো পতাকা মিছিল ও কালো ব্যাজ ধারণ কর্মসূচিতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও শাসকদলের ক্যাডারদের বন্দুক, গোলাবারুদসহ ধারালো অস্ত্র নিয়ে অতর্কিত আক্রমনে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীকে আহত ও মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা সত্বেও সকল বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে গণতন্ত্র হত্যা দিবসের কর্মসূচিকে সফল করায় আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র পক্ষ থেকে দলের নেতাকর্মীসহ সকল স্তরের জনগণকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান রিজভী।
তিনি নিন্দা জানিয়ে বলেন, গতকাল কর্মসূচি চলাকালে জয়পুরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি মোজাহার আলী প্রধানের নেতৃত্বে মিছিল চলাকালে মিছিলে গুলিবর্ষণ করে নেতাকর্মীদের আহত করার পাশাপাশি জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মশিউর রহমান বুলুসহ তিন জনকে গ্রেফতার করার ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে তাদের নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি। পাশাপাশি আহত নেতাকর্মীদের আশু সুস্থতা কামনা করছি। এছাড়া যশোরে বিএনপি’র মিছিলে পুলিশ অতর্কিত হামলা চালিয়ে অসংখ্য নেতাকর্মীকে আহত করেছে এবং পৌর বিএনপি’র সভাপতি মারুফসহ বেশ কিছু নেতৃবৃন্দের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমি তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করার জোর দাবি জানাচ্ছি। সারাদেশে একই কায়দায় বিএনপি’র কর্মসূচিতে পুলিশ ও সরকারী দলের ক্যাডাররা হামলা চালিয়ে তা পন্ড করে দিয়েছে। আমি আবারো বিএনপি’র পক্ষ থেকে বিরোধী দলের ন্যায়সঙ্গত কর্মসূচিকে রক্তাক্ত পন্থায় বাধা দেয়ার জন্য অবৈধ সরকারের প্রতি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

 

Please follow and like us:

Check Also

অনিশ্চয়তার নতুন যুগে মধ্যপ্রাচ্য

ইউক্রেন-রাশিয়া রেশ কাটতে না কাটতেই ফিলিস্তিনের গাজায় শুরু হয় ইসরাইলি আগ্রাসন। এরপর থেকে অশান্ত হতে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।