“কর্তৃপক্ষের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন জনমনে” হাটহাজারীতে সরকারি খাস জায়গা,ফসলি ও জলাশয় ভরাটের মহোৎসব চলছে

ক্রাইমবার্তা রিপোট:মোঃ আলাউদ্দীন,হাটহাজারী(চট্টগ্রাম)প্রতিনিধিঃ হাটহাজারীতে সরবে নিরবে ফসলি কৃষি জমি জলাশয় ও সরকারি খাস জায়গা ভরাটের মহোৎসব চলছে। জমি, খাল-জলাশয় ভরাট করে বাড়িঘর, ইটভাটা, প্লট, শিল্প-কারখানাসহ নানা স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে আশঙ্কাজনক হারে কমতে শুরু করেছে ফসলি জমি। উদ্বেগজনক হারে ধানি জমি কমে আসায় খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে রয়েছে। বছর বছর কৃষি জমির হার কমলেও তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কারো মাথাব্যথা নেই।20
জানা যায়,অসচেতনতা ও ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে উপজেলায় বিভিন্ন সড়কের দুই পাশে আবাদযোগ্য জমি আশঙ্কাজনক ভাবে কমছে। অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে জমি, খাল- জলাশয় ভরাট করে বাড়িঘর,ইটভাটা,প্লট,শিল্প-কারখানাসহ নানা স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। স্থানীয় ভূমি দস্যুরা সংরক্ষিত ভূমি, সরকারি খাস ভূমি, জলাধার জোর পূর্বক দখলে নিচ্ছে। বনাঞ্চল রক্ষায় আইন ও নীতিমালা অমান্য করে বেদখল হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন বনাঞ্চলও।
উপজেলার কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর ও বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। চট্টগ্রামের শস্য ভান্ডার খ্যাত এই উপজেলার জমি বিত্তশালীদের পেটে। দিন দিন এ উপজেলার জমির প্রতি এলাকার বিত্তশালীদের লোলুপ দৃষ্টিতে শস্য ভান্ডারের আয়তন ছোট হয়ে আসছে। বিত্তশালীরা অর্থের জোরে ধানি জমি কেনার প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে । সরকারী আইনের তোয়াক্কা না করে ধানি জমি কিনে সীমানা প্রাচীর করে আবাসিক প্লট তৈরী করছে। জমি বেচাকেনার জন্য
এলাকায় বিত্তশালীরা সিন্ডিকেট করে এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ধানি জমির মাঝখানে জমি কেনার মালিকরা তাদের নাম দিয়ে সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দেয়। এর কিছুদিন পর ইট দিয়ে জমির চারিদিকে দখলের প্রাচীর তৈরি করে। ধানি জমির পাশাপাশি নানা স্থাপনা গড়ে উঠায় পাশের জমি অনাবাদি থেকে যাচ্ছে। গত বেশ কিছু সময় ধরে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি মহাসড়কের দুই পাশে হাটহাজারী উপজেলার মধ্যে নাজিরহাট,নুরালিমিয়ারহাট,কাটিরহাট,মুনিয়াপুকুর পাড়, সরকারহাট, মুহুরীহাট, চারিয়া, মিরেরহাট,হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গেইট,হাটহাজারী সদরের জাগৃতি ক্লাবের পর্শ্চিমে সওজের সামনে,সুবেদার পুকুর পাড় ,চারা বটতল,ইছাপুর,১১মাইল,২নং গেইট,চবির ১নং গেইট,মদনহাট,ইসলামিয়াহাট,নন্দীরহাট,ফতেযাবাদ,চৌঃহাট,বড় দীঘির পাড়সহ অনেক জমি রাস্তার পাশের সরকারী জায়গা ভ’মি দস্যু ও বিত্তশালীদের পেটে চলে গেছে। শত শত কৃষক লোভে পড়ে ধানি জমি বিক্রি করে তাদের বাপ দাদার পৈত্তিক পেশা ছেড়ে অন্য পেশার দিকে ঝুঁকছে।
উপজেলা কৃষি অফিসের মতে, বছরে ধানি জমি কমলেও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ ও উন্নতজাতের বীজ ব্যবহারে কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে আবাদযোগ্য জমি কমলেও সেই তুলনায় ফসল উৎপাদন কমেনি।
গোপন সূত্রে জানা যায়, ফসলি জমি,জলাশয় ও রোড়ের পাশের সরকারি খাস জায়গা ভরাটকারী ভ’মি দস্যুদের কাছ থেকে কিছু অসাধু সংবাদকর্মী এবং সংশ্লিষ্ট কিছু অসাধু কর্মকর্তারা উৎকোচের(টাকা) বিনিময়ে নিরব ভ’মিকা পালন করে।
স্থানীয়রা জানান, যে হারে ধানি জমি কমছে এ অবস্থা চলতে থাকলে উপজেলায় খাদ্য উৎপাদন হুমকির মুখে পড়বে। কৃষিবিদরা বলেন, কৃষি জমি সুরক্ষা নীতিমালা প্রণয়নের কাজ অনেক এগিয়েছে। সহসাই তা আইন বা বিধিমালা আকারে প্রকাশিত হবে। এতে কৃষি জমি সংরক্ষণ করা যাবে। কেউ ইচ্ছে করলেই কৃষি জমি আর অকৃষি খাতে ব্যবহার করতে পারবেন না। ইউরোপের দেশগুলোতে পরিকল্পিতভাবে জমির ব্যবহার করা হয়। পাশের দেশ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে কৃষক ছাড়া অন্য কেউ কৃষিজমি কিনতে পারে না। কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, গুজরাট ও হিমাচলে কৃষকরাই কেবল কৃষিকাজের জন্য কৃষিজমি কিনতে পারে। হরিয়ানায় কৃষিজমির এলাকাকে নিয়ন্ত্রিত এলাকা হিসেবে নির্ধারণ করা আছে। সেখানে জমি কিনে কৃষিকাজের বাইরে অন্য কোনো কাজ করতে গেলে সরকারের অনুমতি লাগে।
হাটহাজারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ আব্দুল্লাহ ওয়াহেদ জানান, ফসলি জমিতে ঘর বাড়ি কিংবা প্লট করার জন্য সরকারী কোন নিয়ম আগে না থাকলেও বর্তমানে সরকার চাষাবাদ যোগ্য জমিতে প্লট বাণিজ্য অথবা ঘর বাড়ি তৈরী করতে না পারার আইন পাশ করেছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা সহ-কমিশনার(ভ’মি)আরিফুল ইসলাম সরদার বলেন, সরকারি পর্যায়ে সম্প্রতি চাষাবাদ যোগ্য জমির উপর প্লট নির্মানে নিষেধাজ্ঞার বিধান রয়েছে। আইন অমান্যকারীর বিরুদ্ধেও বড় ধরনের শাস্তির বিধান করা হয়েছে।

Check Also

কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে বিভাগ করার সুপারিশ দেবে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন

কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে বিভাগ করার সুপারিশ করতে যাচ্ছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সচিবালয় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।