ক্রাইমবার্তা রিপোট:সংসদ উপস্থাপিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘লুটপাটের বাজেট’ বলে অভিহিত করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের উদ্যোগে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘এই বাজেট হলো লুটপাটের বাজেট। এই বাজেটে আওয়ামী লীগকে চুরির করার সুযোগ করে দিয়েছে। অর্থমন্ত্রী নিজেও বাজেটে কিছু করতে পারেন না। বাজেটও তৈরি হয় হাসিনার (প্রধানমন্ত্রী) কথা মতো। কাজেই হাসিনা যা চান বাজেট তাই হয়।’
প্রস্তাবিত বাজেট প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া আরো বলেন, এই বাজেট কী আর বাজেট থাকবে না-কি। পরে দেখবেন, যে প্রকল্পে এখন আছে অন্তত ১০ হাজার কি ২০ হাজার কোটি টাকা। সেটাই দেখবেন ৩০ হাজার কোটি টাকা করেছে। আবার বাড়াবে, ৪০ হাজার কোটি টাকা হবে। এভাবে বাড়তে থাকে।
জুন থেকে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ইতোমধ্যে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। চালের দাম এতো বেশি যে, গরীব মানুষ খেতে পারছে না। কাজেই গ্যাসে দাম বাড়ানো বন্ধ রাখুন। এই লুটপাট গ্যাসের দাম বাড়ানোও টাকাও হবে লুটের টাকা। তাই এসব লুটপাট বন্ধ করে দেশের মানুষের দিকে একটু তাকান।
কক্সাবাজারে মোরা ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থদের দুর্ভোগের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এখনো কক্সবাজারে কোনো রিলিফ যায় নাই, কেউ যায়নি দূর্গতদের দেখার জন্য। বিদেশী মিডিয়া থেকে বলছে এসব কথা। আজকে আওয়ামী লীগ যে মিথ্যাবাদী, দুর্নীতিবাজ, অত্যাচারি, খুনি, গুম সরকার –এটা পরিস্কার। তাদের হাতে দেশের মানুষের জীবন-সম্পদ এবং দেশ কোনোটাই নিরাপদ নয়।
দেশের বিচার বিভাগকে সরকার নিয়ন্ত্রণ করছে অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, আজ বিচার বিভাগের যে দুরাবস্থা বিরাজ করছে তা প্রধান বিচারপতির বক্তব্য থেকে আমরা বুঝতে পারি। বিচার বিভাগের ওপর সরকারের থাবা এতো বেশি যে, সব জায়গায় তারা হাত দিয়েছে। কোনো জায়গা বাদ রাখেনি, সব কিছু তার (সরকার প্রধান) নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে এবং তিনি সারাজীবন ক্ষমতায় থাকবেন। এটাই তাদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। সেজন্য বিচার বিভাগের ওপর এই সরকার কী করছে, তা দেখছেন। যেখানে সাধারণ মানুষ আসে ন্যায় বিচার পাওয়ার জন্য।
বিচারকদের বিচারের বিষয় তিনি বলেন, বিচারকরা ন্যায় বিচার দিতে চান, বিচারকরা বিচারপ্রার্থীদের সুবিচার দিতে চান। প্রধান বিচারপতির বক্তব্য থেকে আমরা বুঝেছি যে, নিম্ন আদালত পুরোটাই সরকারের নিয়ন্ত্রণে। এবং সেখানে সরকার যা নির্দেশ দেয়, বিচারকদের সেই নির্দেশ মেনে কাজ করতে হয় এবং রায় দিতে হয়। যদি বিচারক দেখেন সেই লোকটা নিরাপরাধ, এর সঙ্গে এরকম ব্যবহার করাটা ঠিক হবে না। তিনি যদি তার বিবেকমত রায় দিতে হয়, তাহলে তাকে হয় চাকুরিচ্যুত হতে হয়, হয় দেশছাড়া হতে হয়, তা নাহলে নানারকম মামলা-হামলা দিয়ে তাকে হয়রানি করা হয়।
খালেদা জিয়া অভিযোগ করে বলেন, দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, ন্যায় বিচার ও সব মানুষের সমান অধিকার নেই। এখানে কোনো মানুষ নিরাপদ নয়। না হিন্দু, না বৌদ্ধ, না খৃষ্টান, না মুসলমান। কাজে এই অবস্থার অবসানে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আমি আহবান জানাচ্ছি।
একাদশ নির্বাচন অবশ্যই সব দলের সমান সুযোগ নিশ্চিত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে, বলেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আজকে আওয়ামী লীগ ষড়যন্ত্র করছে নিরপেক্ষ নির্বাচন নয়। ষড়যন্ত্র করছে নানাভাবে ওই ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি নির্বাচন করতে। সেই নির্বাচনে দেশের মানুষ অংশ গ্রহণ করবেন না, কোনো দল অংশ গ্রহণ করবে না। সেই নির্বাচন যদি আওয়ামী লীগ জোর করে করে তাহলে সেই নির্বাচন থেকে তাদের বিদায় নিতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যে বাজেট আপনারা দিয়েছেন, সেই বাজেটের সাথে জনগনের কোনো সম্পর্ক নেই। এই বাজেটে আপনারা জনগণের পকেট কেটে করের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছেন। এই সরকার একটা অনৈতিক সরকার যার কোনো বৈধ্যতা নেই, তারা আজকে বাজেট দিয়ে বাড়তি করের চাপ সৃষ্টি করেছে। এই বাজেট বাস্তবায়ন আমরা অসম্ভব বলে মনে করি।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীনের সভাপতিত্বে ও সম্পাদক মাহবুবউদ্দিন খোকনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, সিনিয়র আইনজীবী তৈমুর আলম খন্দকার, সানাউল্লাহ মিয়া, বদরুদ্দোজা বাদল, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, শাহ খসরুজ্জামান, রুহুল কুদ্দুস কাজল, এসএম কামালউদ্দিন, ফাহিমা নাসরিন মুন্নী, ঢাকা আইনজীবী সমিতির বোরহানউদ্দিন, খোরশেদ আলম, ইকবাল হোসেন, খোরশেদ মিয়া আলম, ওমর ফারুক ফারুকী, মুক্তার কবির খান, আজিজুল হক বাচ্চু, নারায়নগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সাখাওয়াত হোসেন খান প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, সিনিয়র নেতা খন্দকার মাহবুব হোসেন, শাহজাহান ওমর, মীর মো. নাসির, এজে মোহাম্মদ আলী, আবদুস সালাম, নাজমুল হক নান্নু, আফজাল এইচ খান, ফজলুল হক মিলনসহ আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।