প্রকাশ : ১২ জুন ২০১৭, ১১:৫৩:০১
কাতার সংকট নতুন মোড় নিয়েছে। মুসলমানদের পবিত্র মসজিদ কাবা ঘরে কাতারের নাগরিকদের প্রবেশে বাধা দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কাতারের সঙ্গে সৌদি আরবের এ সংকটকে সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করেছে মধ্যপ্রাচ্যে সৌদির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ইরান। কাতারের ওপর সৌদির অবরোধ ও খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ার সুযোগে দেশটিতে জাহাজ ও বিমানে করে খাদ্য পাঠানো শুরু করেছে ইরান।
এদিকে কাতার সংকট যুদ্ধে মোড় নিতে পারে বলে হুশিয়ারি দিয়েছে জার্মানি। কাতারের সঙ্গে প্রতিবেশী উপসাগরীয় দেশগুলোর কূটনৈতিক সংকটের জেরে কাতারের নাগরিকদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। দোহাভিত্তিক পত্রিকা আল শারক জানিয়েছে, দেশটির ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশন (এনএইচআরসি) কাতার থেকে হজের উদ্দেশে সৌদি আরবে যাওয়া নাগরিকদের কাছ থেকে এমন অনেক অভিযোগ পেয়েছে।
এনএইচআরসির প্রধান আলী বিন আসমাইখ আল মাররি এ ঘটনাকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কনভেনশন অনুসারে মানুষের ধর্মচর্চার অধিকারের চরম লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছেন। খবর আলজাজিরার। এ ঘটনার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে সংস্থাটি।
এছাড়া কাতারের ওপর চাপিয়ে দেয়া সৌদি, বাহরাইন ও আরব আমিরাতের অবরোধের ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে কাতারের মানবাধিকার সংস্থাটি। সংস্থাটি জানিয়েছে, আরব রাষ্ট্রগুলোর আরোপিত অবরোধে ক্ষতিগ্রস্ত হাজার হাজার নাগরিকের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছে তারা।
এখন এ ক্ষতিপূরণের জন্য এ তিনটি দেশের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেবে সংস্থাটি।
এনএইচআরসি শনিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, এ লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক একটি আইনি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয়ার কাজ শুরু করেছে তারা। কাতারের বিরুদ্ধে ওই তিনটি দেশের অবরোধকে ‘সমন্বিত শাস্তি’ ও ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ’ হিসেবে অভিহিত করেছে সংস্থাটি। এ অভিযোগ আসার কয়েক দিন আগে কাতারবিরোধী তৎপরতার অংশ হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন সামাজিক মাধ্যমে এ ইস্যুতে কাতারের প্রতি ‘সহমর্মিতা’ প্রদর্শনকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে শাস্তির ঘোষণা দেয়। এমনকি কাতারের প্রতি তাদের কোনো নাগরিক ‘সহানুভূতি’ জানালেও তাকে জেল-জরিমানা করা হবে।
কাতারের ওপর অবরোধের অংশ হিসেবে খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে প্রতিবেশী দেশ সৌদি আরব। তবে সংকটময় এ পরিস্থিতিতে কাতারে পাঁচটি বিমানভর্তি খাদ্যসামগ্রী পাঠিয়েছে ইরান। কাতারের প্রয়োজনীয় খাদ্যের ৪০ শতাংশ আসে কাতারের সঙ্গে সৌদির স্থলসীমান্ত দিয়ে। তবে সীমান্ত এখন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। খবর এএফপির।
ইরানের বিমান সংস্থা ইরান এয়ারের এক মুখপাত্র শাহরুখ নৌসাবাদি বলেন, ‘পাঁচটি বিমানবোঝাই ফল ও সবজি কাতারে পাঠানো হয়েছে। প্রতিটি বিমানে ৯০ টন করে খাবার রয়েছে। আরও একটি বিমান পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।’ এছাড়া তিনটি জাহাজবোঝাই ৩৫০ টন খাবার কাতারের উদ্দেশে রওনা হয়েছে। ইরানের কর্মকর্তার বরাত দিয়ে তাসনিম নিউজ এজেন্সি এ খবর দিয়েছে। যত দিন খাবারের চাহিদা থাকবে, তত দিন কাতারে খাবার পাঠানো হবে বলেও জানান শাহরুখ। কাতারের বিমানগুলোর জন্য ইরান তার আকাশপথও উন্মুক্ত করে দিয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। সৌদি আরব, বাহরাইন ও আরব আমিরাত কাতারের জন্য তাদের আকাশ বন্ধ করে দিয়েছে।
কাতার সংকট শেষ পর্যন্ত যুদ্ধে মোড় নিতে পারে -জার্মানি : জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গ্যাব্রিয়েল হুশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, কাতার ও উপসাগরীয় আরব দেশগুলোর মধ্যকার বর্তমান অচলাবস্থা শেষ পর্যন্ত যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। জার্মানির জিতাং পত্রিকাকে এক সাক্ষাৎকারে গ্যাব্রিয়েল এসব কথা বলেন। গ্যাব্রিয়েল বলেন, কাতার ও প্রতিবেশী দেশগুলোর এ সংকট সমাধানের সুযোগ এখনও রয়েছে। এ সুযোগ কাজে না লাগালে যুদ্ধের হুমকি অনেক বেড়ে যাবে। চলমান কাতার সংকটের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি চলতি সপ্তাহে সৌদি আরব, কাতার ও তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছি এবং ইরান ও কুয়েতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছি। আমি জানি বিষয়টি কতটা মারাত্মক পর্যায়ে রয়েছে। তবে পরিস্থিতি উন্নতির জন্য একটা সম্ভাবনাও রয়েছে।
এদিকে আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিভিন্ন দিক নিয়ে ফোনালাপ করেছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন। রয়টার্স জানায়, কাতারের বিরুদ্ধে চলমান সংকট, ইউক্রেন পরিস্থিতিসহ রুশ-মার্কিন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নানা দিক নিয়ে শনিবার আলাপ করেন এ দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা তাস এ তথ্য জানিয়েছে। কাতারের ওপর থেকে অবরোধ শিথিল করতে সৌদি আরবসহ উপসাগরীয় দেশগুলোর প্রতি টিলারসনের আহ্বান জানানোর ঠিক পরেই রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এ টেলিফোন আলাপ হয়।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, কাতার নিয়ে চলমান সংকট নিরসনে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যেতে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র আহ্বান জানিয়েছে। সের্গেই লাভরভ বলেন, সৌদি আরবসহ আরববিশ্বের ছয়টি দেশ কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করায় রাশিয়া গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এ পরিস্থিতিতে সংকট নিরসনে কাতারের উপসাগরীয় প্রতিবেশীরা আগ্রহী হলে মস্কো মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতে তৈরি আছে।