ক্রাইমবার্তা রিপোট:রাজধানীতে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) নতুন অংশ বা নব্য জেএমবির ‘আধ্যাত্মিক নেতা’ আবুল কাশেম ওরফে বড় হুজুরকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম (সিটি) ইউনিট। বিকাশের মাধ্যমে এক ভক্তের পাঠানো টাকা নিতে গিয়ে তিনি গ্রেপ্তার হন বলে দাবি করেছে পুলিশ।
আজ শুক্রবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করেন কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্র্যান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর মিরপুরের সেনপাড়া পর্বতা এলাকার একটি দোকানে বিকাশ নম্বরে এক ভক্তের পাঠানো ১৫ হাজার টাকা নিতে গিয়ে আবুল কাশেম গ্রেপ্তার হন।
মনিরুল জানান, আবুল কাশেমকে নব্য জেএমবির অনেকে বড় হুজুর নামে সম্বোধন করে। ২০১৩ সালে তামিম চৌধুরী ও মাওলানা আবুল কাশেম ওরফে বড় হুজুর রাজশাহীতে একটি বৈঠক করেন। তাঁদের যৌথ চেষ্টায় বাংলাদেশে নব্য জেএমবির জঙ্গিবাদী কার্যক্রমের শুরু হয়।
২০১৪ সালে একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা তাঁর বিষয়ে কিছু তথ্য দেয়। ২০১৫ সালে বড় হুজুরের নামটি পুলিশের কাছে আসে। ২০১৬ সালে গুলশানের ঘটনার পর যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের কাছে থেকে বড় হুজুর সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া যায়।
মনিরুল বলেন, কথিত বড় হুজুর আবুল কাশেম নব্য জেএমবির সদস্যদের জিহাদ, ইসলাম, কুরআন ও হাদিসের বিকৃত ব্যাখ্যা দিতেন। তিনি দিনাজপুরের রানীর বন্দর এলাকার একটি মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। নব্য জেএমবির প্রধান তামিম চৌধুরী, মারজান, হাতকাটা মাহফুজ, রাজীব গান্ধী ওরফে জাহাঙ্গীরসহ জেএমবির অনেক বড় নেতা এই বড় হুজুরের ভক্ত ছিল।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ধর্মীয় উগ্রবাদ সম্পর্কিত বেশ কিছু বই লিখেছেন আবুল কাশেম । তাঁর লেখা নামে-বেনামে বই গুলোর মধ্যে রয়েছে, দাওলার আসল রূপ, জিহাদ কেন করবেন, ইসলামী বসন্ত ইত্যাদি।
সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, আবুল কাশেমের গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলায়। তিনি সপরিবারে অনেক আগে থেকেই পুরান জেএমবির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরবর্তী সময়ে নব্য জেএমবির মতাদর্শ নিয়ে তাঁদের বিভিন্ন কার্যক্রমে মনগড়া ধর্মীয় মতবাদ প্রদান করে দলটিকে হিংস্র করে তোলেন তিনি। গত ২০০৯ সালে জেএমবির একাংশের আমির মাওলানা সাইদুর রহমান গ্রেপ্তার হওয়ার পর নব্য জেএমবির আমির হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন আবুল কাশেম।
মনিরুল ইসলাম জানান, ইতিপূর্বে গ্রেপ্তার হওয়া অনেক জঙ্গির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দীর্ঘদিন ধরে বড় হুজুরকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছিল। নব্য জেএমবির উত্তরাঞ্চলের সামরিক কমান্ডার রাজীব গান্ধী গ্রেপ্তারের পর তাঁর কাছ থেকে আবুল কাশেমের বিষয়টি জানতে পারে পুলিশ। রাজীবের কাছে থেকে পাওয়া ঠিকানা অনুযায়ী দিনাজপুরের একটি মাদ্রাসায় আবুল কাশেমকে খুঁজতে যায় পুলিশ। কিন্তু সেখানে তাঁকে পাওয়া যায়নি।
গত বুধবার রাজধানীর বনানী থেকে জঙ্গি নেতা বড় মিজান গ্রেপ্তার হওয়ার পর আবুল কাশেমের সন্ধান পাওয়া যায়। সেই সূত্র ধরেই গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে।