জীবন্ত দাফন থেকে বেঁচে ফিরলেন সারজিনা

ক্রাইমবার্তা রিপোট:‘যে স্বামী যৌতুক চায়, কথায় কথায় মারপিট, বুকে লাথি, মাথা দেয়ালের সঙ্গে ধাক্কা দেয়, হত্যার জন্য কবর দেয় তার সঙ্গে আর ঘর করার ইচ্ছা নেই। সুস্থ হলে বাপের বাড়ি ফিরে যাবো ও স্বামী তালাক করবো।’ বৃহস্পতিবার বিকালে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিছানায় শুয়ে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা গৃহবধূ সারজিনা খাতুন (২২) এ মন্তব্য করেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শিগগিরই তাকে রিলিজ দেয়া হবে।

জীবন্ত দাফন থেকে বেঁচে ফিরলেন সারজিনা

শিবগঞ্জ থানার এসআই আবুল কালাম জানান, শিগগিরই সারজিনাকে আদালতে হাজির করে জবানবন্দি নেয়া হবে।

বগুড়ার শিবগঞ্জের ময়দানহাটা গ্রামের আজিজার রহমানের মেয়ে সারজিনা খাতুন জানান, প্রায় সাড়ে ৩ বছর আগে উত্তর কৃষ্ণপুর ধাওয়াকান্দি গ্রামের মৃত হযরত আলীর ছেলে ট্রলি চালক সাদ্দাম হোসেন (২৫) তাকে বিয়ে করেন।

বিয়ের কিছুদিন পর থেকে সাদ্দাম এক লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে আসছিল। প্রতিবাদ করলে তিন সারজিনাকে নির্যাতন করেন।

এ নিয়ে গ্রামে শালিস হলেও সমাধান হয়নি। সংসারের মায়ায় বাবা-মার অমতে স্বামী বাড়িতে চলে আসেন। এরপরও যৌতুকের জন্য তার ওপর নির্যাতন অব্যাহত ছিল।

সারজিনা বলেন, গত মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে সাদ্দাম তার কাছে গায়ের জ্যাকেট চায়। জ্যাকেটটি পার্শ্ববর্তী চাচা শ্বশুর সাত্তারের বাড়িতে ছিল। এনে দিতে দেরি হওয়ায় সাদ্দাম তাকে মারপিট ও ছুরি বের করে হত্যার চেষ্টা করে। তখন তিনি পালিয়ে চাচা শ্বশুরের বাড়িতে গিয়ে লুকিয়ে থাকেন।

কিছু সময় পর সাদ্দাম ওই বাড়িতে গিয়ে তাকে জোরপূর্বক নিজ বাড়িতে আনে। মারপিটের এক পর্যায়ে বুকে লাথি দেয়, এরপর আর তিনি (সারজিনা) কিছু বলতে পারেন না।

বিকালে হাসপাতালে জ্ঞান ফেরার পর তিনি তাকে জীবন্ত কবর দেয়া ও সেখান থেকে উদ্ধার করার কথা শুনেছেন।

সারজিনা খাতুন বলেন, অনাহারে মরে গেলেও ওই খারাপ স্বামীর ঘরে ফিরে যাবেন না। সুস্থ হলে বাবার  বাড়িতে গিয়ে তাকে তালাক দেবেন।

তিনি নির্যাতন ও হত্যাচেষ্টার জন্য সাদ্দামের ফাঁসি দাবি করেন।

হাসপাতালে সারজিনার কান্নাজড়িত মা জরিনা বেগম বলেন, অনেক আশা করে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু কপাল খারাপ হওয়ায় স্বামীর নির্যাতন ছাড়া আর কিছু জোটেনি। এক লাখ যৌতুক না দেয়ায় কথায় কথায় মারপিট করতো। সালিশ করা হলেও মেয়ে নিজের ইচ্ছায় স্বামী বাড়ি যায়। তিনি প্রয়োজনে ভিক্ষা বা পরের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করবেন তবুও মেয়েকে আর জামাই বাড়ি পাঠাবেন না।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার সকালে সাদ্দাম হোসেন তার অচেতন স্ত্রী সারজিনা খাতুনকে ঘরের মেঝেতে জীবন্ত কবর দেন। শুধু মুখটা বাহিরে ছিল।

এ সময় মাঠ পরিদর্শন ও কিস্তি আদায়ে ব্র্যাক শিবগঞ্জ দাড়িদহ শাখার ম্যানেজার বামিনা শারমিন রুনি ও মাঠ কর্মকর্তা মেনেকা খাতুন ওই বাড়িতে এলে জানালা দিয়ে এ দৃশ্য দেখতে পান।

তখন গ্রামবাসীরা দরজা ভেঙে সাদ্দামকে আটক ও তাকে উদ্ধার করেন। গ্রামবাসীরা সাদ্দামকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখেন। ওই ব্র্যাক কর্মকর্তা পুলিশে খবর দেন।

বিকালে শিবগঞ্জ পুলিশ সাদ্দামকে গ্রেফতার ও সারজিনাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।

সারজিনার বাবা বাদি হয়ে জামাই সাদ্দাম হোসেন ও তার মা জোসনা বেগমের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।

শিবগঞ্জ থানার এসআই আবুল কালাম জানান, সাদ্দামকে বুধবার জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। তিনি অস্বাভাবিক আচরণ করায় তাকে রিমান্ডে নেয়া সম্ভব হয়নি।

সারজিনা সুস্থ হলে তাকে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নিয়ে ২২ ধারায় স্বীকারোক্তি রেকর্ড করা হবে।

 

Check Also

ট্রাইব্যুনালে আ.লীগ নেতাদের বিচার দেখতে এসে যা বললেন সাঈদী পুত্র

জুলাই-আগস্টের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া সাবেক ৯ মন্ত্রীসহ ১৩ জনকে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।