প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফর আবারো পেছালো

ক্রাইমবার্তা  রিপোট:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফর আবারো পিছিয়ে গেছে। আগামী ১৮ ডিসেম্বর তিনদিনের সফরে প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি যাওয়ার কথা ছিল। দুই দেশ আলোচনা করে এই সফরের জন্য নতুন তারিখ নির্ধারন করবে।

সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, প্রধানমন্ত্রীর সফরে শেষ মুহূর্তে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন তারিখ শিগগির চূড়ান্ত করা হবে।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ফাইল ফটো)

এর আগে ৩ ডিসেম্বর এই সফর অনুষ্ঠানের জন্য আলোচনা চলছিল। সফরের প্রস্তুতি হিসেবে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক ৮ নভেম্বর দিল্লি গিয়েছিলেন। কিন্তু ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এস জয়শঙ্কর ও পানি সম্পদ সচিব শশী শেখরের সাথে আলোচনা করে তিস্তার পানি বণ্টনের ব্যাপারে কোনো নিশ্চয়তা পাননি তিনি। তবে অববাহিকাভিত্তিক পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ভারত তার আগ্রহের কথা জানিয়েছিল। একটি নির্দিষ্ট ইস্যুতে আটকে না থেকে অন্যান্য বিষয় নিয়ে অগ্রসর হওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিকল্পিত দিল্লি সফর নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানায় ভারত।

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি এখনো বাংলাদেশের অগ্রাধিকার। এ ব্যাপারে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ইতিবাচক থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সম্মতি পাওয়া যাচ্ছে না। সম্প্রতি ভারতে ৫০০ ও এক হাজার রুপির পুরোনো নোট বাতিল ঘোষণা ও পশ্চিমবঙ্গে সেনাবাহিনীর তৎপরতার তীব্র প্রতিবাদ জানান মমতা। এ কারণে কেন্দ্রের সাথে মমতার দূরত্ব আরো বেড়েছে। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরকালে তিস্তা চুক্তি সইয়ের সম্ভাবনা আরো ক্ষীণ হয়ে আসে। তবে গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণে ভারতের কাছ থেকে সহায়তার ঘোষণা আশা করছে বাংলাদেশ।

প্রধানমন্ত্রীর সফরে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ভারতের ব্যবহারের জন্য বিধিবিধান (এসওপি) সই, উপকূলীয় ও নৌ প্রটোকল রুটে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল, পায়রা বন্দরে টার্মিনাল নির্মাণে ভারতীয় কোম্পানির সাথে সইয়ের জন্য চুক্তিগুলো চূড়ান্ত করে রাখা হয়েছে। গতকাল বুধবার দুই দেশের নৌ পরিবহন সচিব পর্যায়ের বৈঠকে এসব চুক্তি চূড়ান্ত করা হয়। এছাড়া আরো কয়েকটি চুক্তি প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরকালে সই হওয়ার কথা রয়েছে।

ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে তিস্তা চুক্তি দীর্ঘদিন ঝুলে রয়েছে। ২০১১ সালে ভারতের তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরকালেই তিস্তা চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির আপত্তির কারণে শেষ মুহূর্তে এই চুক্তি সইয়ে অপারগতা প্রকাশ করে ভারত। এর প্রতিক্রিয়ায় চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারে সম্মতিপত্র সইয়ে বাংলাদেশ বিরত থাকে।

অবশ্য গত বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরকালে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারে দিল্লির সাথে সমঝোতা স্মারক সই করে বাংলাদেশ। এই সফরে দুই দেশের মধ্যে উপকূলীয় জাহাজ চলাচলসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক চুক্তি ও সিদ্ধান্ত হয়। নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে ভারতের কোনো প্রধানমন্ত্রীর এ যাবতকালের ‘সবচেয়ে সফল’ সফর হিসাবে বিবেচনা করে দিল্লি। এই প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরকেও সফল করতে চায় ঢাকা।

পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে তিস্তার মত স্পর্শকাতর কোনো চুক্তি সইয়ে এর আগে আগ্রহ দেখাননি মমতা। সর্বশেষ নির্বাচনে তার দল তৃণমূল কংগ্রেস দ্বিতীয়বারের মত পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় আসায় এখন অন্তত কেন্দ্র ও রাজ্যের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের অনিষ্পন্ন ইস্যু তিস্তা চুক্তি সইয়ের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না বলে আশা করেছিল বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু তার পরও ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এ ব্যাপারে বাংলাদেশকে নিশ্চয়তা দিতে পারছে না।

তিস্তা চুক্তি নিয়ে মমতাকে রাজী করাতে কম চেষ্টা করেনি বাংলাদেশ। প্রথমবার ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে এবং দ্বিতীয়বার নরেন্দ্র মোদির সফরসঙ্গি হিসেবে দুইবার ঢাকা এসেছেন মমতা। কিন্তু কোনোবারই তিস্তা চুক্তি নিয়ে তার কাছ থেকে নিশ্চয়তা আদায় করা যায়নি।

Check Also

ক্ষমতায় গেলে নারীদের সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে জামায়াত : ডা. শফিকুর রহমান

ক্ষমতায় গেলে নারীদের সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে জামায়াত মন্তব্য করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।