ক্রাইমবার্তা রিপোট:গাজীপুর সংবাদদাতাঃ দেশে প্রথমবারের মতো ‘টার্কি উৎসব’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ টার্কি বার্ডস ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েশন (বিটিবিডিএ) এর আয়োজনে শুক্রবার সকাল ১০ টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল পর্যন্ত গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সালনা এলাকায় ওই উৎসব অনুঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে আয়োজকরা জানান, টার্কি হচ্ছে-বড় আকারের গৃহপালিত পাখি। এদের উৎপত্তি উত্তর আমেরিকায়, কিন্তু ইউরোপসহ পৃথিবীর প্রায় সব দেশে পালন করা হয় এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের খাদ্য তালিকায় অন্যতম উপাদান। ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে ওঠার ছয় থেকে সাত মাসের মধ্যে টার্কি ডিম দেয়। ছয় মাসের মেয়ে টার্কির ওজন হয় সাড়ে তিন থেকে সাড়ে চার কেজি। আর পুরুষগুলো প্রায় ছয় কেজি। আমেরিকায় টার্কির রোস্ট অভিজাত খাবার। আমাদের দেশে মুরগির মাংসের মতো করেই টার্কি রান্না করা হয়। রোস্ট ও কাবাব করা যায়। পশ্চিমা দেশগুলোতে টার্কি অধিক জনপ্রিয়। সবচেয়ে বেশি টার্কি পালন করা হয় যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্যসহ প্রভৃতি দেশে।
টার্কি চাষীরা জানান, ডিম ফোটানো নিয়ে একটু বিপাকে পড়তে হয়। তারপর নিজেই একটি ‘ইনকিউবেটর’ যন্ত্র তৈরি করে বাচ্চা ফুটানো যায়। এতে একসঙ্গে এক হাজার ডিম ফোটানো যায়। কিন্তু যন্ত্রটি স্বয়ংক্রিয় না। এ জন্য দিনে কয়েকবার ডিম উল্টে দিতে হয়। আর আর্দ্রতা ঠিক রাখার জন্য যন্ত্রের বাইরে পানি ছিটাতে হয়। ভেতরেও পানি রাখতে হয়। এই যন্ত্রের সাহায্যে ২৭ দিনে টার্কির ডিম ফুটে বাচ্চা হয়। আর তিতিরের ২৪ দিন লাগে।
বাংলাদেশ প্রাণী সম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ভেটেরিনারী পাবলিক হেলথ এন্ড মাইক্রোবায়োলজি শাখার সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার মো. রেজাউল করিম মিয়া জানান, মাংস উৎপাদনের জন্য টার্কির সাতটি আদর্শ জাত রয়েছে। পাখি জাতীয় মাংস উৎসের মধ্যে মুরগি, হাঁস, তিতির, কোয়েলের পর টার্কি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। টার্কির মাংস অন্যান্য পাখির মাংস থেকে কম চর্বিযুক্ত, তাই অন্যান্য পাখির চেয়ে টার্কির মাংস অধিক পুষ্টিকর।
বাংলাদেশ টার্কি বার্ডস ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েশন (বিটিবিডিএ) এর সভাপতি প্রকৌশলী মো. শাহীন হাওলাদার জানান, টার্কি উৎসব বাংলাদেশে এবারই প্রথম। টার্কি চাষ বাংলাদেশে ধীরে ধীরে বাড়ছে। তবে অধিকাংশ চাষীরা সঠিকভাবে এর চাষ করতে পারেনা। ফলে চাষীরা ক্ষতির সমূক্ষীণ হন। তাই চাষীদের সচেতনতার জন্যই এ উৎসবের আয়োজন।
বাগেরহাট থেকে আগত টার্কি চাষী শাকিল মাহামুদ জনান, বাংলাদেশে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে টার্কি চাষে। এটা একটা লাভজনক ব্যবসা। পোল্ট্রি শিল্পের মতই টার্কি চাষ বাংলাদেশে ব্যাপক সারা পাবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
টার্কি চাষী ও বাংলাদেশ টার্কি বার্ডস ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েশন (বিটিবিডিএ) এর সহ-সভাপতি শাকিল আহমেদ এর পৃষ্ঠপোষকতায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. সুবাস চন্দ্র দাস।
এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন প্রাণী সম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ভেটেরিনারী পাবলিক হেলথ এন্ড মাইক্রোবায়োলজি শাখার সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার মো. রেজাউল করিম মিয়া।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ টার্কি বার্ডস ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েশন (বিটিবিডিএ) এর সদস্য সচিব মো. জাহিদ হোসেনসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় কর্মরত গণমাধ্যমকর্মী ও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত টার্কি চাষীরা উপস্থিত ছিলেন।