লাশ গুমের অভিযোগে পুলিশের গাড়িতে আগুন

ক্রাইমবার্তা রিপোট:.এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, পুলিশের সদস্যরা নিহত যুবকের লাশ সড়কের পাশ থেকে তুলে নিয়ে অদূরে ধানখেতে রেখে দেন। তখন ফজরের নামাজ পড়তে মসজিদে যাচ্ছিলেন বালুতোপা এলাকার মুসল্লিরা। তাঁরা পুলিশের লাশ নিয়ে যাওয়া দেখে উত্তেজিত হয়ে পড়েন। পুলিশ লাশ গুম করছে বলে অভিযোগ করেন। এ নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ সদস্যরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তখন পুলিশের ছয় সদস্যের মধ্যে তিনজন পালিয়ে যান। বাকি তিনজনকে জনতা আটক করে মারধর করে।

লাশ গুম করার চেষ্টার অভিযোগে স্থানীয় লোকজন মিজানুর রহমান, খোরশেদ আলম ও আবুল কালাম নামের তিন পুলিশ সদস্যকে আটক করে l ছবি: প্রথম আলোলাশ গুম করার চেষ্টার অভিযোগে স্থানীয় লোকজন মিজানুর রহমান, খোরশেদ আলম ও আবুল কালাম নামের তিন পুলিশ সদস্যকে আটক করে l ছবি: প্রথম আলোপুলিশের তাড়া খেয়ে পালাতে গিয়ে মাইক্রোবাসে চাপা পড়ে নিহত ব্যক্তির লাশ গুমের অভিযোগে উত্তেজিত জনতা পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।

এ সময় জনতা তিন পুলিশ সদস্যকে আটকে রেখে বেধড়ক পেটায়। গতকাল শুক্রবার ভোরে কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার বালুতুপা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। একই সঙ্গে তিন পুলিশকে উদ্ধার করে এবং নিহত ব্যক্তির লাশ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যায়। নিহত যুবকের নাম মো. রাসেল (২৪)। তিনি পেশায় হকার। মাঝেমধ্যে ভাড়ায় মাইক্রোবাসও চালান। বাড়ি নোয়াখালীর চাটখিলে।
এলাকাবাসী জানান, গতকাল ভোর পাঁচটার দিকে কুমিল্লার সদর দক্ষিণ মডেল থানার একদল পুলিশ একটি মাইক্রোবাস নিয়ে লক্ষ্মীপুর থেকে একটি মোটরসাইকেলে থাকা তিন যুবককে ধাওয়া করে। পুলিশ প্রায় তিন কিলোমিটার যাওয়ার পর বালুতুপা আমান ম্যানশনের সামনে মোটরসাইকেলটিকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে মোটরসাইকেলটি সড়কের পাশে থাকা করাতকলের কাঠের সঙ্গে লেগে পড়ে যায়। আর পুলিশের গাড়িটি সড়কের পাশের গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে কাত হয়ে যায়। এ সময় মোটরসাইকেলে থাকা তিন যুবকের একজন ঘটনাস্থলেই মারা যান। অন্য দুজন সামান্য আহত হয়ে পালিয়ে যান।

কুমিল্লায় পুলিশের তাড়া খেয়ে পালাতে গিয়ে মাইক্রোবাসে চাপা পড়ে নিহত হন মো. রাসেল নামের এক যুবক

কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার বালুতোপায় লাশ গুমের অভিযোগে পুলিশের মাইক্রোবাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয় জনতা l প্রথম আলোকুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার বালুতোপায় লাশ গুমের অভিযোগে পুলিশের মাইক্রোবাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয় জনতা l প্রথম আলোখবর পেয়ে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) আবদুল্লাহ আল মামুন ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) তানভীর সালেহীন ইমন, র্যা ব ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। এ সময় তাঁরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। এরই মধ্যে লোকজন পুলিশের বহনকারী মাইক্রোবাসে আগুন ধরিয়ে দেন। পুলিশ কর্মকর্তারা আহত অবস্থায় তিন কনস্টেবল মিজানুর রহমান, খোরশেদ আলম ও আবুল কালামকে উদ্ধার করেন।
আদর্শ সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ বলেন, ভোরে সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে একটি মোটরসাইকেলকে তাড়া করে পুলিশ। একপর্যায়ে মাইক্রোবাসটি মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেয়। এতে ওই যুবক মারা যান। পুলিশ ওই যুবককে হাসপাতালে না নিয়ে লাশ গুম করার জন্য সড়ক থেকে ২০০ গজ দক্ষিণে ধানখেতে নিয়ে যায়। পুলিশ হয়তো জনরোষ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এ কাজ করেছে। কিন্তু জনগণ ওই দৃশ্য দেখেই মাইক্রোবাসে আগুন ধরিয়ে দেয়।
জানতে চাইলে সদর দক্ষিণ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. জহিরুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ সদর দক্ষিণ উপজেলার লক্ষ্মীপুর এলাকায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানার এক আসামিকে ধরার জন্য রাতের বেলায় বের হয়। তখন সড়কে তিন মোটরসাইকেল আরোহী পুলিশের মাইক্রোবাস দেখে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে দুজন মোটরসাইকেল থেকে নেমে যান। এক ব্যক্তি দ্রুত গতিতে মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় মাইক্রোবাসের নিচে পড়ে মারা যান। গতকাল ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশের পোড়া মাইক্রোবাসটি ঘটনাস্থলে পড়ে আছে।পুলিশের তাড়া খেয়ে পালানোর সময় মাইক্রোবাসের চাপায় ভেঙে যায় মোটরসাইকেলটি l প্রথম আলো , নিহত রাসেল চৌধুরীপুলিশের তাড়া খেয়ে পালানোর সময় মাইক্রোবাসের চাপায় ভেঙে যায় মোটরসাইকেলটি l প্রথম আলো , নিহত রাসেল চৌধুরীকুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন গতকাল শুক্রবার রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ঘটনায় কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) আবদুল্লাহ আল মামুনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। তিনি বলেন, সদর দক্ষিণ মডেল থানা-পুলিশ মোটরসাইকেল আরোহীদের তাড়া করতে গিয়ে ওই ঘটনা ঘটেছে। নিহত ব্যক্তির বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে মোটরসাইকেল চোরাচালানের একটি ও দেবীদ্বার থানায় দুটি মামলা রয়েছে। ধারণা করা যাচ্ছে, ওই ব্যক্তি মাদক ব্যবসায়ী। এ ঘটনায় পুলিশের সদস্যরা দায়ী হলে তাঁদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশ সুপার বলেন, লাশ গুমের অভিযোগ সঠিক নয়। এসব বালুতোপা এলাকার মাদক সিন্ডিকেটের সদস্যরা রটিয়েছেন।
নোয়াখালী অফিস জানায়, নিহত রাসেল ওরফে রাসেল চৌধুরীর (২৪) গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর চাটখিল পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে। তিনি ভিমপুর এলাকার মনগাজী ব্যাপারীবাড়ির মৃত সফি উল্লার ছেলে। তাঁর বড় ভাই মানিক গতকাল শুক্রবার রাতে বলেন, গত বৃহস্পতিবার তাঁর ভাই কুমিল্লা গেছেন। গতকাল কুমিল্লা থেকে পুলিশের কাছে থেকে তাঁরা ভাইয়ের মৃত্যুর সংবাদ পান। তিনি জানান, তাঁর ভাইয়ের বিরুদ্ধে চাটখিল থানায় একটি মামলা আছে। ওই মামলায় তিনি ইতিপূর্বে একবার গ্রেপ্তার হয়েছেন। তবে কী মামলা তা তিনি বিস্তারিত জানেন না। এক প্রশ্নের জবাবে মানিক বলেন, রাসেল স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তবে চোরাইপথে আসা মোটরসাইকেল ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কি না তা তিনি জানেন না।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নিহত রাসেল ভারত থেকে কুমিল্লা সীমান্ত হয়ে চোরাইপথে আসা অবৈধ মোটরসাইকেল কেনাবেচার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। চাটখিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, রাসেলের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনের একটি মামলা রয়েছে। ওই মামলায় একবার গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন।

Check Also

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করেননি সমাজী

জুলাই-আগস্টের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার সাবেক ৯ মন্ত্রীসহ ১৩ জনকে আন্তর্জাতিক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।