ক্রাইমবার্তা রিপোট :স্টাফরিপোটর ও তালা প্রতিনিধিঃ সাতক্ষীরার তালা ফিরেঃ সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার খলিলনগর ইউনিয়নের রহিমাবাদ গ্রামে লক্ষ্মণ দাসের আমবাগানে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত দুজন হলেন তালার মাগুরা ইউনিয়নের মাগুরাডাঙ্গা গ্রামের কানাই বাছাড়ের ছেলে বিদ্যুৎ বাছাড় ও সুজনসাহা গ্রামের নুর ইসলামের ছেলে শেখ তালহা। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারকে দেয়া হবে। লাশ ময়না তদন্তের জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। নিহত দুজন গত ৫ মার্চ থেকে নিখোঁজ ছিলেন।
পুলিশ জানায়, বন্দুকযুদ্ধে সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সফিউজ্জামান ও কনস্টেবল নাজমুল আহত হন। তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বন্দুকযুদ্ধের পর ঘটনাস্থল থেকে একটি ওয়ান শুটার বন্দুক, একটি দেশি পিস্তল, রামদা, হাতুড়িসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয় বলে দাবি করেছে পুলিশ।
তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান হাফিজুর রহমান জানান, রহিমাবাদ গ্রামের আমবাগানে বসে কয়েকজন ব্যক্তি ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে পুলিশের কাছে খবর আসে। সেই খবরের ভিত্তিতে তালা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোজাফফর ও এসআই নাজমুলের নেতৃত্বে পুলিশের দুটি দল ঘটনাস্থলে যায়। এ সময় ডাকাতরা তাদের ওপর ককটেল ও গুলি ছোড়ে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। প্রায় ১৫ মিনিট এভাবে গোলাগুলি চলে। এর পর ঘটনাস্থলে নিহত অবস্থায় দুজনকে পড়ে থাকতে দেখা যায়।
ওসি আরো জানান, স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে নিহত দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন তালার মাগুরা ইউনিয়নের মাগুরাডাঙ্গা গ্রামের কানাই বাছাড়ের ছেলে বিদ্যুৎ বাছাড় ও সুজনসাহা গ্রামের নুর ইসলামের ছেলে শেখ তালহা।
পুলিশের এই কর্মকর্তার দাবি, বিদ্যুৎ বাছাড় চরমপন্থী পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির বিদ্যুৎ বাহিনীর প্রধান। তাঁর বিরুদ্ধে পাঁচটি ডাকাতি, তিনটি অস্ত্র মামলাসহ ১৪টি মামলা রয়েছে। অন্যদিকে নিহত তালহার বিরুদ্ধে রয়েছে একটি নাশকতার মামলা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিদ্যুৎ বাছাড় টানা কয়েক বছর বছর ফেনসিডিল পাচার মামলায় কারাবন্দি ছিলেন। ২০১৩ সালেরপর কয়েক বার বিভিন্ন মামলায় জেল ও খেটেছেন বিদ্যুৎ বাছাড়। দুই মাস তিনি জেল থেকে বাড়ি ফেরেন।
এদিকে বিদ্যুতের বিষয়ে জানাতে তাঁর ভাগ্নে তালা উপজেলার নগরঘাটা ইউনিয়নের বিশ্বজিৎ দাস গত শনিবার রাতে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করতে আসেন। কিন্তু সুযোগ স্বল্পতার কারণে তাঁকে পরের দিন আসতে অনুরোধ করেন উপস্থিত সাংবাদিকরা।
সেই সময় বিশ্বজিৎ সাংবাদিকদের জানান, তাঁর মামা গত ৫ মার্চ দাওয়াত খেতে সুজনসাহা গ্রামের গোপাল দাসের বাড়িতে গিয়েছিলেন। সেখানে রাতে টিভি দেখার সময় পুলিশ তাঁকে, গোপালের ছেলে পলাশ দাস ও নুর ইসলামের ছেলে শেখ তালহাকে ধরে নিয়ে যায়। এর পর থেকে তাঁরা নিখোঁজ ছিলেন।
বিশ্বজিৎ আরো জানান, ২০১০ সালে বিদ্যুৎকে বেনেরপোতা সেতুর ওপর থেকে ফেনসিডিলসহ পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এ মামলায় তিনি ছয় বছর জেলে ছিলেন।
রহিমাবাদ গ্রামের দুই এলাকাবাসী জানান, তাঁরা রাত তিনটার দিকে কয়েকটি গুলির শব্দ শুনতে পেয়েছিলেন। সকালে দেখেন দুজনের গুলিবিদ্ধ লাশ। নিহত বিদ্যুতের পরিবার কেউ এলাকায় থাকে না। অন্যজনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
নিহত তালহা পরিবারের এক সদস্য জানান, গত ৫মার্চ সুজনসাহা গ্রামের ভবানিপুর ঋষিপাড়া গোপাল দাসের বাড়িতে ১০-১৫ জন পুলিশ সদস্যের একটি গ্রুপ অভিজান চালায়। সেখানে রাতে টিভি দেখার সময় পুলিশ বিদ্যুৎ বাছাড়, গোপালের ছেলে পলাশ দাস ও নুর ইসলামের ছেলে শেখ তালহাকে ধরে নিয়ে যায়।
এলাকা বাসি জানায়, বিদ্যুৎ বাছাড় অহু অপকর্মের হোতা। চুরি,ডাকাতি,চিনতাই সহ কয়েক ডর্জন অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। তবে বেশির ভাগ সময়ে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বিদ্যুৎ বাছাড় তার অপকর্ম চালিয়ে গেছে। বিএনপি ও আ’লীগ উভয় সরকারের সময়ে সে সুবিধা অবস্থনে ছিল। বিভিন্ন সময়ে তার বিরুদ্ধে অভিজান চললেও সে ছেল ধরা ছোয়ার বাইরে। সরকারের উচ্ছমহলের সাথে তার ছিল সুখ্যাতি।
এসবরে পর ও বর্তমান স্থানীয় সংসদ জেলা ওয়ার্কাস পাটির বিপ্লবী সভাপতি কেন্দ্রীয় নেতা এড.মোস্তফা লুৎফুল্লার সাথে তার ভাল সম্পর্ক ছিলনা। জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে নিহত বিদ্যুৎ বাছাড়া বর্তমান স্থানীয় সংসদ জেলা ওয়ার্কাস এড.মোস্তফা লুৎফুল্লাহ সহ তার দলের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের হয়রানি করার অভিযোগ রয়েছে। এমনকি এড.মোস্তফা লুৎফুল্লাহর সাথে সরাসরি মারপিটের ও ঘটনা রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান। ফলে বর্তমান সময়ে গা ঢাকা দিয়ে ছিল বিদ্যুৎ বাছাড়া। গত কয়েক বছর তার বিরুদ্ধে তেমন কোন অভিযোগও তুলতে চায়না স্থানীয়রা। অনেকে বলেছে বিদ্যুৎ সুযোগ পেলে ভাল হয়ে যেতে পারত।
এদিকে তালাহা পরিবারের এক সদস্য জানান,তালাহা নাশকতা মামলায় জেলে থাকার সময়ে বিদ্যুৎ বাছাড়ের সাথে পরিচয় হয়। পরে জেল থেকে বের হয়ে সে বিদ্যুৎ বাছাড়ের সাথে সঙ্গ দেয়। এক পর্যায়ে সে পরিবার থেকে বিছিন্ন হয়ে পড়ে।
Check Also
আশাশুনিতে টঙ্গী ইজতেমায় হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।ঢাকার টঙ্গীত ইজতেমা-মাঠে নিরীহ মুসল্লিদের উপর উগ্রবাদী সন্ত্রাসী সাদ পন্থীদের বর্বরোচিত হামলা ও পরিকল্পিত …