ক্রাইমবার্তা রিপোট:মোঃ আলাউদ্দীন,হাটহাজারী(চট্টগ্রাম)প্রতিনিধিঃ চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের চারিয়ার পশ্চিমে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ও জনবসতিপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘেষে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। এসব ইটভাটায় কাঁচামাল হিসেবে পাহাড়ি বা কৃষিজমির মাটি ব্যবহার এবং জ্বালানি হিসেবে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গাছ ব্যবহার হচ্ছে। এতে কোটি কোটি টাকার বনজ সম্পদ ধ্বংস হওয়াসহ প্রাকৃতিক ভারসাম্যও হুমকির মুখে পড়ছে। অথচ অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব ভাটার বিরুদ্ধে আইনানুগ কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না যথাযথ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে।
উপজেলার সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অবৈধভাবে ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে তার মধ্যে চারিয়া এলাকার পশ্চিমে ২২টি,কাটিহাট ও শান্তিরহাটে ২টি,ফতেয়াবাদ ও চৌধুরীহাটে ৫টি ইটভাটার মধ্যে কয়েকটি ইটভাটার পরিবেশ ছাড়পত্র থাকলেও বেশিভাগের নেই কোন ছাড়পত্র। আবার এই সব ভাটার কাঁচামাল হিসেবে পাহাড়ি,কৃষিজমির মাটি ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। অধিকাংশ ভাটায় জ্বালানি হিসেবে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ছোট-বড় পাহাড়ি গাছ কেটে কাঠের মজুদ করা হচ্ছে। উজাড় হচ্ছে কোটি টাকার পাহাড়ি বনজ সম্পদ। কয়লা দিয়ে ইট পোড়ানোর নির্দেশনা থাকলেও কয়েকটি ইট ভাটা ছাড়া বেশির ভাগই ভাটার মালিক তা মানছেন না। সংরক্ষিত এলাকায় ভাটা স্থাপন করলে ৫ বছরের কারাদন্ড এবং ৫ লাখ টাকা অর্থদন্ডের বিধান থাকলেও তা প্রশাসনিকভাবে কার্যকর করা হচ্ছে না রহস্যজনক কারণে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বনাঞ্চল,পাহাড়,সংরক্ষিত এলাকায় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘেঁষে রয়েছে বেশ কিছু ইটভাটা। এসব ইটভাটায় ব্যবহারের জন্য ¯ু‘প করে রাখা হয়েছে পাহাড় কাটা ও ফসলি জমির মাটি এবং জ্বালানি হিসেবে রাখা হয়েছে পাহাড়ি কচি কচি গাছের স্তুুপ। যে যার ইচ্ছামত ফসলি ও পাহাড় কাটা মাটি দিয়ে তৈরী করছে ইট। এদের মধ্যে বেশ কয়েকটি ইটভাটার চিমনির উচ্চতা নিয়মের চেয়ে কম।
ইটভাটা সমিতির অর্থ সম্পাদক হাফেজ আবদুল্লাহ বলেন, সাংবাদিক,বনবিভাগ এবং পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সকল বিভাগকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে ইটভাটার কাজ করি। শুধু তা নয় ইউপি চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা,বিভিন্ন সংগঠন, নানা ধরনের অনুষ্ঠানে চাঁদা দিতে হয়।
টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোন রশিদ দেয় কিনা জানতে ইটভাটা সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদের কাছে জানতে চাইলে সে বলে, এসব টাকা দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো রশিদ দেন না তারা।
ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে জ্বালানি হিসেবে কাঠের ব্যবহার সম্পর্কে উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভ’মি)আরিফুল ইসলাম সরদার বলেন, এটা সম্পূর্ণ অবৈধ এবং যেসব ইটভাটার ছাড়পত্র নেই বা পরিবেশ আইন অমান্য করে ইট তৈরি করছে তদন্ত করে অভিযুক্ত ইটভাটার বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েসেন্সের অধ্যাপক ড.মোহাম্মদ কামাল হোসাইন এ প্রতিবেদককে বলেন, পরিবেশের ক্ষতি হয়,এমন সিদ্ধান্তই বেশি নেয়া হয়। পাহাড়বেষ্টিত জেলা সত্ত্বেও ইটভাটা, হাউজিং প্রকল্প, অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কেটে সরকারি-বেসরকারি প্রকল্প বাস্তবায়ন বেশি হচ্ছে। পরিবেশ রক্ষায় সমন্বিতভাবে উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন ছাড়া পরিবেশ রক্ষা করা সম্ভব নয় বলে তিনি জানান।
ছাড়পত্র দেয়ার এবং টাকা নেওয়ার বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক মাসুদ করিমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, পুরো চট্টগ্রামে ৫ % ইটভাটার অনুমোদন থাকতে পারে। সে হিসেবে হাটহাজারী এলাকায় কোনো ইটভাটার অনুমোদন নাই বললেই চলে। বর্তমানে ফটিকছড়ি থেকে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে এবং শীঘ্রই হাটহাজারীতেও অভিযান চালানো হবে।