ক্রাইমবার্তা রিপোট:চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানে পাহাড় ধসে মাটি চাপায় হতাহতের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বর্তমান সরকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় আধুনিক প্রস্তুতি গ্রহণে ব্যর্থ। আসলে তারা দেশের উন্নয়ন নয়, সর্বদা তারা ব্যস্ত থাকে লুটপাটের মাধ্যমে নিজেদের আর্থিক উন্নয়নে। সেজন্য দেশের প্রাকৃতিক ও মানবিক দুর্যোগে প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরে আবারো প্রমাণিত হলো- ‘আওয়ামী লীগের কোনো মানবিক মুখমন্ডল নেই।’ দেশকে তারা পরিকীর্ণ মাৎস্যন্যায়ে ঠেলে দিয়েছে। এছাড়া স্থানীয় প্রশাসনের অবহেলায় আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে হাজার হাজার উপদ্রুত মানুষকে আশ্রয় পাচ্ছে না। সেখানে এখনো কোনো ত্রাণ পৌঁছেনি। সেখানকার অবস্থা ক্রমাগতভাবে বেহাল হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
আজ বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, উন্নয়ন একটি সামগ্রিক বিষয়। প্রাকৃতিক বিপর্যয় তাৎক্ষণিক ও সূচারুভাবে মোকাবেলা করে মানুষের প্রাণ বাঁচানোর মতো আধুনিক দক্ষ উদ্ধারবাহিনী তৈরী করাও উন্নয়নের অংশ। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্ভাবনায় এর প্রি ও পোস্ট এ্যাফেক্ট উপলব্ধি করে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করাও উন্নয়নের অংশ। কিন্তু সরকার এক্ষেত্রে ব্যর্থ।
রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এসময় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুস সালাম, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব উন নবী খান সোহেল, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, মো: মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে রিজভী বলেন, কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ী বন্যায় এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত খবরে চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানে পাহাড় ধ্বসে মাটি চাপায় নিহত হয়েছেন ১৩১ জন, মৃত্যুসংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আহত হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। পাহাড়ী বানে বাঁধ ভেঙ্গে পানিতে ভেসে যাওয়া অনেক মানুষের এখনো কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। সড়কের ওপর ধ্বসে পড়া পাহাড়ের মাটি সরাতে গিয়ে মাটিচাপায় নিহত হয়েছেন দুই কর্মকর্তাসহ ৪ সেনা সদস্য। হাজার হাজার মানুষ অসহায় অবস্থায় বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়ে কোনোমতে জীবন বাঁচিয়ে রেখেছে।
তিনি বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের অবহেলায় আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে হাজার হাজার উপদ্রুত মানুষকে আশ্রয় পাচ্ছে না। সেখানে এখনো কোন ত্রাণ পৌঁছেনি। সেখানকার অবস্থা ক্রমাগতভাবে বেহাল হচ্ছে। বর্তমান ক্ষমতাসীনরা মুখে তুবড়ি ছুটিয়ে উন্নয়নের কথা প্রচার করে। কিন্তু চট্টগ্রাম, বান্দরবান, রাঙ্গামাটিতে দু’দিনের প্রবল বর্ষণে মাটি চাপায় অসংখ্য মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে এজন্যই যে সেসব এলাকার অবকাঠামোগত কোনো উন্নয়নই হয়নি। ওইসব এলাকায় উন্নত রাস্তাঘাট নেই। নেই বিদ্যুৎ।
সরকারের দুর্যোগ মোকাবিলা প্রস্তুতির সমালোচনা করে রিজভী বলেন, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্ভাবনায় আগাম বার্তা জানানোর কোনো আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নেই, ল্যান্ডস্লাইডকে মোকাবিলা করে বিপন্ন মানুষকে উদ্ধারের জন্য নেই কোনো উন্নতমানের উদ্ধার-টিম কাঠামো। সেখানে সম্ভাব্য ল্যান্ডস্লাইড এলাকাগুলো এড়িয়ে রাস্তাঘাট ও লোকবসতি তৈরী হয়নি বলেই এই ভারী বর্ষণে পাহাড় ধ্বসে এতো মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার প্রশাসন যেমন অকর্মণ্য তেমনি দুর্নীতিগ্রস্ত। দলীয় চেতনায় সাজানো প্রশাসনের দ্বারা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে উপদ্রুত মানুষকে উদ্ধারে কোনো আন্তরিক উদ্যোগ থাকে না। বৃহত্তর চট্টগ্রামে সেই একই অবস্থা বিরাজমান। কারণ সর্বত্র ক্ষমতা-আশ্রীত গুন্ডা-মাস্তানের দাপট দিয়েই বর্তমান সরকার ক্ষমতার মসনদ আগলিয়ে রাখতে চায়।
বিএনপির সিনিয়র এই নেতা বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতবিক্ষত দুর্গত মানুষ এবং অসংখ্য লাশের স্তুপকে ডিঙ্গিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী এখন আনন্দভ্রমনে সুইডেন সফরে বেরিয়েছেন। ঠিক যেমনিভাবে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ আঘাত হানার সময় তিনি অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা সফর করছিলেন। দেশে কোনো দুর্যোগ হলে অন্য দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা বিদেশ সফর বাতিল করে নিজ দেশে উপদ্রুত মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়ান। অবশ্য বিপদের সময় নিজ দেশের জনগণকে ফেলে চলে যাওয়ায় আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য ও ইতিহাস। ৭১ সালেও তারা সেই ঐতিহ্যই রক্ষা করেছেন। ১/১১ এর সময়ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সেই ট্র্যাডিশন সমানে রক্ষা করেছেন।
তিনি বলেন, এতো বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে লাশের সংখ্যা যখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে তখন সরকার প্রধান ভ্রুক্ষেপহীন, নিরুদ্বেগে বিদেশ সফরে বেরিয়েছেন। সরকারের জনভিত্তি ধসে গেছে বলেই জনগণের বিপদের সময় নির্লজ্জ আচরণ করছেন ক্ষমতাসীনরা। এখন বিদেশীদের মন রক্ষার জন্যই প্রধানমন্ত্রী বিদেশে ছোটাছুটি করছেন। বিদেশের যেসব কনফারেন্সে সচিব পর্যায়ের বা প্রতিমন্ত্রী পর্যায়ের লোক যাওয়ার কথা সেখানে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত হচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, জনগণের প্রতি বর্তমান সরকারের বৈরী মনোভাব সর্বজনবিদিত। অন্তহীন ক্ষমতালিপ্সার কারনেই জনগণের বদলে বন্দুকের উপরই ভরসা এই সরকারের। আসলে গণতন্ত্র, সংসদীয় গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, স্বচ্ছ নির্বাচন ও আইনের শাসনের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আজন্ম বিতৃষ্ণা। তাই দেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগে ইমার্জেন্সির সময়ও সরকার প্রধানের বিদেশ সফর চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের উপদ্রুত মানুষ, বিধ্বস্ত জনপদ ও অসংখ্য লাশকে উপহাস করারই সামিল। প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের তেমন কোনো কূটনৈতিক তাৎপর্যও নেই।
রিজভী বলেন, চট্টগ্রাম পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় ভূমিধস, পাহাড় ধসে মাটিচাপায় নিহত মানুষ, হতভাগ্য মানুষদের প্রতি সরকার প্রধানসহ সরকারের অবজ্ঞায় দেশবাসী ক্ষুদ্ধ। মানুষের ক্ষোভ ভষ্মাচ্ছাদিত বহ্নির মতো ধিকিধিকি জ্বলতে থাকা জনরোষ চরম প্রজ্জলন শক্তি নিয়ে আছড়ে পড়ার অপেক্ষায়। দেশের শোক-সঙ্কটে অযৌক্তিক বিদেশভ্রমণ হবুচন্দ্র রাজারই কীর্তিকলাপ। আমি আবারো বিএনপির পক্ষ থেকে বৃহত্তর চট্টগ্রামে প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানববিপর্যয়ে হতাহতের ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করছি, যারা নিহত হয়েছেন আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করছি, আহতদের আশু সুস্থতা কামনা করছি।
এছাড়া বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীকে যার যে সামর্থ আছে তা নিয়ে উপদ্রুত এলাকায় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আহবান জানান রুহুল কবির রিজভী।