ঢাবিতে শাকিলের জানাজা সম্পন্ন-শাকিলের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন : দেহে আঘাতের চিহ্ন নেই

ক্রাইমবার্তা রিপোট:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিলের জানাজা সম্পন্ন হয়েছে।

আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জানাজা শেষ হয়।

জানাজায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, শাকিলের ছোট ভাই বাবুসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

এর আগে সকাল সোয়া ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মাহবুবুল হক শাকিলের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ময়নাতদন্ত শেষে ঢামেকের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, শাকিলের শরীরে আঘাতের চিহ্ন নেই। তাঁর হৃৎপিণ্ডটি বড় ছিল।

সোহেল মাহমুদ সাংবাদিকদের আরো জানান, তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের মাধ্যমে শাকিলের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে। তাঁর শরীর থেকে রক্ত, হৃৎপিণ্ড ও ভিসেরা সংগ্রহ করা হয়েছে।

ময়নাতদন্ত শেষে ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী শাকিলকে গোসল করানো ও কাফন পরানো হয়। এর পর লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁর জানাজা সম্পন্ন হয়।

সকাল পৌনে ৮টায় শাকিলের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য রাজধানীর বারডেম হাসপাতালের হিমঘর থেকে ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওই সময় লাশের সঙ্গে ছিলেন গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে মৃত্যু হয় মাহবুবুল হক শাকিলের। তাঁর বয়স হয়েছিল ৪৭ বছর। তিনি স্ত্রী, এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বিশেষ সহকারী শাকিলের অকালমৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী মরহুমের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন।

শাকিলের মৃত্যুর সংবাদ শুনে গুলশানের সামদাদো রেস্তোরাঁয় ছুটে যান আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা।

বিকেলে সেখানে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ সাংবাদিকদের জানান, গত সোমবার রাত ৮টায় শাকিল সামদাদোতে আসেন। সেখানেই তিনি রাতে খাওয়া-দাওয়া করে একটি কক্ষে বিশ্রামে ছিলেন। গতকাল দুপুর ১টা পর্যন্ত তাঁর কোনো খবর না পেয়ে রেস্তোরাঁর লোকজন ডাকতে যায়। কিন্তু তখন কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি। পরে লোকজন ঘরে ঢুকে মেঝেতে তাঁর লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ পরে শাকিলের পরিবারের লোকজনকে খবর দেয়।

মাহবুবুল হক শাকিল এর আগে প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব (ডিপিএস) হিসেবে সিনিয়র সহকারী সচিব পদমর্যাদায় দায়িত্ব পালন করেছেন।

শাকিল ১৯৬৮ সালের ২০ ডিসেম্বর টাঙ্গাইলে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে এসএসসি ও আনন্দমোহন কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। তিনি ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মাহবুবুল হক শাকিলের বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায়। তাঁর বাবা জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা। সাবেক এই ছাত্রনেতা সাহিত্য অনুরাগী ও লেখক ছিলেন। তাঁর প্রকাশিত বইগুলো হলো ‘খেরোখাতার পাতা থেকে’ ও ‘মন খারাপের গাড়ী’।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিলের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।

তার শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ।

তিনি জানান, শাকিলের মরদেহে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে তার হার্টের অংশ একটু ফোলা ছিল। কোনো খাদ্য বিষক্রিয়ায় এমনটি হয়েছে কিনা তা পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পাওয়ার পর কারণ জানা যাবে।

এর আগে বুধবার সকাল পৌনে ৮টার দিকে বারডেম থেকে শাকিলের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়।

সেখানে থেকে তার প্রথম জানাজার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজধানীর গুলশান-২ এর হোটেল সামদাদো থেকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

সামদাদো হোটেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সোমবার রাতে মাহবুবুল হক শাকিল ওই হোটেলের একটি কক্ষে ছিলেন। কিন্তু মঙ্গলবার সকাল থেকে কোনো সাড়া শব্দ না পাওয়ায় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হোটেল কর্মকর্তারা কক্ষটিতে গিয়ে শাকিলের মরদেহ দেখতে পান।

উল্লেখ্য, শাকিল অতিরিক্ত সচিব মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারীর দায়িত্ব পালন করছিলেন। এর আগে তিনি প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিবের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৬৮ সালে ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন শাকিল। পেশায় আইনজীবী তার বাবা ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। আর মা পেশায় শিক্ষক। শাকিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করেন।

আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। প্রয়াত শাকিল এবং আইনজীবী স্ত্রীর সংসারে একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে।

Check Also

সাতক্ষীরা জেলা আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক মাসিক সভা অনুষ্ঠিত

শাহ জাহান আলী মিটন, সাতক্ষীরা:সাতক্ষীরা জেলা আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (১০ নভেম্বর) …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।