রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আজ (২৪ জুলাই) বসেছিল চলচ্চিত্রবিষয়ক দেশের সবচেয়ে সম্মানজনক আসর ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’। ২০১৫ সালের সেরাদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। এবার আজীবন সম্মাননা যৌথভাবে পান অভিনেত্রী শাবানা ও সংগীতশিল্পী ফেরদৌসী রহমান।
পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে বক্তব্য দিতে এসে আপ্লুত হয়ে পড়েন একসময়ের তুমুল জনপ্রিয় অভিনেত্রী শাবানা।
বিশেষ কলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গের একটি স্মতিচারণ করতে গিয়ে এ অভিনেত্রীর চোখ সিক্ত হয়ে উঠে।
কান্না জড়ানো কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘এই তো সেদিন আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রথমবারের মতো দেখা করতে গিয়েছিলাম। মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী দু’হাতে আমাকে জড়িয়ে ধরেন। আমি জানি, তিনি যে সম্মান আমাকে সেদিন দিয়েছেন, তা সমস্ত শিল্পীর, শিল্পের। তিনি অসুস্থ পরিচালকের পাশে দাঁড়িয়েছেন।’
দীর্ঘদিন ক্যামেরার আড়ালে থাকা প্রবাসী শাবানা বক্তব্যের শুরুতে বলেন, ‘আমি যাদের জন্য শাবানা, আজকের এ পুরস্কার তাদের। আমাদের চলচ্চিত্র আজ সংকটে। কিন্তু যেকোনও সংকটের মাঝে লুকিয়ে থাকে সমাধান।
যখন আামাদের পাশে সবার প্রিয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আছেন তখন কোনও সংকটই থাকতে পারে না। প্রবাসে থাকলেও আমি জ্ঞাত হয়েছি। তিনি বাংলাদেশ সিনেমা ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট করেছেন। বিপুল অর্থের মাধ্যমে
বিএফডিসি আধুনিকয়ন করেছেন। জানতে পারি, তিনি ফোর-কে রেজুলেশনের প্রেজেক্টরের ব্যবস্থা করছেন। যেখানে বিশ্বের অনেক দেশে এখনও টু-কে রেজুলেশন ব্যবহার করা হয়। আমি তাকে সাধুবাদ জানাই।’
এদিকে, বিকাল সাড়ে চারটা থেকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত আসরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থেকে এই সম্মাননা প্রদান করেন।
এবারের আসরে সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কারসহ সর্বাধিক ৯টি বিভাগ জয়লাভ করেছে ‘বাপজানের বায়োস্কোপ’। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পে গৌরবোজ্জ্বল ও অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২৫টি বিভাগে শিল্পী ও কলাকুশলীদের মধ্যে পুরস্কার প্রদান করা হয়। এবার যুগ্মভাবে সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার পান ‘বাপজানের বায়োস্কোপ’ ও ‘অনিল বাগচীর একদিন’।
পুরস্কারপ্রাপ্তদের তালিকা-
শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র: যুগ্মভাবে ‘একাত্তরের গণহত্যা’ ও ‘বধ্যভূমি’
শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক: যুগ্মভাবে মোরশেদুল ইসলাম (অনিল বাগচীর একদিন) ও মো. রিয়াজুল মওলা রিজু (বাপজানের বায়োস্কোপ) ও
শ্রেষ্ঠ অভিনেতা প্রধান চরিত্র: যুগ্মভাবে মাহফুজ আহমেদ (জিরো ডিগ্রী) ও শাকিব খান (আরো ভালোবাসবো তোমায়) ও
শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী প্রধান চরিত্র: জয়া আহসান (জিরো ডিগ্রী)
শ্রেষ্ঠ অভিনেতা পার্শ্ব চরিত্র: গাজী রাকায়েত (অনিল বাগচীর একদিন)
শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পার্শ্ব চরিত্র: তমা মির্জা (নদীজন)
শ্রেষ্ঠ অভিনেতা/অভিনেত্রী খল চরিত্র: ইরেশ যাকের (ছুঁয়ে দিল মন)
শ্রেষ্ঠ শিশু শিল্পী: যারা যারিব (প্রার্থনা)। একই শাখায় একই ছবির জন্য বিশেষ পুরস্কার পাচ্ছেন প্রমিয়া রহমান।
শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক: সানী জুবায়ের (অনিল বাগচীর একদিন)
শ্রেষ্ঠ গায়ক: যুগ্মভাবে সুবীর নন্দী (তোমারে ছাড়িতে বন্ধু, চলচ্চিত্র- মহুয়া সুন্দরী) ও এস আই টুটুল (উথাল পাথাল জোয়ার, চলচ্চিত্র- বাপজানের বায়োস্কোপ)
শ্রেষ্ঠ গায়িকা: প্রিয়াংকা গোপ (আমার সুখ সে তো, চলচ্চিত্র- অনিল বাগচীর একদিন)
শ্রেষ্ঠ গীতিকার: আমিরুল ইসলাম (উথাল পাথাল জোয়ার, চলচ্চিত্র- বাপজানের বায়োস্কোপ)
শ্রেষ্ঠ সুরকার: এস আই টুটুল (উথাল পাথাল জোয়ার, চলচ্চিত্র- বাপজানের বায়োস্কোপ)
শ্রেষ্ঠ কাহিনিকার: মাসুম রেজা (বাপজানের বায়োস্কোপ)
শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার: যুগ্মভাবে মাসুম রেজা (বাপজানের বায়োস্কোপ) ও মো. রিয়াজুল মওলা রিজু (বাপজানের বায়োস্কোপ)
শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা: হুমায়ূন আহমেদ (অনিল বাগচীর একদিন)
শ্রেষ্ঠ সম্পাদক: মেহেদী রনি (বাপজানের বায়োস্কোপ)
শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক: সামুরাই মারুফ (জিরো ডিগ্রী)
শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক: মাহফুজুর রহমান খান (পদ্ম পাতার জল)
শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক: রতন কুমার পাল (জিরো ডিগ্রী)
শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জা: মুসকান সুমাইকা (পদ্ম পাতার জল)
শ্রেষ্ঠ মেকআপম্যান: শফিক (জালালের গল্প)