ক্রাইমবার্তা রিপোট: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘ভোটারবিহীন’ সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য ফের মরিয়া হয়ে উঠেছে। জনগণের মতামতকে তোয়াক্কা করেনা। লুটপাটের নীতিতে আজ তারা অন্ধ। মানুষ যাতে প্রতিবাদ করতে না পারে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে দেশজুড়ে মহাসমারোহে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড চালানো হচ্ছে এবং চলছে গণগ্রেফতার। সেইসাথে বাংলাদেশের সংগ্রামী জনগণ নিশ্চয়ই পিন্ডির কাছ থেকে রক্তসাগরের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা দিল্লীর কাছে হস্তান্তর করতে দেবে না। আমাদের জাতীয় জীবনের সাথে স্বাধীনতা স্পৃহা অদম্যভাবে অঙ্গীভুত। ভারতের কাছ থেকে সামরিক হার্ডওয়্যার আমদানি করলে সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হবে ভারতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার এক্সটেনশন মাত্র।
আজ শুক্রবার সকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী এসব বলেন। এসময় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তৈমুর আলম খন্দকার, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় নেতা মুনির হোসেন, জেড মর্তুজা চৌধুরী তুলা প্রমুখ।
তিনি বলেন, ভোটারবিহীন সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। এজন্য জনগণের সম্মতি নয়, নিজেরা টিকে থাকতে চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রের ওপর নির্ভর করছে। সর্বক্ষেত্রে ব্যর্থ সরকার প্রতিনিয়ত গুম, খুন বিচারবহির্ভূত হত্যার পাশাপাশি নানা কল্পকাহিনী রচনা করে জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্ন দিকে সরিয়ে রাখা তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
রিজভী বলেন, আপনারা দেখেছেন নিজেদের লুটপাটের জন্য কয়েকদিন আগে সরকার অযৌক্তিকভাবে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। ব্যাংক, বীমা, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ রাষ্ট্রভান্ডার লুটপাট করেও তাদের পেট ভরেনি। ভয়াবহ দুর্নীতি আর দু:শাসনে পিষ্ট দেশের মানুষ যে কতটা দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে সেদিকে তাদের দৃষ্টি নেই। লুটপাটের নীতিতে আজ তারা অন্ধ। মানুষ যাতে প্রতিবাদ করতে না পারে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে দেশজুড়ে মহাসমারোহে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড চালানো হচ্ছে এবং চলছে গণগ্রেফতার।
তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। সংবাদ মাধ্যমের গলায় ফাঁসির দড়ি লাগিয়ে রাখা হয়েছে। আর এসমস্ত অনাচার করবে বলেই সরকার গণতন্ত্রকে মূমূর্ষ রোগী বানিয়ে জনগণের গায়ে কাদা ছিটাচ্ছে।
রিজভী বলেন, গতকালও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেছেন-দেশের স্বার্থ সমুন্নত রেখে ভারতের সাথে সামরিক চুক্তিসহ যেকোনো চুক্তি হতেই পারে। কোনো চুক্তিই গোপন রাখা হবে না। কাদের সাহেবের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই-ভারতের সাথে অতীতে দেশবিরোধী ট্রানজিট, করিডোর ছাড়াও আপনারা আরো গোপনীয় ৫০টি চুক্তি সম্পাদন করেছিলেন যেটি আজো জনগণ জানতে পারেনি। তবে দেশবাসী মনে করে-যেনতেনভবে ক্ষমতাকে আঁকড়ে রাখতে দেশবিরোধী এতোসব কর্মতৎপরতা দেখাচ্ছে বর্তমান শাসকগোষ্ঠী। আর সেজন্যই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তাকে ভারতের জিম্মায় সঁপে দিতে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতার-আমলকি জবরদস্তিমূলকভাবে করতলগত করে রেখেছে।
ভারতের সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তির ব্যাপারে রুহুল কবির রিজভী বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পার্শ্ববর্তী দেশের হস্তক্ষেপ বারবার এতোই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, ভারতের সাথে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা চুক্তির বিষয় নিয়ে গুরুতর শঙ্কা ও সন্দেহ দেশবাসীর মনকে আছন্ন করে রেখেছে। লাখ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিপন্ন হতে চলেছে কী না তা নিয়ে এদেশের মানুষের দু:শ্চিন্তার শেষ নেই।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের সংগ্রামী জনগণ নিশ্চয়ই পিন্ডির কাছ থেকে রক্তসাগরের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা দিল্লীর কাছে হস্তান্তর করতে দেবে না। আমাদের জাতীয় জীবনের সাথে স্বাধীনতা স্পৃহা অদম্যভাবে অঙ্গীভুত।
বিএনপির এই নেতা বলেন, প্রতিরক্ষা চুক্তির বিষয়ে ভারতের আগ্রহ এবং বাংলাদেশ সরকার চায় সমঝোতা স্মারক সম্পাদন করতে। সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হলেও তা চুক্তি সম্পাদনের পথে একটা বাধ্যতা তৈরী করবে। সুতরাং বাংলাদেশ সরকারের জন্য সমঝোতা স্মারকে সাক্ষর করাও হবে বিপজ্জনক। বাংলাদেশের সরকার ভারতকে উজাড় করে দেয় কিন্তু ভারত মিলিমিটারের ভগ্নাংশও বাংলাদেশকে ছাড় দেয় না। ভারত কর্তৃক প্রস্তাবিত ২৫ বছর মেয়াদী প্রতিরক্ষা চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশে তাদের মিলিটারী হার্ডওয়্যার বিক্রি করতে চায়। অথচ ভারতের একজন সাবেক সেনাপ্রধান একসময় বলেছিলেন-ভারতের সামরিক অস্ত্রসম্ভার সেকেলে, আধুনিক প্রযুক্তি থেকে অনেক দুরে, এগুলো মানসম্মত নয়। ভারত নিজেই হচ্ছে সামরিক সরঞ্জাম আমদানিকারক একটি দেশ। সেক্ষেত্রে ভারত কী ধরণের সমরাস্ত্র বাংলাদেশে রফতানি করবে সেটিই এখন বড় প্রশ্ন। আসলে এর পেছনে যে অন্য উদ্দেশ্য আছে তা বাংলাদেশের মানুষ ভালভাবেই উপলব্ধি করে। ভারতের কাছ থেকে সামরিক হার্ডওয়্যার আমদানী করলে সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হবে ভারতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার এক্সটেনশন মাত্র। এই চুক্তি হলে ভারত অস্ত্র কেনার শর্তে বাংলাদেশকে ৫০ কোটি মার্কিন ডলার লাইন অফ ক্রেডিট দেবে, অর্থাৎ এই অর্থ দিয়েই ভারত থেকে অস্ত্র কিনতে হবে। এটি ভারতের কৈ এর তেল দিয়ে কৈ ভাজার চানক্য নীতি।
রিজভী বলেন, ভারত কোথাও বিন্দুমাত্র নিজেদের স্বার্থ পরিত্যাগ করতে রাজি নয়। বাংলাদেশের সাথে ভারতের এই চুক্তির খবরে সারাদেশের মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে এদেশের আপামর জনসাধারণ শরীরের রক্ত ঢেলে দিয়ে অমিত বিক্রমে প্রতিহত করবে। আবারো কবির কন্ঠে বলতে চাই-“মৃত্যুর ভয়ে ভীরু বসে থাকা আর না/পরো পরো যুদ্ধের সজ্জা’’।
রিজভী কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িতে অভিযান এবং হয়রানির তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, এসব করা হচ্ছে রাজনৈতিক উদ্দেশেই।