ক্রাইমবার্তা রিপোট: উগ্রবাদী তৎপরতায় জড়িত থাকার অভিযোগে রাজধানীর উত্তরার ইংরেজি মাধ্যমের লাইফ স্কুলের সাবেক অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলামসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এর মধ্যে একজন নারী সদস্য রয়েছেন।
গ্রেফতারকৃত অন্যরা হলেন- স্কুলটির প্রতিষ্ঠার সাথে জড়িত উদ্যোক্তা, শিক্ষক ও অভিভাবক।
তারা হলেন- মিজানুর রহমান (৪৩), জিয়াউর রহমান (৩১), আবু সাদাত মো. সুলতান আল রাজী ওরফে লিটন (৪১), আল মিজানুর রশিদ (৪১), জান্নাতুল মহল ওরফে জিন্নাহ (৬০), কৌশিক আদনান সোবহান (৩৭), মেরাজ আলী (৩০), মুফতি আবদুর রহমান বিন আতাউল্লাহ (৩৭), শাহরিয়ার ওয়াজেদ খান (৩৬)।
তারা সবাই গুলশান হোলে আর্টিজান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া হামলার ‘পরিকল্পনাকারী ও জোগানদাতা’ নব্য জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) নেতা নিহত তামিম চৌধুরী এবং আশুলিয়ায় নিহত সংগঠনের আমির সারোয়ার জাহানের গ্রুপের সদস্য ও অনুসারী ছিল বলে দাবি করেছে র্যাব।
র্যাব জানিয়েছে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আজ রোববার রাতে রাজধানীর উত্তরা ও কলাবাগানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
এরপর আজ বিকেল ৫টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারের বিএসইসি ভবনে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে গ্রেফতারকৃতদের সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হয়।
র্যাব জানায়, শরিফুল ইসলাম উত্তরার লাইফ স্কুলের সাবেক অধ্যক্ষ এবং বর্তমানে তিনি উত্তরা এলাকায় একই ধরনের আরেকটি স্কুল নলেজ হোমের অধ্যক্ষের দায়িত্বে রয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান বলেন, শরিফুল ইসলাম প্রায় আড়াই বছর ধরে স্কুলের কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন। তারা ছাত্রছাত্রী ভর্তি করেন ঠিকই কিন্তু তাদের মূল টার্গেটে ছিলেন ছাত্রছাত্রীদের মা-বাবা। তারা অভিভাবকদের টার্গেট করে উগ্রবাদী কার্যক্রমে অনুপ্রাণিত করতেন। এ জন্য সবাই একটি গোপন মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করতেন এবং নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখতেন। এই গ্রুপের অধিকাংশই উচ্চশিক্ষিত। অভিভাবকদের কাছে লাইফ স্কুলের একটি বিশেষ আকর্ষণ ছিল, সেখানে ১২০ জন ছাত্রছাত্রীর বিপরীতে ২৩ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ছিলেন।
তিনি জানান, গ্রেফতার হওয়া নারীসদস্য জান্নাতুল, বিশেষ করে নারীদের উগ্রবাদী কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ করতেন। এরা কেউই সরাসরি কোনো হামলায় কখনো অংশ নেননি। কিন্তু প্রত্যেকেই গোয়েন্দা নজরদারি, রেকি ও অনুপ্রাণিত করার কাজ করে আসছিলেন। গ্রেফতারকৃতদের সবার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয়।
গত বছরের ২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার পাইকপাড়া কবরস্থানের পাশে দেওয়ান বাড়ি নামে একটি উগ্রবাদী আস্তানায় পুলিশের অভিযানে তামিম আহমেদ চৌধুরীসহ তিনজন নিহত হন। এরপর গত ৮ অক্টোবর ঢাকার আশুলিয়ায় বাইপাইলের বসুন্ধরারটেক এলাকায় মৃধা ভিলা নামে একটি বাসার পাঁচতলা ভবনের বারান্দার গ্রিল কেটে লাফিয়ে পড়ে মারা যান সারোয়ার জাহান। ওই দিন গ্রেফতার করা হয় সারোয়ারের স্ত্রী শাহনাজ আক্তার রুমি বর্তমানে কারাগারে আছেন। তিনি কারাগারে একটি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন।
র্যাব জানায়, আবু সাদাত সুলতান আল রাজী ওরফে লিটোনের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। তিনি মতিঝিলে খাজা ইকুইটি সার্ভিসেস লিমিটেডে কর্মরত। তিনি তার মামাত ভাই লাইফ স্কুলের শিক্ষক আব্দুর রহমানের মাধ্যেমে ২০১৫ সালে অক্টোবর/নভেম্বর মাসে উগ্রবাদী নিহত মেজর জাহিদের সাথে পরিচিত হন। জাহিদের মেয়ে ও আবু সাদাতের ছেলে লাইফ স্কুলে একই ক্লাসে লেখা পড়া করত। এছাড়া আল মিজানুর রশিদের গ্রামের বাড়ি রাজশাহী। তিনি আমান গ্রুপে ২০১০ থেকে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সিনিয়র ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ওই কারখানায় কাজের চাপের কারণে সে ধর্মীয় কার্যক্রমে মনোনিবেশ করতে না পাড়ায় চাকরি ছেড়ে দেয়। গত বছরের জানুয়ারিতে মেজর জাহিদের সাথে তার পরিচয় হয়। জাহিদ তাকে নব্য জেএমবিতে যোগদানে জন্য দাওয়াত প্রদান করে।
গ্রেফতারকৃত জিয়াউর রহমানের ব্যপারে র্যাব জানায়, জিয়াউর লাইফ স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা এবং শিক্ষক। লাইফ স্কুলে শায়েখ শহিদুল্লাহ খান মাদানী কাছ থেকে সে ও শরিফুল্লাহ এবং মিজান স্কুলের ইসলামীক দিক সমৃদ্ধি সম্পর্কে নির্দেশনা নিত। এছাড়া কৌশিক আদনান সোবহানের অতিসম্প্রতি শাহরিয়ারের সাথে সিরিয়া যাওয়ার আলোচনা করে।
গ্রেফতারকৃত মিজানুর রহমান ১৪ বছর রবিতে চাকরি করে ৩১ লাখ টাকা পায়। প্রথমে সোলার ব্যবসা করে। তিনি লাইফ স্কুলে প্রতিষ্ঠায় ১৫ লাখ টাকা দেয় বলে জানায় র্যাব।