আন্দোলন বন্ধ করতে ম্যান্ডেলাকে ধরিয়ে দিয়েছিল সিআইএ

Mandela1ঢাকা, ১৬ মে, এবিএন ওয়ার্ল্ড : দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের শীর্ষ নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা ধরিয়ে দিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ- এর এক এজেন্ট। আর সে তথ্য পাচার হওয়ার কারণেই ১৯৬২ সালে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন তিনি। এর পর শ্লথ হয়ে পড়ে বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের গতি। ম্যান্ডেলাকে ধরিয়ে দেয়ার পেছনে মূল ভূমিকায় ছিলো সিআইএর। সম্প্রতি বিস্ফোরক এ তথ্য দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর সাবেক গুপ্তচর ডোনাল্ড রিকার্ড। আর গতকাল এ খবরটি প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত পত্রিকা দ্য সানডে টাইমস। প্রসঙ্গত এর পর ১৯৯০ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পান ম্যান্ডেলা। চার বছর পর দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হন তিনি। দুই মেয়াদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে ৯৫ বছর বয়সে মারা যান অবিসংবাদিত এ নেতা।
এ বছর মার্চে এক ব্রিটিশ চলচ্চিত্র পরিচালককে দেয়া সাক্ষাৎকারে রিকার্ড স্বীকার করেন, তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার তৎকালীন জাতিবিদ্বেষী শ্বেতাঙ্গ সরকারকে ম্যান্ডেলার অবস্থান সম্পর্কে জানান এবং তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই মহান এই নেতাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করত নেলসন ম্যান্ডেলা কমিউনিস্টদের ঘুঁটি এবং সভিয়েত ইউনিয়নের বাইরে অবস্থান করা বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর কমিউনিস্ট। এ কারণে ম্যান্ডেলা কোথায় আছেন সে বিষয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা কর্তৃপক্ষকে তথ্য দিতে গিয়ে তার কোনও সংশয় ছিল না।
ওই সময় রিকার্ড ডারবানে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস-কনসাল হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। তিনি বলেন, আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি) সংবাদদাতাদের কাছ থেকেই তিনি ম্যান্ডেলার ডারবান সফরের খবর পান এবং সফর শেষে তার জোহানেসবার্গে ফেরার খবর পাওয়ামাত্র তা দক্ষিণ আফ্রিকার পুলিশকে জানিয়ে দেন। ডারবান থেকে জোহান্সবার্গে ভ্রমণের পথেই রাস্তা অবরোধ করে ম্যান্ডেলাকে আটক করে পুলিশ এবং দীর্ঘ ২৭ বছর কারাবন্দি জীবন কাটান এই নেতা। শুরু থেকেই ম্যান্ডেলাকে আটকের পেছনে সিআইএ-র হাত থাকার বিষয়টি সন্দেহ করা হলেও এর আগে কখনোই নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
১৯৭৮ সালে সিআইএ থেকে অবসর নেন রিকার্ড। অবসরে যাওয়ার পরও মুখ বন্ধই রেখেছিলেন তিনি। কিন্তু ৮৮ বছর বয়সে মৃত্যুর মাত্র দুই সপ্তাহ আগে মুখ খোলেন রিকার্ড। চলচ্চিত্র পরিচালক জন ইরভিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বর্ণবাদ-বিরাধী আন্দোলনের নেতা ম্যান্ডেলাকে ধরিয়ে দেওয়ার পেছনে তার ভূমিকার কথা স্বীকার করেন।
ইরভিনের চলচ্চিত্র ‘ম্যান্ডেলাস গান’  আগামী সপ্তাহে কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।  চলচ্চিত্রে গ্রেপ্তার হওয়ার আগের কয়েক মাসে ম্যান্ডেলার জীবন তুলে ধরা হয়েছে বলে জানিয়েছে পত্রিকাটি। ম্যান্ডেলার সাবেক সহযোদ্ধারা তার গ্রেপ্তারের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা থাকার খবরে অবাক হননি। এএনসি-র জ্যেষ্ঠ সদস্য রনি কাসরিলস, যিনি একসময় মন্ত্রী হয়েছিলেন ‘সানডে  টাইমস’কে বলেন, (ম্যান্ডেলার গ্রেপ্তারের পেছনে) আমেরিকার ভূমিকা বিশ্বাসঘাতকতার সবচেয়ে লজ্জ্বাজনক উদাহরণগুলোর অন্যতম।
অনাকাঙ্খিত ভাবে ম্যান্ডেলা অত দ্রুত ধরা পড়ে যাওয়ায় বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াই নিশ্চিতভাবেই বাধার মুখে পড়ে। এটি পরিষ্কার যে তৎকালীন সরকার ও তাদের গোয়েন্দারা সিআইএ-র সঙ্গে খুবই ঘনিষ্ঠ হয়ে কাজ করেছে। ঠিক কি ঘটেছিল তা নিয়ে সিআইএ-র পরিষ্কার তথ্য দেওয়া উচিত।
দৈনিক টেলিগ্রাফকে ম্যান্ডেলার দীর্ঘদিনের আইনজীবী জর্জ বিজস বলেন, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পশ্চিমাদের ভূমিকা যেমন সম্মানজনক তেমনি অসম্মানজনক অনেক কাজও তারা করেছে। সিআইএ-র ভূমিকা থাকার বিষয়ে আমরা কখনওই নিশ্চিতভাবে কিছু জানতে পারিনি। কিন্তু ওই সময় যুক্তরাষ্টের ভাবাদর্শের কারণে আমরা ম্যান্ডেলার গ্রেপ্তারের পেছনে তাদের জড়িত থাকার সম্ভাবনার বিষয়টিও উড়িয়ে দিতে পারিনি। আমার মনে হয় না জন এফ কেনেডি সরকার ম্যান্ডেলার উপর সন্তুষ্ট ছিল।

এবিএন/সোম/আন্তর্জাতিক/ডেস্ক/মাম

Check Also

ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়

দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।