আবু সাইদ বিশ্বাসঃক্রাইমবার্তা রিপোট: সাতক্ষীরাঃ সাতক্ষীরায় শত শত বিঘা ইরি-বোরো ধান ক্ষেতে অজ্ঞাত পোকার আক্রমণে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে পোকার আকস্মিক আক্রমণে পাকা ও আধাপাকা ধান নষ্ট হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এ অঞ্চলের কৃষক।
অজ্ঞাত এই পোকা ধানের শীষের শাখাসহ পাতা কেটে একাকার করে ফেললেও এ আক্রমণ ঠেকাতে মাঠ পর্যায়ে কৃষি বিভাগ থেকে কোনো পরামর্শ না পাওয়ায় কৃষকদের মাঝে চাপা ক্ষোভ দেখা গেছে জেলার বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেওছ।
তালা খলিষখালি ইউনিয়নের মঙ্গলানন্দকাটী গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান, আব্দুস সালাম, বেলাল হোসেনসহ অন্যরা জানান, এক সপ্তাহ ধরে ধান ক্ষেতে এই অজ্ঞাত পোকার আক্রমণ দেখা দিলেও এ পর্যন্ত কৃষি অফিসের কোনো কর্মকর্তাকে মাঠ পর্যায়ে দেখতে পাননি তারা। অথচ পোকার আক্রমণে শত শত বিঘার ইরি ধান নষ্ট হয়ে গেছে। ফসল কাটার মুর্হূতে এ ধরণের পোকার আক্রমণ কৃষকদের চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। যে যার মত করে কৃষকরা ইরি ক্ষেতে কীটনাশক ব্যবহার করছে।
কৃষকরা আরো জানান, অদ্ভুত এ ধরনের পোকা আগে কখনো দেখেননি । সাধারণত রাতের বেলা এ সমস্ত পোকার আক্রমণ ঘটে। ক্ষেতের যে অংশে পোকা আক্রমণ করছে সেখানকার শীষে কোনো ধান থাকছে না। কৃষকরা নিরুপায় হয়ে ধান ক্ষেতে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলেও তাতে কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না।
কৃষক লাল্টু মিয়া জানান, মৌসুমের শুরুতে ভারী কুয়াশায় প্রথম দফার বীজতলা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেলে দ্বিতীয় দফায় ইরি-বোরো চারা রোপণ করে ভালো ফলনের আশা ছিলো তাদের। কিন্তু বর্তমানে হঠাৎ করে অজ্ঞাত এই পোকার আকস্মিক আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা।
তালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, কৃষকেরা অজ্ঞাত পোকার কথা বললেও আসলে এটি শীষ কাটা লেদা পোকা। এতে আতংকিত হওয়ার তেমন কোনো কারণ নেই। এই পোকা দমনে কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের নানা পর্যায়ে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৭৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। গত মৌসুমে সাতক্ষীরার সাত উপজেলায় ৭৪ হাজার হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছিল। এ হিসেবে এবার জেলায় এক হাজার হেক্টর বেশি জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্য নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২৫ হাজার ৪৭০ হেক্টর, কলারোয়ায় ১২ হাজার ৬৭১ হেক্টর, তালায় ১৬ হাজার ৯০০ হেক্টর, দেবহাটায় ৬ হাজার ৬০ হেক্টর, কালীগঞ্জ উপজেলায় ৫ হাজার ৮২০ হেক্টর, আশাশুনিতে ৬ হাজার ২৭০ হেক্টর ও শ্যামনগরে ১ হাজার ৬০৮ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ব্রি-২৮, এসএল ৮ ব্রি-ধান ৫৫, ৪৭, ৫০ জামাইবাবু ও শুভ্র ধান চাষ করেছে বেশির ভাগ চাষীরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সাতক্ষীরায় বোরোর ভালো ফলন হয়েছিল। আবহাওয়া ঠিক থাকলে এবারো ফলন ভালো হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তাই এবার লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার হেক্টর বাড়ানো হয়েছে।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কাজী আব্দুল মান্নান জানান, কৃষকেরা অজ্ঞাত পোকার কথা বললেও আসলে এটিতে আতংকিত হওয়ার তেমন কোনো কারণ নেই। এই পোকা দমনে কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের নানা পর্যায়ে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এরই মধ্যে জেলার বিভিন্ন এলাকাতে ধান কাটা শুরু হয়েছে। —আবু সাইদ বিশ্বাস-সাতক্ষীরা ১/৪/১৭
Check Also
সাতক্ষীরা জেলা জলবদ্ধতা নিরসন কমিটির সভা
শাহ জাহান আলী মিটন , সাতক্ষীরা :সাতক্ষীরা জেলা জলবদ্ধতা নিরসন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।সাতক্ষীরা জেলা …