লোকালয়ে গেলেই মৃত্যু, জঙ্গলে লুকিয়ে আছেন রাখাইনের রোহিঙ্গারা

ক্রাইমবার্তা ডেস্ক রিপোট: লোকালয়ে গেলেই নির্ঘাত মৃত্যু- এমন আশঙ্কায় জঙ্গলে লুকিয়ে আছেন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু এলাকার অনেক মুসলিম রোহিঙ্গা। তারা লোকালয়ে যেতে পারেন না। তাদের ছেলেমেয়ে, ভাইবোন কোথায় কিভাবে আছেন তাও তারা জানেন না। খবর ডয়েচে ভেলের।31

মিয়ানমারের মংডুর চালিপাড়াং এলাকায় বন আর টিলার মাঝে লুকিয়ে আছেন নূর মোহাম্মদ। বাংলাদেশের একটি মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে তিনি কথা বলেন ডয়চে ভেলের সঙ্গে। তিনি জানান, ‘মংডুর এলাকার বন আর টিলার মধ্যে তারা কয়েকজন লুকিয়ে আছেন। তাদের বড়িও ওই এলাকায়। গত অক্টোবরে তাদের এলাকায় হামলা চালিয়ে ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়। হেলিকপ্টার থেকেও হামলা চালানো হয়। ওই হামলায় অনেক লোক মারা গেছে। আর কেউ কেউ পালিয়ে বাঁচতে পেরেছেন।’ তিনি জানান, হামলাকারীরা নারীদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন করেছে। অনেককে ধরে নিয়ে গেছে।

এখন পরিস্থিতি কেমন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘যখন মিলিটারী থাকেনা তখন আমরা গ্রামে যাই। সৌরবিদ্যুতে, ব্যাটারির মাধ্যমে মোবাইল চার্জ দিয়ে ফিরে আসি। আমরা কয়েকজন মিলে মোবাইল ফোন চার্জের ব্যবসাও করতাম। কেউ কেউ আছেন জীবনের ঝূঁকি নিয়ে। আমরা মাঝে মাঝে খাবারের খোঁজেও যাই। তবে আবার বনে ফিরে আসি।’

এভাবে বাঁচা সম্ভব? প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘‘খাবার নেই, পানি নেই। তিনদিনও না খেয়ে থেকেছি। তারপরও বাঁচার চেষ্টা করছি। আপনারা যদি পারেন আমাদেও জন্য কিছু করেন। ’’

নূর মোহাম্মদ জানান, ‘আমাদের গ্রামে সাত হাজারের মত বাসিন্দা, দেড় হাজারের মত পরিবার। তাদের সব কিছু শেষ হয়ে গেছে। কোনো ঘর-বাড়িই আর অক্ষত নেই।’

তিনি বলেন, ‘‘আমার ছয় বোন, বাবা-মা নেই। দুই বোনকে বিয়ে দিয়েছি। চারবোন হামলার দিন আমার সঙ্গে বাড়িতে ছিলো। দুই বোন পালিয়ে কক্সবাজারের কুতুপালং গেছে বলে জানতে পেরেছি। বাকি দুই বোন কোথায় আছে জানিনা।’’

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ সংলগ্ন মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশের মোবাইল ফোন কোম্পনিগুলোর নেটওয়ার্ক কাজ করে এবং ওইসব এলাকায় বাংলাদেশের মোবাইল ফোন কোম্পানির সিম ব্যবহার হয়। নূর মোহাম্মদের সঙ্গে ডয়চে ভেলে’র ঢাকা প্রতিনিধির চার দফা কথা হয়েছে। তবে তাঁকে সব সময় মোবাইল ফোনে পাওয়া যায়নি। মাঝে মাঝে পাওয়া গেছে। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘মাঝে মাঝে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক ডাউন হয়ে যায়।’’

তিনি বলেন, ‘‘আমি বাংলাদেশে আশ্রয়ের জন্য আসার চেষ্টা করছি। ওখানে আমার আত্মীয়-স্বজন আছে। কিন্তু আসতে পারবো কিনা জানিনা।’

এদিকে জাতিসংঘের প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ‘‘গত ছয় সপ্তাহে ২২ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। শুক্রবার এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ জানায়, ৯ অক্টোবর থেকে রাখাইনে শুরু হওয়া মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন-অভিযানে অন্তত ৮৬ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া ঘর হারিয়েছেন ৩০ হাজার মানুষ। সহিংসতা থেকে বাঁচতে রোহিঙ্গরা বাংলাদেশ সীমান্তে ছুটে আসছেন।

Check Also

প্রত্যেকটা অফিসের কেরানি পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের দোসর : আসিফ মাহমুদ

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।