ক্রাইমবার্তা রিপোট:চলমান রাজনীতিতে হেফাজতে ইসলামকে বড় ফ্যাক্টর বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। দলটি অল্প সময়ের মধ্যে সরকার ও বিরোধী শিবিরে নিজেদের প্রয়োজনীয়তা প্রমাণ করে এবার ভোটের রাজনীতিতে অগ্রসর হচ্ছে। চলতি মাসে গণভবনে কওমি মাদ্রাসার আলেমদের সঙ্গে নিয়ে হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতে গেলে হেফাজতের রাজনীতির মোড় পরিবর্তন হয়। দলটি সরকারে সঙ্গে কাজ করতে চায় । সরকারও মনোযোগ দিয়ে তাদের কথা শুনেছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি হেফাজতে ইসলামের একাধিক নেতা নির্বাচন কমিশনে খোঁজ-খবর নিয়েছেন নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন নেওয়ার বিষয়ে। নিবন্ধন পেতে কিভাবে এগোতে হবে এ নিয়েও ইসি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন হেফাজতের নেতারা।
হেফাজতের বর্তমান অবস্থান নিয়েও রাজনৈতিক মহলে চলছে গুঞ্জন। আগামী সংসদ নির্বাচনে হেফাজতের অবস্থান কী হবে? ভোটের রাজনীতিতে তারা কী করবে- এনিয়েও চলছে নানামুখি বিতর্ক।
ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখা জানিয়েছে, বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৪০টি। ২০১৩ সাল থেকে জামায়াতকে অনিবন্ধিত হিসেবে গণ্য করছে কমিশন। কেননা, হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক রিট পিটিশন নং ৬৩০/২০০৯ এর উপর ১ আগস্ট ২০১৩ তারিখে প্রদত্ত রায়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করা হয়। নতুন করে কোনো দলকে নিবন্ধন দেয়া হলে ইসির নিবন্ধিত দলের সংখ্যা হবে ৪১টি। সে ক্ষেত্রে নতুন করে প্রতীকও বরাদ্দ দেয়া হতে পারে।
এসব বিষয়ে হেফাজতের কেন্দ্রিয় সাংগ্রঠনিক সম্পাদক মওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, আমারা এখন ভোটের রাজনীতিতে যেতে চাই না। আমরা ইসলামের পথে থেকে সরকারকে সহযোগিতা করে দলকে এগিযে নিতে চাই। আমাদের আরো অনেক দাবি রয়েছে, সেগুলোকে আদায় করতে আমরা আরো অগ্রসর হব। দলের নির্বাচনে যাওয়ার অনেক সক্ষমতা আছে বলে মনে করি আমরা । কিন্তু বর্তমানে ইসলামের সুরক্ষা নিয়েই ভাবছি ।
দলের নিবন্ধনের বিষয়ে কোন পরিকল্পনা আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে হেফাজতের অরেক কেন্দ্রীয় নেতা মুফতি ফয়েজুল্লা বলেন, আমাদের দলের পক্ষ থেকে নিবন্ধন নেয়ার কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আমাদের কোনো নেতা-কর্মী অতি উৎসাহী হয়ে ইসিতে খোঁজ-খবর নিলে দায় দলের নয়। এরকম সিদ্ধান্ত হলে আমরা সবাইকে জানাব।
২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি এই সংগঠনটি চট্টগ্রামের প্রায় একশ’টি কওমি মাদ্রাসার শিক্ষকদের নিয়ে গঠিত হয়। হাটহাজারী মাদ্রাসার পরিচালক শাহ আহমদ শফী এবং ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান ইযহারুল ইসলাম এই সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা।
সংগঠনটি ২০১০ সালে বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতির বিরোধিতার মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করে। ২০১১ সালে তারা বাংলাদেশ নারী উন্নয়ন নীতি (২০০৯) এর কয়েকটি ধারাকে ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক দাবি করে এর তীব্র বিরোধিতা করে।
২০১১ সালে এই সংগঠনটি, সর্বক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের সমঅধিকার নিশ্চিতের লক্ষ্যে গঠিত নারী উন্নয়ন নীতির তীব্র বিরোধিতা করে।
২০১৩ সালে তারা ইসলাম ও রাসুলকে কটূক্তিকারী নাস্তিক ব্লগারদের ফাঁসি দাবি করে ব্যাপক আন্দোলন ও সমাবেশ শুরু করে। এ পরিপ্রেক্ষিতে তারা ১৩ দফা দাবি উত্থাপন করে। হেফাজতে ইসলামের এই দাবির কয়েকটি দফা সমালোচিত হলে পরবর্তীতে তারা সংবাদ সম্মেলনে ১৩ দফার ব্যাখ্যা দেয়। সর্বশেষ হাইকোর্টের সামনে থেকে ভাস্কর্য সরাতে হেফাজতের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী একমত হলে হেফাজতের রাজনৈতিক মোড় পরিবর্তিত হয়।
Check Also
আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইল বাংলাদেশ
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরাতে ভারতকে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. …