প্রাক-প্রাথমিকে ব্যাগ নিষিদ্ধ, প্রাথমিকেও ভারে নিষেধাজ্ঞা

ক্রাইমবার্তা রিপোট:সদ্য স্কুলে যাওয়া অর্থাৎ প্রাক-প্রাথমিকের শিশুদের কাঁধে-পিঠে কোনো ধরনের বইয়ের ব্যাগ চাপানোর ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন আদালত। একই সঙ্গে শিশুরা যখন প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করবে, তখন শরীরের ওজনের দশ ভাগের এক ভাগ সমান ওজনের বইয়ের ব্যাগ দেওয়া যাবে শিশুর কাঁধে।

এ বিষয়ে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে আজ বুধবার বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

আদালত বলেছেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে এই বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে হবে। একই সঙ্গে আইন প্রণয়নের আগে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। সেই প্রজ্ঞাপনটি রায় হাতে পাওয়ার এক মাসের মধ্যেই জারি করতে হবে।

গণশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এবং শিক্ষাসচিবকে এই রায় বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।

প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কে বাংলাপিডিয়ায় বলা হয়েছে, ‘প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাকে সাধারণত দুটি ধাপে বিভক্ত করা হয় তিন-পাঁচ বছরের শিশুদের জন্য নার্সারি/প্লে গ্রুপ বা প্রাক-কিন্ডারগার্টেন এবং পাঁচ-ছয় বছরের শিশুদের জন্য প্রাক-প্রাথমিক বা কিন্ডারগার্টেন। অবশ্য, কোনো কোনো স্কুলে তিন-চার বছরের শিশুদের জন্য প্লে-গ্রুপ, চার-পাঁচ বছরের শিশুদের জন্য নার্সারি, পাঁচ-ছয় বছরের শিশুদের জন্য কেজি-১ এবং ছয়-সাত বছরের শিশুদের জন্য কেজি-২ শ্রেণিতে শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে।’

স্কুলে শিশুদের ব্যাগ বহন নিয়ে ২০১৫ সালে রিট করেন হাইকোর্টের তিন আইনজীবী মাসুদ হোসাইন দোলন, মোহাম্মদ জিয়াউল হক ও আনোয়ারুল করিম। এরপর ওই বছরের ১১ জুলাই হাইকোর্ট রুল জারি করেন।

রিট আবেদনে বলা হয়, প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ বিভিন্ন দেশে স্কুল শিশুদের ব্যাগ বহনে আইন রয়েছে। এতে দেখা যায়, প্রাথমিক-পূর্ব শিশুরা ব্যাগ গ্রহণ করে না। প্রাথমিক পর্যায়ের শিশুদের ক্ষেত্রে শিশুর ওজনের ১০ ভাগের বেশি ওজনের ব্যাগ বহন করা যায় না। এতে শিশুর স্বাস্থ্যে প্রভাব পড়ে।

রিট আবেদনে বিভিন্ন গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদন যুক্ত করা হয়। ওইসব প্রতিবেদনে বলা হয়, জীবনই যদি না বাঁচল, তবে তা আবার কেমন ধারার পড়ালেখা? দিল্লিতে শুরু হলো স্বাক্ষর সংগ্রহ। তার পরিপ্রেক্ষিতে কোন ক্লাসের শিশুরা সর্বোচ্চ কত ওজনের ব্যাগ বইতে পারবে, সে ব্যাপারে কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় নীতিমালায় নির্দেশনাও দেওয়া হয়। দিল্লি হাইকোর্ট প্রাক-স্কুলপর্যায়ে ব্যাগের ওজন শিশুর ওজনের ১০ শতাংশের কম করার নির্দেশ জারি করেন।

আদালত রায়ে বলেন, রুল জারির সময় আমরা একটি সার্কুলার জারি করতে বলেছিলাম। কিন্তু মন্ত্রণালয় তা করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। আদালত আরো বলেন, শিশুরা জাতির ভবিষ্যৎ। শিশুদেরকে ছোট থেকে মানুষিক ও শারীরিকভাবে যন্ত্রণাদায়ক এমন কোনো কিছু করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

রিটকারীরা তাঁদের আবেদনে অতিরিক্ত তথ্য হিসেবে আরো যোগ করেছিলেন, সম্প্রতি ইন্ডিয়ান জার্নাল অব পেডিয়াট্রিকসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩০ শতাংশ শিশু বেশি ওজনের ব্যাগ বহনের কারণে পিঠে ব্যথায় ভুগছে। আরেক প্রতিবেদনে ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন উদ্বেগ জানিয়ে বলেছে, বেশি ওজনের ব্যাগ বহনের কারণে শিশুদের স্থায়ী শারীরিক ক্ষতি হয়ে থাকে। বয়ঃসন্ধিকালে হাড়ের কাঠামো ঠিক হয়, এ সময় বেশি ওজন বহন করা একেবারে অনুচিত।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সূত্রে জানা গেল, সংযুক্ত আরব আমিরাতেও শিশুরা এভাবে ভুগছে। গত বছর দেশটির ফেডারেল ন্যাশনাল কাউন্সিল সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ভারী ব্যাগ বহনের কারণে শিশুদের মেরুদণ্ডের স্থায়ী ক্ষতি হচ্ছে। স্পেনেও আছে একই সমস্যা। দেশটির ‘আর্কাইভস অব ডিজিজ ইন চাইল্ডহুড’ শীর্ষক গবেষণায় বলা হয়েছে, স্কুলব্যাগের অতিরিক্ত ওজনে শিশুর পিঠব্যথাসহ নানা শারীরিক সমস্যা হয়। একই অবস্থা পাকিস্তানের শিশুদেরও।

Check Also

প্রত্যেকটা অফিসের কেরানি পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের দোসর : আসিফ মাহমুদ

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।