. জোটের চাপের মুখে থাকা কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার সম্প্রচার অব্যাহত রাখার পক্ষে এবার সরব হয়েছে বিশ্বের শীর্ষ সংবাদমাধ্যমগুলোর জোট ডিজিটাল কনটেন্ট নেক্সট। বিবিসি, গার্ডিয়ান, নিউ ইয়র্ক টাইমস এবং ওয়াশিংটন পোস্টের মতো শীর্ষ সংবাদমাধ্যমগুলো ওই জোটভূক্ত।
সোমবার এক বিবৃতির মাধ্যমে ডিজিটাল কনটেন্ট নেক্সট আল-জাজিরার প্রতি সংহতি প্রকাশ করে। সৌদি জোটের ভূমিকাকে আজ-জাজিরার কণ্ঠরোধের মধ্যে দিয়ে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের পায়তারা হিসেবে দেখছেন তারা।
এর আগে কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, রিপোটার্স উইদাউট বর্ডারস, নিউ ইয়র্ক টাইমস ও দ্য গার্ডিয়ানও আল-জাজিরা বন্ধ করে দিতে কাতারের উপর চাপ প্রয়োগের নিন্দা জানায়।
গত ৫ জুন জঙ্গিবাদে সমর্থন দেওয়ার অভিযোগে কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেয় মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ। ২৩ জুন সৌদি নেতৃত্বাধীন চার আরব দেশের পক্ষ থেকে অবরোধ প্রত্যাহারে ১৩টি শর্ত দেওয়া হয় কাতারকে। এর একটি শর্ত হলো আল-জাজিরা বন্ধ করে দেওয়া।
ফক্স নিউজ, এবিসি নিউজ, আল-জাজিরা, ব্লুমবার্গ, বিজনেস ইনসাইডার, সিএনবিসি, ডিসকোভারি, ফোর্বস, ইসপিএন, ফরেন পলিসি, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, এনপিআর, স্লেট, ইউএসএ টুডের মতো শীর্ষ সংবাদমাধ্যমগুলোও রয়েছে ওই সংগঠনে।
বিবৃতিতে তারা জানায়, ‘আমরা সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকের স্বাধীনতাকে সমর্থন করি। সাংবাদিক বা সংবামাধ্যমের কণ্ঠরুদ্ধ করা এর পরিপন্ধী।’
আল জাজিরা বিশ্বের প্রভাবশালী প্রধান ধারার সংবাদমাধ্যমগুলোর একটি। কাতার ও প্রতিবেশী দেশগুলোর দীর্ঘদিনের বিবাদের উৎস এটি। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অভিযোগ, আল জাজিরা পক্ষপাতপূর্ণ সংবাদ উপস্থাপন করে এবং আঞ্চলিকভাবে সমস্যা তৈরি করে। এছাড়া এ সংবাদমাধ্যমটি আরব দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ ইস্যু নিয়েও নাক গলায় বলে অভিযোগ করে থাকে তারা। অবশ্য, বরাবরই সেই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে আল জাজিরা। এবার কাতারের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অংশ হিসেবে সেই সংবাদমাধ্যমটি বন্ধ করে দেওয়ার শর্ত দিয়েছে সৌদি আরব, মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইন।
অবরোধ প্রত্যাহারে কাতারকে সৌদি জোট আল-জাজিরা বন্ধের যে শর্ত দিয়েছে, তাকে ‘মিডিয়ার বহুমুখী কণ্ঠস্বরের প্রতি আঘাত’ হিসেবে দেখছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন। কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ কথা জানা গেছে।
আল-জাজিরা বন্ধে কাতারকে দেওয়া সৌদি জোটের চাপের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে বিশ্ব। জাতিসংঘসহ বিশ্বের প্রধান ধারার ৮০টিরও বেশি সংবাদমাধ্যম অবস্থান নিয়েছে কাতারভিত্তিক ওই সংবাদমাধ্যমের পক্ষে। মানবাধিকার ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় সোচ্চার সংগঠনগুলোও সরব হয়েছে ওই অপতৎপরতার বিরুদ্ধে। সরব হয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে থাকা মুক্তমতের পক্ষের মানুষেরা। আল-জাজিরার সম্প্রচার হুমকির মুখে পড়াকে তারা সংবাদমাধ্যমের ওপর আঘাত হিসেবে দেখছেন। একে আরব দুনিয়ার সংবাদের বৈচিত্র্য ও ভিন্নমত দমনের চেষ্টা বলেও অভিহিত করেছেন তারা।
গত ৫ জুন জঙ্গিবাদে সমর্থন দেওয়ার অভিযোগে কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেয় মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ। ২৩ জুন সৌদি নেতৃত্বাধীন চার আরব দেশের পক্ষ থেকে অবরোধ প্রত্যাহারে ১৩টি শর্ত দেওয়া হয় কাতারকে। এর একটি শর্ত হলো আল-জাজিরা বন্ধ করে দেওয়া।
আরব দুনিয়ার পরাধীন সংবাদমাধ্যমের বাস্তবতায় ১৯৯৬ সালে আল জাজিরার আবির্ভাব। কাতারের অর্থায়নে পরিচালিত এই সংবাদমাধ্যমটি রাষ্ট্রীয় গণসংযোগের বিপরীতে জনগুরুত্বপূর্ণ খবর প্রকাশ করতে থাকে জন্মলগ্ন থেকে। একমাত্র কাতার ছাড়া গোটা আরব বিশ্বের স্বৈরশাসকদের তারা উন্মোচিত করেন জনতার সামনে। ২০০১ সালেই বিপুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে সংবাদমাধ্যমটি। ওয়াশিংটন পোস্টের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, সৌদি নেতৃত্বাধীন আরব জগতে সংবাদমাধ্যমে যে একমুখী কণ্ঠস্বর প্রতিধ্বনিত হতো, আল-জাজিরা সেই অচলায়তন ভেঙে নিয়ে ভিন্ন ধারায় খবর পরিবেশনের মধ্য দিয়ে জনপ্রিয় হতে থাকে। ইসলামী শরীয়াকে আলোচনায় নিয়ে আসে সংবাদমাধ্যমটি। যেটা আরব দুনিয়ার অন্যান্য মিডিয়ায় আগে কখনও আলোচিত হয়নি।
অবরোধ প্রত্যাহারে কাতারকে সৌদি জোট আল-জাজিরা বন্ধের যে শর্ত দিয়েছে, তাকে ‘মিডিয়ার বহুমুখী ও অন্য কণ্ঠস্বরের প্রতি আঘাত’ হিসেবে দেখছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন। সংস্থাটির মত প্রকাশ ও বাকস্বাধীনতা বিষয়ক দূত ডেভিড কায়ি বলেছেন, কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটি বন্ধের শর্ত ‘মিডিয়ার স্বাধীনতার ক্ষেত্রে ভয়াবহ হুমকি’। তিনি ‘আল-জাজিরা বন্ধের দাবি থেকে সৌদি জোটকে সরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানান। আরব দুনিয়ায় মিডিয়ার ওপর সেন্সরশিপ আরোপের প্রচেষ্টা রুখে দেওয়া এবং সেখানে স্বাধীন মিডিয়া উদ্যোগকে উৎসাহিত করারও তাগিদ দিয়েছেন কায়ি।
সরব হয়েছে বিশ্বের শীর্ষ সংবাদমাধ্যমগুলোর জোট ডিজিটাল কনটেন্ট নেক্সট। বিবিসি, গার্ডিয়ান, নিউ ইয়র্ক টাইমস এবং ওয়াশিংটন পোস্টের মতো শীর্ষ সংবাদমাধ্যমগুলো ওই জোটভূক্ত। ফক্স নিউজ, এবিসি নিউজ, আল-জাজিরা, ব্লুমবার্গ, বিজনেস ইনসাইডার, সিএনবিসি, ডিসকোভারি, ফোর্বস, ইসপিএন, ফরেন পলিসি, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, এনপিআর, স্লেট, ইউএসএ টুডের মতো শীর্ষ সংবাদমাধ্যমগুলোও রয়েছে ওই সংগঠনে।
সোমবার এক বিবৃতির মাধ্যমে ডিজিটাল কনটেন্ট নেক্সট আল-জাজিরার প্রতি সংহতি প্রকাশ করে। সৌদি জোটের ভূমিকাকে আজ-জাজিরার কণ্ঠরোধের মধ্যে দিয়ে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের পায়তারা চলছে বলে মনে করছে তারা। বিবৃতিতে তারা জানায়, ‘আমরা সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকের স্বাধীনতাকে সমর্থন করি। সাংবাদিক বা সংবামাধ্যমের কণ্ঠরুদ্ধ করা এর পরিপন্থী।’
আল-জাজিরার জনপ্রিয়তা তুঙ্গে ওঠে ইরাক যুদ্ধের সময়ে। সেই সময় বিবিসি ও সিএনএন-এর মতো পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলো যখন মিথ্যা খবর পরিবেশনে অভিযুক্ত হয়েছে বিশ্বজুড়ে, বিশ্ববাসী তখন আল-জাজিরায় চোখ রেখেছে প্রকৃত ঘটনা জানতে। এর কণ্ঠরোধের অপচেষ্টায় উদ্বেগ জানিয়েছে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় সোচ্চার অলাভজনক সংগঠন রিপোটার্স উইদাউথ দ্য বর্ডার। কাতারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে দেওয়া সৌদি জোটের শর্ত নিয়ে বলতে গিয়ে ওই সংগঠনের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা বিষয়ক প্রধান আলেকসান্দ্রা এল খাজেন বলেন, ‘যদি শর্ত পূরণ করতে সত্যিই আল-জাজিরা বন্ধ করে দেওয়া হয়, তবে তা হবে ভীষণ উদ্বেগজনক। প্যারিস থেকে তিনি আল-জাজিরাকে বলেন, ‘আরব দুনিয়ার মিডিয়ায় বৈচিত্র্য ও বহুস্বর রক্ষার বিপরীতে সেন্সরশিপসহ যাবতীয় প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে আমরা।’
প্রতিবাদে সামিল হয়েছে যুক্তরাজ্যের সাংবাদিকদের সংগঠন ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব জার্নালিস্টস। সংগঠনের প্রেসিডেন্ট টিম ডাওসন আল-জাজিরা বন্ধের প্রস্তাবকে সৌদি জোটের ‘ভয়াবহ দাবি’ বলে উল্লেখ করেছেন। সৌদি সরকারকে তিনি এই দাবি থেকে সরে আসার আহ্বান জানান।
আল-জাজিরার প্রতি সৌদি জোটের নাখোশ হওয়ার আরেক কারণ আরব বসন্ত। আরব জাগরণে আল-জাজিরার প্রশ্নাতীত ভূমিকা সৌদি জোটে থাকা স্বৈরাচারী সরকারগুলোকে ভীত করে তোলে। পাশাপাশি মিসরের স্বৈরতন্ত্রের পতন এবং মুহাম্মদ মুরসির ব্রাদারহুডের উত্থানের নেপথ্যে আল-জাজিরাকে দায়ী করা হয়। সাংবাদিকদের সুরক্ষায় কাজ করা বৈশ্বিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট-সিপিজে আল-জাজিরার বিরুদ্ধের পদক্ষেপকে ‘ভিন্নমত’দমনের অপচেষ্টা হিসেবে উল্লেখ করেছে। ‘আল-জাজিরাকে মধ্যপ্রাচ্যের কূটনীতির বলি বানানো’ হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের। এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত সব দেশের প্রতি তারা আহ্বান জানিয়েছেন, সংবাদমাধ্যমের প্রতি বৈরী অবস্থান থেকে সরে আসতে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বৈশ্বিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এক বিবৃতিতে আল-জাজিরার বিরুদ্ধে আনা সৌদি জোটের অভিযোগকে বানোয়াট আখ্যা দিয়েছে। সংস্থার মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের নির্বাহী পরিচালক সারাহ হুইটসন এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এটা নিছক দুর্বলচিত্তের এক সেন্সরশিপের বিস্তৃতি, নিজ নিজ দেশের জনগণের ওপর যা আরোপ করে রেখেছে সৌদি জোটে থাকা দেশগুলো।’
প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান তাদের এক সম্পাদকীয় ভাষ্যে আল-জাজিরা বন্ধের প্রস্তাবের নিন্দা জানিয়েছে। তাদের মতে, পুরনো ধারার একমুখী আরবীয় স্বরের বিপরীতে আল-জাজিরা ভিন্ন স্বর নিয়ে হাজির হওয়া এক মিডিয়া। আর নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর সম্পাদনা পরিষদের পক্ষ থেকে লেখা এক মতামতে বলা হয়েছে, ‘আল-জাজিরা বন্ধের পায়তারা একটি জোরালো কণ্ঠস্বরকে দমন করবার প্রচেষ্টা, যা জনগণকে ক্ষমতাসীনদের প্রতি প্রশ্নমুখর করে তুলতে পারে’।