বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু আজ ॥ সব প্রস্তুতি সম্পন্ন ॥ দলে দলে মুসল্লিরা আসছেন

গাজীপুর থেকে মোঃ রেজাউল বারী বাবুলঃ টঙ্গীর তুরাগ তীরে তাবলীগ জামাতের এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে। এবারের বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। কনকনে শীত ও কুয়াশা উপেক্ষা করে বাস-ট্রাক, কার-পিকআপসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে দলে দলে মুসল্লিরা ইতোমধ্যে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমাস্থলে আসছেন। তারা কাঁধে-পিঠে প্রয়োজনীয় মালামাল নিয়ে ইজতেমাস্থলে এসে নিজ জেলার খিত্তায় অবস্থান নিচ্ছেন। অবশ্য গত কয়েকদিন থেকেই দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে জামাতবদ্ধ মুসল্লিরা এসে ময়দানের খিত্তায় খিত্তায় অবস্থান নিয়েছেন। টঙ্গীর ইজতেমাস্থল এখন মুসল্লিদের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠেছে। আজ প্রথম দিন শুক্রবার বাদ ফজর আনুষ্ঠানিক আমবয়ানের মাধ্যমে তাবলীগের বুজুর্গ মুরুব্বীরা এর সূচনা করার কথা রয়েছে। তবে বৃহস্পতিবারই বিশ্ব ইজতেমার বিশাল ময়দানে লাখো মুসল্লী জমায়েত হওয়ায় বাদ মাগরিব থেকেই মুসল্লীদের মাঝে হেদায়েতী বয়ান শুরু হয়েছে। এদিকে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় আগতদের নিরাপত্তা দিতে ইতোমধ্যেই ইজতেমা ময়দানকে ঘিরে আশপাশ এলাকায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ৫ স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। ইজতেমা ময়দানে মুসল্লীদের চলাফেরা ও গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে ওয়াচ টাওয়ারসহ স্থাপন করা হয়েছে সিসি ক্যামেরা। পুরো ইজতেমা ময়দানকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে।

প্রথমবারের মতো গতবছর হতে শুরু হয় দেশের ৬৪ জেলাকে চার ভাগ করে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন। ওই বছর মোট ৩২টি জেলা নিয়ে দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হয় ইজতেমা। পরবর্তী বছরে অর্থাৎ এবছর (২০১৭ সালে) বিশ্ব ইজতেমার দু’পর্বে বাকী ৩২ জেলার মুসল্লীরা অংশ নিচ্ছে। এবছরের প্রথম পর্বে অংশ নেবে ঢাকার একাংশসহ ১৭টি জেলার তাবলিগ অনুসারীরা। সর্বশেষ অবশিষ্ট ১৫ জেলার তাবলিগ অনুসারীরা আগামী ২০ জানুয়ারি হতে দ্বিতীয় পর্বে অংশ নেবে। তবে বিদেশী মুসল্লীরা প্রতি বছর বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিতে পারবে। মুসল্লীদের স্থান সংকূলান না হওয়ায় এবং নিরাপত্তার কথা ভেবে ২০১১ইং সাল থেকে দুই পর্বের ইজতেমা শুরু পর বছরও এ পরিবর্তন আনা হয়। বিশ্ব ইজতেমার শীর্ষ পর্যায়ের মুরুব্বীরা ইজতেমার এ তারিখ নির্ধারণ করেছেন।

এবারের ২০১৭ সালের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব দেশের ৩২টি জেলার মুসল্লীদের নিয়ে টঙ্গী তুরাগ তীরে দুই ধাপে শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে এবং আগামী রবিবার (১৫ জানুয়ারি) আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে ইজতেমার প্রথমপর্ব শেষ হবে। এরপর চার দিন বিরতি দিয়ে ২০ জানুয়ারি শুরু হবে দ্বিতীয় পর্ব। দ্বিতীয় পর্বে অংশ নেবে বাকী ১৫টি জেলার তাবলিগ অনুসারী। ২২ জানুয়ারি দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটবে দু’পর্বের এবারের বিশ্ব ইজতেমা।

এদিকে বিশ্ব ইজতেমার সর্বশেষ সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর পুলিশ ও র‌্যাবের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ও বিকেলে আলাদাভাবে ব্রিফিংকালে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মইনুর রহমান চৌধুরী, র‌্যাবের ডিজি বেনজির আহম্মেদ, পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এস.এম মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান ও গাজীপুর জেলা এসপি হারুন-অর-রশিদ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গীবাদের বিষয়টি মাথায় রেখে ইজতেমা ময়দানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ব্যাপক জোরদার করা হয়েছে। জঙ্গী সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর নাগরিকদের উপর থাকছে বিশেষ নজরদারী। বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে জঙ্গীর কোন হুমকির আশঙ্কা করছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

তাবলীগ জামাতের উদ্যোগে প্রতিবছর এ বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে। প্রায় ১৬০ একর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত ইজতেমা মাঠে বিশ্বের প্রায় সব মুসলিম দেশ থেকেই তবলীগ জামাতের অনুসারী ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা অংশ নেন। তারা এখানে তবলীগ জামাতের শীর্ষ আলেমদের বয়ান শুনেন এবং ইসলামের দাওয়াতি কাজ বিশ্বব্যাপী পৌঁছে দেয়ার জন্য জামাতবদ্ধ হন। এখান থেকেই দ্বীনের দাওয়াতি কাজে বেরিয়ে যান। ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশের তবলীগ অনুসারীরা মিলিত হন এজতেমায়।

প্রতিবছরের ন্যায় এবারও স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা ও কলকারখানার শ্রমিক-মালিকসহ বিভিন্ন পেশার মুসলমান ধর্মাবলম্বীরা বিশ্ব ইজতেমার মাঠে প্রস্তুতিমূলক কাজ সম্পন্ন করেছেন। ময়দানে মুসল্লিদের কাতারবদ্ধ হওয়ার জন্যে পুরো মাঠে দাগ কাটা সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া ইজতেমা ময়দানে জেলাওয়ারি মুসল্লিদের স্থানও (খিত্তা) নির্দিষ্ট করা হয়েছে। মুসল্লিদের তুরাগ নদ পারাপারের জন্য সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেডের সদস্যরা এবারও তুরাগ নদীতে ভাসমান সেতু নির্মাণের কাজ সমাপ্ত করেছে।

প্রথম পর্বে মুসল্লিরা খিত্তা ওয়ারি যেভাবে অবস্থান নেবেন ॥
এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথমপর্বে ২৭টি খিত্তায় ঢাকার একাংশ ও গাজীপুরসহ ১৭ জেলার মুসল্লিদের জন্য ময়দানে জেলাওয়ারি মুসুল্লিদের স্থান (খিত্তা) নির্দিষ্ট করা হয়েছে। মুসল্লিরা জেলাওয়ারি এসব খিত্তায় অবস্থান নেবেন।

এপর্বে মুসল্লীরা জেলাওয়ারী যে সকল খিত্তায় অংশ নিবেন সেগুলো হলো- ১ থেকে ৫ নম্বর খিত্তায় ঢাকা জেলা, ৬ থেকে ৮নং খিত্তায় টাঙ্গাইল জেলা, ৯ থেকে ১১নং খিত্তায় ময়মনসিংহ জেলা, ১২নং খিত্তায় মৌলভীবাজার জেলা, ১৩নং খিত্তায় বি.বাড়িয়া জেলা, ১৪নং খিত্তায় মানিকগঞ্জ, ১৫নং খিত্তায় জয়পুরহাট, ১৬নং খিত্তায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ১৭নং খিত্তায় রংপুর, ১৮ ও ১৯নং খিত্তায় গাজীপুর, ২০নং খিত্তায় রাঙামাটি, ২১নং খিত্তায় খাগড়াছড়ি, ২২নং বান্দরবন, ২৩নং খিত্তায় গোপালগঞ্জ, ২৪নং খিত্তায় শরীয়তপুর, ২৫নং খিত্তায় সাতক্ষীরা এবং ২৬ ও ২৭নং খিত্তায় যশোর জেলা।

দ্বিতীয় পর্বে বিভিন্ন জেলার মুসল্লিরা খিত্তা ওয়ারি যেভাবে অবস্থান নেবেন ॥
দ্বিতীয় পর্বে অংশ নেবে ১৫টি জেলাসহ ঢাকা জেলার বাকী অংশের তাবলিগ অনুসারী মুসল্লীরা। ওইসব জেলা ও খিত্তাগুলো হলো- ঢাকা জেলা ১ থেকে ৫ নং খিত্তায়, মেহেরপুর জেলা ৬ নং খিত্তায়, ঢাকা জেলা ৭ নং খিত্তায়, বাগেরহাট ৮ নং খিত্তায়, রাজবাড়ি ৯ নং খিত্তায়, দিনাজপুর ১০ নং খিত্তায়, হবিগঞ্জ ১১নং খিত্তায়, মুন্সীগঞ্জ ১২ ও ১৩ নং খিত্তায়, কিশোরগঞ্জ ১৪ ও ১৫ নং খিত্তায়, কক্সবাজার ১৬ নং খিত্তায়, ,নোয়াখালি ১৭ ও ১৮ নং খিত্তায়, বাগেরহাট ১৯ নং খিত্তায়, চাঁদপুর ২০ নং খিত্তায়, পাবনা ২১ ও ২২ নং খিত্তায়, নওগা ২৩ নং খিত্তায়,কুষ্টিয়া ২৪ নং খিত্তায়,বরগুনা জেলা ২৫নং খিত্তায় এবং বরিশাল জেলা ২৬ নং খিত্তায়।

তুরাগ নদীতে ভাসমান সেতু স্থাপন ॥
মুসল্লিদের তুরাগ নদী পারাপারের ৯টি ভাসমান সেতু স্থাপন করা হয়েছে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার কোরের তত্ত্বাবধানে। ইতোমধ্যে সেতুগুলো মুসল্লিদের চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা ॥ 10
গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ বলেন, বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হচ্ছে শুক্রবার থেকে। এ উপলক্ষ্যে বৃহষ্পতিবার থেকে ইজতেমার চারপাশে ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। এবারই প্রথম বিশ্ব ইজতেমার চারপাশ এবং বাহিরে সিসি টিভির আওতায় আনা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে টঙ্গীর টেলিফোন শিল্পসংস্থার (টেশিস) মাঠে এক ব্রিফিংয়ের তিনি এ সব কথা বলেন।

পুলিশ সুপার বলেন, এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে ছয় হাজারের অধিক ফোর্স থাকবে। থাকবে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ইজতেমা মাঠের ভেতরে সাদা পোশাকে পর্যাপ্ত পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার পর্যাপ্ত সদস্য নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত থাকবে। খিত্তায় খিত্তায় পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। ইজতেমা উপলক্ষে বিভিন্ন মোড়ে ও গলিসহ ইজতেমার প্রবেশ পথগুলোতে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। ইজতেমাকে ঘিরে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত মুসল্লীদের সার্বিক নিরাপত্তা দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বিদেশি খিত্তায় তিনটি আর্চওয়ে স্থাপন করা হয়েছে। গত বছরের চেয়ে বেশি ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। সেখান থেকে পুলিশ পর্যবেক্ষণ করছে। এ ছাড়া একটি অত্যাধুনিক কন্ট্রোল রুম ও পাঁচটি সাব কন্টোল রুম করা হয়েছে। পুরো ইজতেমা এলাকাকে পাঁচটি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি সেক্টরে একজন করে অ্যাডিশনাল এসপিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তিনি ইজতেমায় আগত মুসল্লীদের উদ্দেশে বলেন, মুসল্লীরা যদি কোনো সমস্যায় পড়েন তবে তারা যেন পুলিশের শরণাপন্ন হন। পাশাপাশি তারাও খেয়াল রাখবেন।

পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যদের প্রতি অনুরোধ থাকবে তারা যেন মুসল্লীদের সঙ্গে ভাল আচরণ করেন। সেবার মানসিকতা নিয়ে পুলিশ সদস্যরা যেন এগিয়ে যায়।

ইজতেমায় বিদেশী মুসল্লী ॥
বিদেশী মুসল্লীদের জন্য মাঠের পশ্চিম-উত্তর কোণে গড়ে তোলা হয়েছে বিদেশী মেহমানদের (মুসল্লি) আবাসন ব্যবস্থা। সেখানে বিদ্যুত, টেলিফোন, গ্যাস সংযোগসহ রয়েছে আধুনিক সুবিধাদি। বিদেশী নিবাসের রন্ধনশালায় রয়েছে তাদের আপ্যায়নের নানা আয়োজন। বিদেশী মেহমান খানার জিম্মাদার জানান, ইতোমধ্যেই বহু বিদেশী মেহমান ইজতেমা ময়দানে এসে পৌছেছেন। অনেকে পথে রয়েছেন। তবে মঙ্গলবার থেকে বিদেশী মেহমানরা আসতে শুরু করেছেন। আখেরি মোনাজাতের দিন পর্যন্ত তাদের এ আগমন অব্যাহত থাকবে। এখানে ইংলিশ, আরব, অনারবদের জন্য আলাদা আলাদা তাঁবু ও খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিদিন তাদের পছন্দমাফিক খাবারও সরবরাহ করা হচ্ছে। সকালের নাস্তায় স্যুপ, হালুয়া, ডিম, রুটি, মধু, খেজুর, জয়তুনের তেল, ডিমের তৈরি বিশেষ খাবার ‘শুকশুকি’ প্রভৃতি দুপুর ও রাতে পোলাও মাংস, বিরিয়ানি, সাদা ভাত, মাছ, রুটিসহ বিভিন্ন খাবার রান্না ও সরবরাহ করা হয়। সেখানে নানা ধরনের খাবার রান্নার জন্য ২ শতাধিক বাবুর্চি ছাড়াও শুধু তুন্দুর রুটি বানানোর জন্য কাকরাইল মাদ্রাসার দেড়’শর মতো শিক্ষার্থীও যোগ দিয়েছেন। তিনি আরও জানান, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার মুসল্লিরা রুটি, মাংস ছাড়াও সাদা ভাত-মাছ খেতে পছন্দ করেন। বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা বাণী দিয়েছেন।

বিদেশী মুসল্লিদের জন্য এজতেমার মূল ছয় দিনের প্রতিদিন এখানে প্রায় ৪ টন গরু, ৫ টনের মতো মুরগী ও ১ টনের মতো খাসির মাংস, প্রায় ৫ টন মাছ ও ৪ টন সবজির প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া প্রতিদিন তুন্দুর রুটি লাগে ২০ হাজারের মতো। ইজতেমার মাঠের প্রস্তুতির কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা তবলীগের শীর্ষ মুরুব্বী গিয়াস উদ্দিন জানান, সব কাজ করা হয় মোশায়ারার (পরামর্শ) মাধ্যমে। এ বছর বাইরের প্রায় ৩০-৪০টি দেশ থেকে ৩০ হাজারেরও বেশি মুসল্লি এজতেমায় যোগ দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পানি, বিদ্যুৎ, চিকিৎসা সেবা ॥
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের টঙ্গী অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, ইজতেমা মাঠে স্থাপিত উৎপাদন নলকূপের মাধ্যমে প্রতিদিন তিন কোটি লিটারেরও বেশি বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের সকল পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ওজু-গোসলের হাউজ ও টয়লেটসহ প্রয়োজনী স্থানে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়াও পাকা দালানে প্রায় ৬ হাজারের মতো টয়লেট ইউনিট রয়েছে। এদের মধ্যে নষ্ট ও ক্ষতিগ্রস্ত অজু-গোসলখানা এবং টয়লেটগুলো ইতোমধ্যে সংস্কার করা হয়েছে।

ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প ॥
বৃহস্পতিবার দুপুরে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ইজতেমা ময়দানের উত্তর পাশে মন্নু টেক্্রটাইল মিলের মাঠে হামদর্দ ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প উদ্বোধন করেন। এসময় অন্যান্যের মধ্যে স্থানীয় সাংসদ জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান খান কিরণ, হামদর্দের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাকীম মো. ইউছুফ হারুন ভঁ’ইয়া,টঙ্গী ঔষধ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি এমএ লতিফ প্রমুখ।এছাড়াও ফ্রি-মেডিক্যাল ক্যাম্প এলাকায়, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামী ফাউন্ডেশন, ইবনেসিনা এবং টঙ্গী ঔষধ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতিসহ প্রায় অর্ধশতটি সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ফ্রি চিকিৎসা কেন্দ্র চালু করেছে।

স্বাস্থ্যসেবা ॥
গাজীপুর জেলার সিভিল সার্জন ডা: আলী হায়দার খান বলেন, ইজতেমা উপলক্ষ্যে সকল প্রস্তুতি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের রয়েছে। টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। হাসপাতালে একটি নিজস্ব কন্ট্রোল রুম ছাড়াও কার্ডিয়াক, বার্ণ, অ্যাজমা, ট্রমাসহ বিভিন্ন ইউনিট খোলা হয়েছে। এছাড়াও টঙ্গী সরকারি হাসপাতালের উদ্যোগে একাধিক মেডিকেল সেন্টার খোলা হয়েছে। মুসলি¬দের সেবা প্রদানের জন্য মেডিকেল সেন্টারগুলোতে বেশ কয়েকটি এ্যাম্বুলেন্স সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। হোটেলে খাবারের মান ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ম্যাজিষ্ট্রেটসহ সেনিটেশন টিম কাজ করছে।

বিশ্ব ইজতেমায় যাতায়াতে ডিএমপির নির্দেশনা ॥
বিশ্ব ইজতেমায় মুসল্লীদের যাতায়াত নির্বিঘœ করতে যানবাহন পার্কিংসংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। বৃহস্পতিবার ডিএমপি থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রেইনবো ক্রসিং থেকে আব্দুল্লাহপুর হয়ে ধউর ব্রিজ পর্যন্ত এবং রামপুরা ব্রিজ থেকে প্রগতি স্বরণি পর্যন্ত রাস্তা ও রাস্তার পাশে কোনো যানবাহন পার্কিং করা যাবে না। বিদেশগামী বা বিদেশ ফেরৎ যাত্রীদের বিমানবন্দরে আনা-নেওয়ার জন্য ট্রাফিক উত্তর বিভাগের ব্যবস্থাপনায় চারটি বড় আকারের মাইক্রোবাস নিকুঞ্জ-১ আবাসিক এলাকার গেইটে ভোর ৪টা থেকে থাকবে।

এছাড়াও সাহায্যের জন্য- ১০০, ৭১২৪০০০, তথ্যের জন্য- ডিএমপি মিডিয়া সেল- ৯৩৩৭৩৭৯, ০১৭১৩৩৯৮৭৫৬-৭, ০২-৯৩৩৭৩৬২ নম্বরে ডায়াল করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

ট্রাফিক সম্পর্কিত যেকোনো তথ্যের জন্য উত্তরা ট্রাফিক জোনের সিনিয়র এসি মো. জিন্নাত আলী মোল্লা , (০১৭১৩৩৯৮৪৯৮) এবং টিআই মো. মাহফুজার রহমান (০১৭১১৩৬৬৫৬১) এর সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

দুই মুসল্লীর মৃত্যু ॥
বৃহষ্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ইজতেমায় আগত দুই মুসল্লী মারা গেছেন। এদেও মধ্যে বৃহষ্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪ টায় সাতক্ষীরা জেলা সদরের মৃত আব্দুস সোবহানের ছেলে আব্দুস সাত্তার (৬০) মারা গেছেন। এর আগে বুধবার দিবাগত রাতে ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল থানার মারুয়া গ্রামের ফজলুল হক (৫৬) মারা যান। বার্ধক্য জনিত কারনে তারা ইজতেমা ময়দানে মারা যান বলে জিম্মাদার জানিয়েছেন।

ইজতেমা আয়োজক কমিটির বক্তব্য ॥
বিশ্ব তাবলীগ জামাতের মুরুব্বীরা জানান, সারা বিশ্বে তাবলীগের দাওয়াত পৌঁছে যাওয়ায় পর্যায়ক্রমে ইজতেমায় শরীক হওয়া মুসল¬ীদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠানের সময় টঙ্গী তুরাগ তীরের এ বিশাল ময়দানেও স্থান সংকুলান হচ্ছে না। আগত মুসল¬ীদের যাতায়াতেও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তাই বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীদের অসুবিধা ও দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে ২০১১ সাল থেকে দুই দফায় ইজতেমা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তাবলীগ অনুসারি আর ও বাড়তে থাকায় মুসলল্লীদের চাপ কমাতে গতবছরই ৪ভাগে ভাগ করে প্রথম পর্বে ঢাকা জেলার একাংশসহ ১৭ জেলা, দ্বিতীয় পর্বে ১৫ জেলাসহ ঢাকা জেলার বাকী অংশের মুসল্ল¬ীরা অংশগ্রহণ করেন। বাকি ৩২ জেলার মুসল্ল¬ীরা এবছরের ইজতেমায় অংশগ্রহণ করছেন। প্রথম পর্বের আখেরী মোনাজাত শেষে মুসল¬ীরা ময়দান ছেড়ে দেওয়ার পর দ্বিতীয় পর্বে জেলা ওয়ারি (খেত্তা বিশেষ) মুসল¬ীরা ময়দানে এসে অবস্থান নিবেন, বয়ান শুনবেন এবং দ্বিতীয় পর্বের আখেরী মোনাজাতে অংশ নিবেন। দ্বিতীয় পর্ব শেষে নিজ নিজ ঠিকানা ও গন্তব্যে ফিরে যাবেন। এর মাধ্যমে শেষ হবে এবারের ৫২তম বিশ্ব ইজতেমা।
###

Check Also

সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন এর আয়োজনে বিজয় দিবস পালন ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান

নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরায় বিজয় দিবস উপলক্ষে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা,পুরুষ্কার বিতারণ ও আলোচনা সভা  অনুষ্ঠিত হয়েছে। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।