ভেজাল বীজ ও কৃষি কর্মকর্তাদের উদাসীনতায় হুমকির মুখে সাতক্ষীরার পাট চাষ

ভেজাল বীজ ও কৃষি কর্মকর্তাদের উদাসীনতায় হুমকির মুখে সাতক্ষীরার পাট চাষ  আবু সাইদ বিশ্বাস, সাতক্ষীরা: ভেজাল ও নিম্নমানের বীজ, প্রকৃতির বিরূপ প্রভাব এবং স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের উদাসীনতার কারণে সাতক্ষীরায় পাটের ক্ষেত এখন হুমকির মুখে। পাট নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছে পাট চাষীরা। বেশির ভাগ পাট ক্ষেত পোকার আক্রমণে আক্রান্ত হয়েছে। মাঠের পর মাঠ পাট ক্ষেত হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে। এতে কয়েকশ কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করছে পাটচাষীরা।

চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরায় ১১ হাজার ৬৩০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৭ হাজার ৩৪৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। তবে জেলার কৃষকরা বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা না করে পানি সেচ দিয়ে পাটের আবাদ করছে অনেক কৃষক।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলার সদর উপজেলায় ৪ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমি আবাদের লক্ষ্যমাত্রায় চাষ হয়েছে ৪ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে। কলারোয়া উপজেলায় ৩ হাজার ৯০ হেক্টর জমি আবাদের লক্ষ্যমাত্রায় চাষ হয়েছে ১ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে। তালা উপজেলায় ৩ হাজার ৫০ হেক্টর জমি আবাদের লক্ষ্যমাত্রায় চাষ হয়েছে ১ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে। দেবহাটা উপজেলায় ১৮৫ হেক্টর জমি আবাদের লক্ষ্যমাত্রায় চাষ হয়েছে ৩৫ হেক্টর জমিতে। আশাশুনি উপজেলায় ১২০ হেক্টর জমি আবাদের লক্ষ্যমাত্রায় চাষ হয়েছে ১১০ হেক্টর জমিতে। শ্যামনগর উপজেলায় ০১ হেক্টর জমি আবাদের লক্ষ্যমাত্রায় কোন আবাদ হয়নি। এবং কালিগঞ্জ উপজেলায় ১৮৫ হেক্টর জমি আবাদের লক্ষ্যমাত্রায় চাষ হয়েছে ৩৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, এখানে মৌসুমের শুরুতে বৈরি আবহাওয়ার কারণে বেগ পেতে হয় চাষিদের। আবার প্রচন্ড গরমের কারণে আবাদ কিছুটা বিলম্বে হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা পুরোপুরি অর্জন সম্ভব হয়নি। তবে চাষীরা ব্যক্তিগত যেভাবে নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে মাঠে পরিচর্যায় ব্যস্ত তাতে উৎপাদনের চূড়ান্তভাবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে কৃষি কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করেন। এদিকে পাট চাষীরা জানিয়েছেন, বর্তমানে তরা পাটের চারার পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার তুজলপুর কৃষক ক্লাবের সভাপতি ইয়ারব হোসেন জানান, তিনি চলতি মৌসুমে এক বিঘা জমিতে তোষা জাতের পাট লাগিয়েছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে তার ক্ষেতে ৮ থেকে ১০ মণ পাট উৎপাদন হবে বলে তিনি প্রত্যাশা করছেন।

তিনি আরও জানান, বর্তমানে তার এলাকার অধিকাংশ ক্ষেতে পাটের পাতা কুকড়ে যাচ্ছে এবং বিছা পোকায় পাতা খেয়ে ফেলছে। এতে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়ায় প্রত্যাশা পূরণে সংশয় দেখা দিয়েছে।

এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী আব্দুল মান্নান বলেন, সাতক্ষীরায় খুব ভাল মানের পাট উৎপাদন হয়। এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে, কৃষকদের করণীয় সম্পর্কে নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আশা করছি, উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।

সবুজের পরিবর্তে পাট ক্ষেতের রং হয়ে গেছে লালচে ও হলুদ বর্ণের। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত এসব চাষীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। অথচ স্থানীয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কোন খোঁজ খবর রাখেন না বলে একাধিক কৃষকের অভিযোগ।

উপজেলার পাটকেলঘাটা গ্রামে বসবাসকারী পাট চাষী আবুল কালাম গাজী (৪৫) জানায়, সে ও তার ভাইয়েরা এবার সাড়ে তিন বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছে। পাটের বয়স দেড় থেকে দুই মাস পেরিয়ে গেলেও লম্বা হয়েছে মাত্র দেড়-দুই ফুট। পানির অভাবে ক্ষেতের পাটের আগা পুড়ে গিয়ে মাটির দিকে নুয়ে পড়েছে। হাতের কাছে সেচ সুবিধা ব্যবস্থা না থাকায় তারা পাটের আশা ভরসা একরকম ছেড়েই দিয়েছে। তাদের প্রতি বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে বীজ বপন, আগাছা পরিষ্কারসহ এ পর্যন্ত প্রায় ৭ হাজার টাকা খরচ দাঁড়িয়েছে। উপজেলার জুজুখোলা গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমান (২৯) জানায়, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ৫ বিঘা জমিতে প্রথমে পানি সেচ দিয়ে পাট চাষ করেছে। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় আগা পুড়ে দুলা (গুটিয়ে) হয়ে মাটির দিকে দুমে পড়েছে। এছাড়া পাট চাষী

শেখ মতিয়ার রহমান জানান, পাটের দাম কম কি বেশি সেটা ভাবিনি। পাটখড়ি সহ সাংসারিক প্রয়োজনে পাট চাষ করতে হয় তাই করেছি। আড়াই বিঘা জমিতে পাট চাষ করার পর খরচে ত্রুটি করিনি। কিন্তু প্রচ- গরম আর বর্ষা না হওয়ায় পাটের আগা মরে শুকিয়ে গেছে। কিছু জমিতে সেচও দিয়েছিলাম। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। বরং পাট ক্ষেতের রং লালচে হয়ে গেছে। এ ধরনের অভিযোগ এখানকার শত শত দরিদ্র  ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের।

Please follow and like us:

Check Also

ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সন্তান নিয়ে ট্রেনের নিচে নারীর ঝাঁপ: মারা যান মা-ছেলে

হাজীগঞ্জে এক বছরের সন্তান আব্দুর রহমানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেন মা তাহমিনা (২৩)। এতে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।