ক্রাইমবার্তা রিপোট:জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক নূরুল আলম নুরুকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে হত্যার জন্য পরিবার ও দল যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে, সেই পুলিশই বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে।
পরিবার বলছে, তারা মামলা করবে না। কারণ, মামলা করে কিছু হবে না। এর বিচারের ভার তারা আল্লাহর কাছে দিয়েছে।
কর্ণফুলী নদীতীর থেকে মাথায় গুলির চিহ্ন ও শরীরের নির্যাতনের দাগসহ নুরুর লাশ উদ্ধারের একদিন পর শুক্রবার রাতে রাউজান থানায় পুলিশ বাদী হয়ে দায়ের করা এ মামলায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রেজাউল মাসুদ বলেন, এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে রাউজান থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেছে পুলিশ।
‘পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করতে অস্বীকৃতি জানানোর পর উপপরিদর্শক কামাল হোসেন বাদী হয়ে হত্যা মামলাটি করেন। পরিবার পুলিশকে জানিয়েছে, তাঁরা আল্লার কাছে বিচার দেবেন’, যোগ করেন রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেফায়েত উল্লাহ।
গত বুধবার মধ্যরাতে চট্টগ্রামের চন্দনপুরা এলাকার ভাড়া বাসা থেকে নূরুল আলমকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার রাউজানে চোখ ও হাত বাঁধা নুরুর গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায় কর্ণফুলী নদীর তীরে।
পরে লাশের ময়নাতদন্ত শেষে নগরীর জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ ময়দানে জানাজা শেষে ছাত্রদল নুরু হত্যার প্রতিবাদে আগামীকাল রোববার চট্টগ্রামে আধাবেলা হরতালের ঘোষণা দেয়।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলেও নুরুর পরিবারের কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিএনপির চট্টগ্রাম উত্তর জেলা কমিটির সদস্য সচিব ও রাউজান পৌরসভার সাবেক মেয়র আব্দুল্লাহ আল হাসান বলেন, ‘নুরুর পরিবার কোনো মামলা করবে না বলে আমাদের জানিয়েছেন। তাঁরা মনে করেন, এখানে মামলা করে কোনো কাজ হবে না। আমরাও এটাই মনে করি, এর আগে নুরুর মতো রাউজান পৌরসভার স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আবুল হাসেম, বিএনপির ফরিদুল আলম ফরিদ ও মোহাম্মদ মুসাকে ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তার কোনো বিচার হয় নাই। সরকারি দল ও পুলিশের ভয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা এলাকাছাড়া। পুলিশের ভয়েই কেউ থানায় যায় না। আর নুরুর পরিবার তো আরো এতিম। সবার ছোট মেয়ের বয়স চার মাস। বাকি দুই সন্তানও ছোট।’
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহত নূরুর ভাগ্নে মো. রাশেদ গত বৃহস্পতিবার বলেন, ‘রাত সাড়ে ১১টার পর দরজা নক করছে। আমি তিন-চারবার জিজ্ঞাসা করছি, বলে নাই। মনে করছি, বাড়িওয়ালার ছেলে চাবি নিতে আসছে। খুলছি। ধাক্কায় ঢুকে গেছে। আমারে বলতেছে, মোবাইল কই তোর? আমার মোবাইল এখানে। আমারে চেক করতেছে। দুজন ভেতরে ঢুকছে। সঙ্গে সঙ্গে (নুরুল আলম নূরু) হাতকড়া পরাই ফেলছে। আমারে বলতেছে, এখানে বসে থাক। তারপর শার্ট পরাই নিয়ে চলে গেছে।’
আর কিছু বলেছে কি না জানতে চাইলে রাশেদ বলেন, ‘আর কিছু বলে নাই। বলছে, চলেন। হাতকড়া পরাই ফেলছে শোয়া অবস্থায়। লুঙ্গি পরা ছিল। এরপর শার্ট পরাইছে। রুম থেকে নিয়ে চলে গেছে।’
ওই লোকরা তিনটি মুঠোফোন নিয়ে যায় জানিয়ে রাশেদ অভিযোগ করেন, ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় সাত-আটজন পুলিশ সদস্য ছিলেন। এর মধ্যে তিনজন ছিলেন পুলিশের পোশাক পরা। এর মধ্যে একজনের নেমপ্লেটে জাবেদ লেখা ছিল। ইউনিফর্মে ছিল এসআই র্যাংক। তারা নূরুকে সাদা রঙের একটি হাইয়েস গাড়িতে করে নিয়ে যায়। গাড়ির নম্বর চট্ট মেট্রো চ-১১-৭৭ লেখাটি তাঁরা দেখতে পেয়েছেন।
নিহত নূরু চার মাসের একটি মেয়েসন্তান, দুই ছেলেসহ পরিবার নিয়ে চট্টগ্রাম নগরীর চন্দনপুরা মিনহাজ মঞ্জিলের বাসায় ভাড়া থাকতেন। তাঁদের গ্রামের বাড়ি রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়ায়।
পুলিশের বক্তব্য
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ জানিয়েছিলেন, তাঁরা এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না। তবে জাবেদ নামে পুলিশ সদস্য আছেন। ঘটনার সঙ্গে তিনি ছিলেন কি না সে ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছেন তাঁরা।