ক্রাইমবার্তা ডেস্ক রিপোট: ভারতে পিতৃহীন ও প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের বিয়ের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এসেছেন মহেশ সাবানি নামে এক ব্যবসায়ী।
রিয়েল এস্টেট বিজনেস টাইকুন মহেশ ২০০৮ সাল থেকে প্রতি বছর ৭০০-এর বেশি অসহায় মেয়েকে বিয়ে দিয়ে আসছেন নিজের অর্থে। বিয়ের অনুষ্ঠানের সব ব্যয় বহন করা ছাড়াও তার ‘মেয়ে’ হওয়া সব নববধূর প্রত্যেককেই স্বর্ণ, গহণা, আসবাবপত্র এসবের জন্য প্রায় ৪ লাখ রূপি করে দেন তিনি। প্রতি বছরই বিশাল ওই বিয়ের অনুষ্ঠানে মহেশ নিজেই সব মেয়ের বাবার হিসেবে কন্যাদান করেন। আর এর মাধ্যমেই প্রতি বছর বিয়ের মাধ্যমে অনেক মেয়ে হয়ে যায় তার।
আট বছর আগে তার এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয় মেয়ের বিয়ের আগে মারা যান। সে সময় ওই মেয়ের বিয়ের সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন মহেশ।
সে প্রসঙ্গে তিনি জানান, ‘ওই ঘটনার পর থেকে পিতৃহীন মেয়েদের বিয়ের দায়িত্ব পালন করার ইচ্ছে জাগে আমার। কারণ স্বামী হারানোর পর কোনো নারীর জন্য তার মেয়েকে বিয়ে দেওয়া খুব বড় এক চ্যালেঞ্জ।’
মহৎ এই কাজে তার কাছে ধর্ম, গোত্র কোনো বাধা নয়। হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান সব ধর্মের মেয়েদের নিজ দায়িত্বে বিয়ে দিয়েছেন তিনি। এক্ষেত্রে একটি মাত্র শর্ত আছে তার। তা হলো- তার কাছে আর্জি নিয়ে আসা বিয়ের উপযুক্ত মেয়ের বাবা সত্যি মারা গেছেন কি না, তা নিশ্চিত হতে বাবার ডেথ সার্টিফিকেট সঙ্গে নিয়ে আসতে বলেন তিনি। গুজরাটের সুরাট শহরে তার এই মহান উদারতার কথা এখন আকাশে বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে। আগে আলাদাভাবে এসব মেয়ের বিয়ে দিলেও ২০১২ সাল থেকে ডিসেম্বর মাসে তার প্রতিষ্ঠিত পিপি সাভানি স্কুলের মাঠে গণ বিয়ের আয়োজন করেন তিনি। গত বছর গণ বিয়েতে ১ লাখ মানুষের খাবার- পানীয় ও উপহারের ব্যবস্থা করেছিলেন মহেশ। এ বছর এখন পর্যন্ত ২৩৬ জন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন।
চলতি বছরের গণ বিয়েটি একটি কারণে আগের অনুষ্ঠানের চেয়ে আলাদা, তা হলো- এবার নিজের দুই ছেলের বিয়েও হয়েছে এই অনুষ্ঠানে। প্রতি বছর গণ বিয়েতে ঠিক কী পরিমাণ রূপি তিনি খরচ করেন, তা জানাননি মহেশ। তবে বিয়ের আয়োজন, খরচের নমুনা দেখে বোঝা যায় গণ বিয়ের জন্য তার কয়েক কোটি রূপি খরচ হয়েছে এ পর্যন্ত। তার আরেকটি বিরাট উদারতা হলো বিয়ের পরই দায়িত্ব শেষ করে দেন না তিনি। বরং নতুন বাবা-মেয়ের সম্পর্কের যথাসাধ্য সম্মান করেন। বিয়ের পর যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে তার নতুন মেয়েরা তাকে খুঁজে পান উপহারসহ। বাবাহারা মেয়েদের বাবা হয়ে বিয়ে দেওয়ার সময় ওই মেয়ে ও তার মায়ের মুখে যে খুশির ঝিলিক দেখতে পান, সেটিই তার বড় প্রাপ্তি বলে জানিয়েছেন মহেশ।
আর যতোদিন তার আর্থিক সামর্থ্য থাকবে, ততোদিন তিনি এই মহৎ কাজ করে যাবেন বলেও জানিয়েছেন।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬/এসএন