ক্রাইমবার্তা আন্তর্জাতিক ডেস্ক : প্রতিদিনই আমরা পত্র-পত্রিকায় ধর্ষণের খবর দেখতে পাই। ধর্ষণ শব্দটা সাধারণ সকলের কাছে পরিচিত। তবে অস্ট্রেলিয়ায় একজনের মুখে শোনা গেল ২ হাজার বার ধর্ষণ হওয়ার কথা।
গাড়ি চুরির দায়ে কারাগারে যেতে হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার মেরিকে (ছদ্ম নাম)। মেরি একজন ট্রান্সজেন্ডার নারী। শাস্তি শোনার পর কারা কর্তৃপক্ষকে বার বার অনুরোধ করেছিলেন তাঁকে যেন পুরুষদের সঙ্গে এক সেলে রাখা না হয়। তাঁর কথায় কান দেননি কুইন্সল্যান্ড কারা কর্তৃপক্ষ।
সেলে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই মেরির পুরুষ সহবন্দিরা জোর করে তাঁর পোশাক খুলে দেয়। শুরু হয় যৌন নির্যাতনের পালা। এর পর থেকে প্রতি দিন অন্তত এক বার করে ধর্ষিত হতে হয়ে তাঁকে। প্রতিদিন মানসিক এই অত্যাচারে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে।
কারাগারে মেরি বার বার মানসিকভাবেও ক্ষত বিক্ষত হতে থাকেন। কারা কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার অভিযোগ জানিয়েই লাভ হয়নি। রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে পরে থেকেছেন। কেউই ফিরে তাকায়নি। তাঁর অসহায় চিৎকার বা গোঙানি, কোনও কিছুই কারও কানে পৌঁছায়নি। টানা চার বছর চলেছে এই নারকীয় নির্যাতন। অন্তত ২ হাজার বার ধর্ষণ করা হয় তাঁকে।
সময়টা নব্বাইয়ের দশকের মাঝামাঝি। মেরির ঠাঁই হয়েছিল পুরুষদের সেলেই। জেলের রিসেপশনে পা দিয়েই মেরি বুঝতে পেরেয়ছিলেন কারাগারের সেলে তাঁকে বেশ খানিকটা লড়াই করতে হবে। আশপাশের লোহার গারদ থেকে উঁকি মারা চোখগুলোর তাঁর প্রতি কেমন যেন দৃষ্টি ছুড়ে দিচ্ছিল। কিন্তু জেলের অভিজ্ঞতা ঠিক অতটা ভয়ানক হবে সেটা বোধহয় নিজের দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি মেরি।
কয়েকদিন আগে তার সাজার মেয়াদ শেষ হলে কারাগার থেকে বেরিয়ে এসেছেন মেরি। তবে এখনও সেই ভয়ঙ্কর দিনগুলোর কথা মনে পড়লে অজানা আতঙ্কে শিউরে ওঠেন মেরি। রাতে ঘুমোতে পারেন না। সম্প্রতি নিজের সেই অসহনীয় অভিজ্ঞতা নিয়ে মুখ খুলেছেন অস্ট্রেলিয়ার এ ট্রান্সজেন্ডার নারী মেরি।
তবে মেরির ঘটনা কোনও ব্যতিক্রম নয়। পৃথিবীর প্রায় সব দেশের কারাগারে লিঙ্গ নির্বিশেষে সহ-বন্দিদের ওপর কারাগারের মধ্যে যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। কোনও অজানা কারণে এই বিষয়ে যথাযথ কোনও ভূমিকাই নেন না অধিকাংশ কারা কর্তৃপক্ষ। এমনকি অনেক সময় কারা পাহারার দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মীদের বিরুদ্ধেও ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া যায়।
চার বছরে নরক যন্ত্রণার সময় মেরির মাত্র এক জন সমব্যাথীকে খুঁজে পেয়ে ছিলেন। ঘটনাচক্রে তিনিও ট্রান্সজেন্ডার ছিলেন। মেরির ওপর যে ধরনের নির্যাতন চলতো, সেই একই নির্যাতনের শিকার ছিলেন তিনিও।
মেরির মুক্তির কিছু দিন আগে প্যারোলে মুক্তি পান তিনি। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে প্যারোলের শর্ত ভঙ্গের অভিযোগ দায়ের করা হয়। আবারো কারাবাসের শাস্তি শোনানো হয় তাঁকে। তবে মেরির বন্ধুকে আর জেলে ফিরে যেতে হয়নি। জেলে যাওয়ার কথা শুনেই গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন। চিরতরের জেলে যান অভিমান করে। দ্য ইনডিপেডেন্ট ও নিউজ অস্ট্রেলিয়া ডটকম অবলম্বনে
Check Also
স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় রিকশা চালালেন পাকিস্তানের হাইকমিশনার
ঢাকায় রিকশা চালাচ্ছেন পাকিস্তানি হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ! ভাবতে অবাক লাগলেও সম্প্রতি তেমনি এক ঘটনা …