এদেকে প্রকল্পের ছয় বছর অতিক্রান্ত হলেও জমির মালিকরা এখন পর্যন্ত মাত্র এক বছরের ক্ষতিপূরণ পেয়েছে। বাকি টাকা ঠিক কবে নাগাদ দেয়া হবে তারও কোনও উত্তর জানা নেই সংশ্লিষ্টদের।
অন্যদিকে প্রকল্পভূক্ত বিল ব্যবস্থাপনায় নেট-পাটার দৌড়াত্মে টিআরএমর মূল উদ্দেশ্য নদীর পলি দ্বারা বিল ভরাটের কাজ ভেস্তে যেতে বসেছে। সর্বশেষ উভয় সংকটকে নদী খনন প্রকল্পের প্রধান অন্তরায় বলে মনে করছেন নদী তীরের বাসিন্দারা।
তবে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক প্রকল্পের অধিগ্রহণকৃত জমি মালিকদের ক্ষতিপূরণের টাকা প্রদানে জটিলতার বিষয়টিকেই প্রকল্প বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন।
অধিগ্রহনকৃত জমির মামলাগুলো জটিল ও একই জমির একাধিক দাবিদার উল্লেখ করে তিনি বলেন, জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধের কারণে মূলত তাদের ক্ষতিপূরণের টাকা দিতে বিলম্ব হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম প্রধান নদী কপোতাক্ষের দৈর্ঘ্য ২৪০ কি.মি. এবং এর ক্যাচমেন্ট এরিয়া ১.০২ লাখ হেক্টর। নদের অববাহিকায় প্রায় ১৫ লাখ মানুষের বসবাস। নাব্যতা হ্রাসে নব্বইর দশকের শেষের দিকে এর অববাহিকায় জলাবদ্ধতা শুরু হলেও ২০০০ সাল থেকে তা স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রূপ নেয়।
অব্যাহত পলি জমে নদের তলদেশ ভরাট হয়ে কপোতাক্ষ পরিণত হয় মরা খালে। বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশনের পথ রুদ্ধ হয়ে ২০০৫ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত জলাবদ্ধতা রীতিমতো রূপ নেয় ভয়াবহ বন্যায়। এতে অনেকেই উদ্ভাস্তু হয়। বিস্তীর্ণ এলাকায় দেখা দেয় মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়। তাৎক্ষণিক পানি নিষ্কাশন ও কপোতাক্ষের বুক থেকে পলি অপসারণের পাশাপাশি এর স্থায়ী সমাধানের জন্য বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠে কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলন কমিটি।
যার ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সরকার কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে চার বছর মেয়াদী একটি প্যাকেজ প্রকল্পের (প্রথম পর্যায়) বাস্তবায়নে ২৬১ কোটি ৫৪ লাখ ৮৩ টাকা ব্যয় বরাদ্দ করে। প্রকল্পে নদটি পুনরুদ্ধারে মূলত কপোতাক্ষের ৯০ কিলোমিটার খনন করে পলি অপসারণ ও সাতক্ষীরার তালা উপজেলার জালালপুর ও খেশরা ইউনিয়নের পাখিমারা বিলের এক হাজার ৫৬১.৯৬ একর জমির উপর জোয়ারাধার স্থাপনে টিআরএম প্রকল্প চালু করে।
যার পরিপ্রেক্ষিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০১২-২০১৩ সালে পাখিমারা বিলের অধিগ্রহণকৃত জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ বাবদ আনুসাঙ্গিক খরচসহ প্রাক্কলিত ব্যয়ের মোট ১৩ কোটি ৭৮ লাখ ৩০ হাজার ৬৮১.১৬ টাকা নির্ধারণ করে। এর মধ্যে পাউবো থেকে জেলা প্রশাসনকে ৭ কোটি টাকা প্রদান করা হলেও চলতি বছরের ২ মে পর্যন্ত সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের পক্ষে জমি মালিকদের মধ্যে ৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা প্রদান করা হয়।
প্রসঙ্গত, এ পর্যন্ত টিআরএমভূক্ত ৭৯২ জন জমির মালিক তাদের জমির ক্ষতি পূরণের জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছেন। তার মধ্যে ৬৫৭টি আবেদনের নিষ্পত্তি হয়েছে বলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। বাকি ১৩৫টি আবেদন এখন পর্যন্ত অপেক্ষমাণ রয়েছে।