প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেটের জাফলং

ক্রাইমবার্তা   আবু সাইদ বিশ্বাসঃ সিলেটের জাফলং ফিরেঃ সিলেটের জাফলং আল্লাহর সৃষ্টির অপরূপ মহিমা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। ওপারে খাসিয়া জৈন্তা পাহাড়, এপারে নদী। পাহাড়ের বুক চিড়ে বয়ে চলছে 5ঝরনা, আর নদীর বুকে স্তরে স্তরে সাজানো নানা রঙের নুড়ি পাথর। দূর থেকে তাকালে মনে হবে আকাশের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পাহাড়। পাহাড়ের গায়ে নরম তুলার মতো ভেসে বেড়াচ্ছে মেঘরাশি। প্রকৃতির এক অপরূপ সৌন্দর্য জাফলং। এখানেই শেষ নয় সমতল চা-বাগান, খাসিয়া পল্লী, পানের বরজ-কী নেই জাফলংয়ে! সিলেটের জাফলংকে তাই বলা হয়ে থাকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। প্রকৃতিকন্যা নামেও রয়েছে আলাদা পরিচিতি। প্রকৃতি যেন নিজ হাতে সাজিয়েছে ভারতের সীমান্তঘেঁষা দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এই জনপদকে। জাফলংয়ের সৌন্দর্য দেখতে তাই প্রতি বছরই প্রচুরসংখ্যক পর্যটক ভিড় করেন এখানে। লোকের মুখে না শুনে এবার নিজ চোখে দেখার সুযোগ হল। কেন জাফলং এ এত পর্যাটকের আগমন। কয়েক জন পর্যাটক ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়,ঋতু-বৈচিত্র্যের সঙ্গে জাফলংও তার রূপ বদলায়। সৌন্দর্যে আসে বৈচিত্র্যতা। বর্ষায় গেলে এখানে দেখা যাবে ওপারের পাহাড় থেকে নেমে আসা অগণিত ঝরনা। সবুজের বুকে নেমে আসা ঝরনাধারায় সূর্য়ের আলোর ঝিলিক ও পাহাড়ে ভেসে বেড়ানো মেঘমালা মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে পর্যটকদের। আবার শীতে অন্য রূপে হাজির হয় জাফলং। চারদিকে তখন সবুজের সমারোহ, পাহাড় চূড়ায় গহিন অরণ্য। ফলে শীত 6এবং বর্ষা সব সময়ই বেড়ানোর জন্য উপযুক্ত স্থান হতে পারে জাফলং। জাফলংয়ের বুক চিড়ে বয়ে গেছে দুই নদী। ধলাই ও পিয়াইন। এ নদী দুটি অনন্যতা এনে দিয়েছে জাফলংকে। ধলাই ও পিয়াইনের স্বচ্ছ জলে দল বেঁধে ঘুরে বেড়ায় নানা জাতের ছোট মাছ। দুই নদীর পানির নিচ থেকে ডুব দিয়ে হাজার হাজার শ্রমিকের পাথর উত্তোলনের দৃশ্যও মুগ্ধ করে পর্যটকদের। নদীর পানিতে নারী-পুরুষের এই ‘ডুবোখেলা’ দেখা যায় ভোর থেকে সন্ধ্যা অবধি। সীমান্তের ওপারে ডাউকি নদীর ওপরে দুই পাহাড়ের মাঝখানে ঝুলন্ত সেতু বাড়িয়ে তুলেছে জাফলংয়ের সৌন্দর্য। পাহাড়, পানি, পান, পাথর, ঝরনা সব মিলিয়ে জাফলং যেন এক রূপকথার রাজ্য। নাগরিক জঞ্জাল আর কোলাহল ছেড়ে  শান্তি খুঁজে নিতে তাই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে, এমনকি দেশের বাইরে থেকেও দল বেঁধে জাফলংয়ে বেড়াতে আসেন পর্যটকরা। ভাড়া নৌকায় পিয়াইন ও ধলাইর বুকে ভেসে বেড়ান তারা। পাহাড় আর নদীতে সীমাবদ্ধ নয় জাফলংয়ের সৌন্দর্য। জাফলংয়ের সৌন্দর্যে আলাদা মাত্রা যোগ করেছে সেখানকার আদিবাসীদের জীবনধারা। নদী পার হলেই 7খাসিয়াপুঞ্জি। খাসিয়াদের গ্রামকে বলা হয় পুঞ্জি। এই পুঞ্জিগুলোতে গেলে দেখা যাবে ৩-৪ ফুট উঁচুতে বিশেষভাবে তৈরি খাসিয়াদের ঘর।    প্রতিটি বাড়িতে সৃজিত পানবরজ। মাতৃতান্ত্রিক খাসিয়া সম্প্রদায়ের পুরুষরা গাছ বেয়ে বরজ থেকে পান পাতা সংগ্রহ করেন। আর বাড়ির উঠোনে বসে নারী সদস্যরা পান পাতা ভাঁজ করে খাঁচা ভর্তি করেন বিক্রির জন্য। পান পাতা সংগ্রহ ও খাঁচা ভর্তি করার অভিনব দৃশ্য পর্যটকদের নজরকাড়ে। পানবরজ ছাড়াও খাসিয়া পল্লীতে দেখা যাবে কমলা বাগান। কাঁচা-পাকা কমলায় নুয়ে আছে বাগানের গাছ। সংগ্রামপুঞ্জির রাস্তা ধরে আরেকটু এগুলো দেখা যাবে দেশের প্রথম সমতল চা বাগান।-

Please follow and like us:

Check Also

ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সন্তান নিয়ে ট্রেনের নিচে নারীর ঝাঁপ: মারা যান মা-ছেলে

হাজীগঞ্জে এক বছরের সন্তান আব্দুর রহমানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেন মা তাহমিনা (২৩)। এতে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।