ক্রাইমবার্তা রিপোট:বুধবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জেলা পরিষদ নির্বাচন। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে প্রার্থীদের মধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় খবর নিয়ে জানা গেছে, প্রার্থীরা শুধু ভোট প্রার্থনাই নয়, ভোটের দাম নিয়েও দর কষাকষি করছেন ভোটারদের সঙ্গে। সরাসরি বিষয়টি কেউ স্বীকার না করলেও বিভিন্ন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, প্রতিটি ভোটের দাম ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত উঠেছে। কোন কোন ক্ষেত্রে ক্ষমতাধর ভোটার হিসেবে তার দাম এক থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। অনেক প্রার্থী ইতোমধ্যে ভোট কিনেও ফেলেছেন। সর্বশেষ যারা ভোট বিক্রি করছেন তাদের অনেকের সঙ্গে দর কষাকষি হচ্ছে।
যে প্রার্থী বেশি টাকা দেবে তাকেই ভোট দেয়া হবে। যেহেতু প্রার্থীরা মোটা অংকের টাকা দিয়ে ভোট কিনে নিচ্ছেন তাই সংশ্লিষ্ট ভোটার ভোট দিয়েছেন কিনা তার প্রমাণ রাখার নিশ্চয়তা চাচ্ছেন প্রার্থীরা। সেক্ষেত্রে ভোটাররাও নিশ্চয়তা দিচ্ছেন। সারাদেশেই ভোট কেনা-বেচার খবর পাওয়া গেলেও; এ বিষয়টি কোন প্রার্থী বা ভোটার স্বীকার করেননি।
সম্প্রতি বগুড়া জেলার ধুনট, শেরপুর, কাহালু ও দুপচাচিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ভোটারদের ভোট কেনা ছাড়াও বিভিন্ন উপহার দেয়া হচ্ছে। উপজেলা, ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা চেয়ারম্যানরাও অনেকেই অন্যান্য ভোটারদের দায়িত্ব নিয়ে ভোট কিনছেন। কোনো ভোটার বেঁকে বসলে তাকে ম্যানেজ করার চেষ্টা চলছে।
এ ছাড়া দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ভোট দেয়ার জন্যও স্থানীয় এমপি, উপজেলা ও ইউপি চেয়ারম্যানরা ভোটারদের চাপ সৃষ্টি করছেন। তারা বলছেন, সরকার মনোনীত প্রার্থীকে ভোট না দিলে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হবে। সিরাজগঞ্জে দল মনোনীত প্রার্থীকে ভোট দেয়ার জন্য দল থেকে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মানিকগঞ্জেও প্রার্থীরা ভোটারদের মধ্যে টাকা পয়সা লেনদেন করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এখানকার বিদ্রোহী প্রার্থী মো. রমজান আলী রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী টাকা দিয়ে ভোট কিনছেন। এটা আচরণ বিধির লঙ্ঘন। এখানে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কেউ কেউ বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। এমনকি ভোট কেনা-বেচার সঙ্গেও তারা জড়িত বলে অনেকে বলেছেন। অনেক ভোটার তাদের টাকা পয়সা পেয়েছেন বলেও নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বীকার করেছেন।
পিরোজপুরের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অধ্যক্ষ শাহ আলম ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিদ্রোহী প্রার্থী মহিউদ্দিন মহারাজ পরস্পরের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘন, ভোটারদের লোভনীয় অফার ও অর্থ লেনদেন করছেন বলে জানা গেছে।
জেলা নির্বাচন অফিসার আরিফুল হক সাংবাদিকদের বলেন, গোপনে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ পাইনি। তবে অবৈধ অস্ত্র সংক্রান্ত একটি অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন তিনি।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার জেলা পরিষদ নির্বাচনে অর্থ লেনদেন ও ভোট কেনা-বেচা প্রসঙ্গে জাগো নিউজকে বলেন, ভোট ক্রয়ে অর্থ লেনদেন শুধু আচরণবিধি লঙ্ঘনই নয়, এটা নির্বাচনী অপরাধ। এই নির্বাচনে যেহেতু ভোটার সংখ্যা কম তাই অর্থ লেনদেন হবে এটা আগে থেকেই বোঝা গেছে।
তিনি বলেন, শুধু অর্থ লেনদেন নয়, অনেক ভোটারকে আটকে রাখবে। কাউকে আবার হুমকি ধামকিও দেবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে মজুমদার বলেন, ভোটে টাকা পয়সা লেনদেন নতুন নয়। এটা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি। আইয়ুব খানের মৌলিক গণতন্ত্র এটা আমাদের শিখিয়ে গেছে।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর ৬১ জেলায় দলের জেলা পর্যায়ের নেতাদের প্রশাসক নিয়োগ দেয় সরকার। তাদের মেয়াদপূর্তিতে এবারই প্রথম জেলা পরিষদে নির্বাচন হচ্ছে। প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন ভোটের মাধ্যমে। জেলায় অন্তর্ভুক্ত সিটি কর্পোরেশন (যদি থাকে), উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ভোটে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন।
এ হিসেবে স্থানীয় সরকারের ৪টি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৬৭ হাজার নির্বাচিত প্রতিনিধি এই নির্বাচনে ভোট দেবেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটার রয়েছে ইউনিয়ন পরিষদে। দেশের প্রায় ৪ হাজার ৫৭১টি ইউনিয়ন পরিষদে গড়ে ১৩ জন করে প্রায় ৬০ হাজারের মতো নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছে। একইভাবে ৪৮৮টি উপজেলা পরিষদে নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছে প্রায় দেড় হাজার। ৩২০টি পৌরসভায় নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছে সাড়ে ৫ হাজার এবং ১১টি সিটি কর্পোরেশনে প্রায় সাড়ে ৫০০ নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছেন যারা জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।