বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই আবেদনের উপর শুনানি শুরুর পর বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও মো. আতাউর রহমান খানের বেঞ্চে এই আদেশ দেয়।
নোটিশ ছাড়াই রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উচ্ছেদ অভিযানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সকালে ওই রিট আবেদন করেন মওদুদ।
সেই সঙ্গে গুলশান এভিনিউয়ের ১৫৯ নম্বর হোল্ডিংয়ে ওই বাড়ির নকশায় কোনো ধরনের পরিবর্তন না করা এবং পজেশন ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য দুটি অন্তর্বতীকালীন আদেশও চেয়েছেন তিনি।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পাশাপাশি রাষ্ট্রকেও এই রিটে বিবাদী করা হয়েছে।
মওদুদের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন এ জে মোহাম্মদ আলী, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ও মাহবুব উদ্দিন খোকন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা।
বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ চার দশক ধরে গুলশানের ওই বাড়িতে বসবাস করে আসছিলেন। আইনি লড়াইয়ে তিনি হেরে যাওয়ায় বুধবার তার মালপত্র সরিয়ে দিয়ে ওই বাড়ির দখল বুঝে নেয় রাজউক।
বিএনপি নেতা মওদুদ আহমেদ দাবি করেন, আদালত ওই বাড়ি রাজউককে দেয়নি। তিনি বিরোধী দলের রাজনীতি করেন বলেই এভাবে বিনা নোটিশে তাকে বাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার অলিউর রহমান বলেন, “এটা তো আমাদের সম্পত্তি। আদালত আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছে। এটা কি উনার সম্পত্তি? নোটিশ দেব কেন?”
রাজউকের এক কর্মকর্তা জানান, এক বিঘা ১৩ কাঠা ১৪ ছটাক জমির উপর ওই বাড়ি। গুলশানের ওই এলাকায় প্রতি কাঠা জমির দাম মোটামুটি ১০ কোটি টাকা। সেই হিসেবে পুরো সম্পত্তির দাম তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ কোটি টাকায় পৌঁছায়।
জানা যায়, ওই বাড়ির প্রকৃত মালিক ছিলেন পাকিস্তানি নাগরিক মো. এহসান। ১৯৬০ সালে তৎকালীন ডিআইটির কাছ থেকে তিনি ওই বাড়ির মালিকানা পান।
১৯৬৫ সালে বাড়ির মালিকানার কাগজপত্র এহসানের স্ত্রী অস্ট্রিয়ার নাগরিক ইনজে মারিয়া প্লাজের নামে নিবন্ধন করা হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এহসান স্ত্রীসহ ঢাকা ত্যাগ করেন। তারা আর ফিরে না আসায় ১৯৭২ সালে এটি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত হয়।
ওই বছরই মওদুদ ওই বাড়ির দখল নেন। কিন্তু ইনজে মারিয়া প্লাজের মৃত্যুর পর ‘ভুয়া’ আমমোক্তারনামা তৈরি করে মওদুদের ভাই মনজুর আহমদের নামে ওই বাড়ির দখল নেওয়া হয়েছে অভিযোগ এনে দুদক মামলা করলে চার বছর আগে শুরু হয় আইনি লড়াই।
মওদুদ সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত গেলেও রায় তার বিপক্ষে যায়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আপিলের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করলেও গত রোববার তা খারিজ হয়ে যায়। ফলে মওদুদের বাড়ি ছাড়া অনিবার্য হয়ে পড়ে।