দিনটি ছিল রোববার। বান্দরবান সদর থেকে নিজ বাড়ি রুমা উপজেলার পাইন্দু ইউনিয়নের মংশৈপ্রু পাড়ায় আসছিল সিংমেহ্লা আর তার বোন সিংমেচিং। দুই বোনেরই বাড়ি পৌঁছানোর জন্য ছিল আকুল আবেদন।সিংমেহ্লা তার মা হ্লায়ই প্রু মারমাকে ফোন করে বলেছিল, ‘‘মা আমরা অনেক কাছে চলে এসেছি।সকাল থেকে কিন্তু কিছুই খায়নি। বাসায় এসেই খাব মা। মা দুপুরে খাবারের জন্য কি রান্না করছো? মা রান্না হয়ে গেছে?” এই বলে হঠাৎ করে ফোনটি কেটে যায়। আর কথা হয়নি মা মেয়ের।
এদিকে ভারী বর্ষণ। আকাশে ঘনঘটা মেঘ।চারদিকে গুমোটভাব। পাহাড়গুলো থেকেও আস্তে আস্তে মাটি ধসে পড়ছে। বৃষ্টির সঙ্গে হালকা বাতাস পরিবেশকে বিমূর্ত করে তুলেছে। হাতে থাকা ছাতাটিও যেন দিক-বিদিক ছোটাছুটি করছে। রুমাবাহী বাসটি ওয়াইজনশন এলাকার দলিয়ানপাড়া এলাকায় যাত্রীদের নামিয়ে দেয় এবং চালক জানায় সামনে আর যাওয়া যাবে না। ভাঙা সড়কটি হেঁটে পেরিয়ে আবারও বাস ধরতে হবে।
যাত্রীরা বাস থেকে নেমে হেঁটে ভাঙা সড়ক পার হতে লাগল। যাত্রীদের সঙ্গে থাকা সিংমেহ্লা ও হ্লায়ই চিং দুই বোন একসঙ্গে ভাঙা সড়ক পার হতে গেল। কিন্তু একটু পার হতে না হতেই হঠাৎ করে শত ফুট পাহাড়ের মাটি ধসে পড়ে মাটিতে তলিয়ে যায় পাঁচজন। তলিয়ে যায় সিংমেহ্লা ও হ্লায়ই চিং। ধসে পড়া মাটির গতি তাদের সবাইকে নিয়ে যায় কয়েকশ ফুট পাহাড়ি খাদে। যেখানে শুধু ঘন জঙ্গল আর প্রবল স্রোতের শব্দ শোনা যায়।
অপরদিকে দুই মেয়ের বাড়িতে আসার অপেক্ষায় বসে থাকা মা প্রতিবেশীদের কাছ থেকে শুনল দলিয়ান পাড়া এলাকায় পাহাড় ধসে পড়েছে। কয়েকজন মাটি চাপাও পরেছে। তাদের মধ্যে তার দুই মেয়েও আছে।আর এই কথা শুনতেই হাসিমাখা মুখ হয়ে গেল গুমোট। মুহূর্তেই স্বজোরে কান্নার আহাজারি। বলতে লাগলেন ‘আমার দুই মেয়ে আর খেতে আসলো না ? আর খাওয়া হলো না তাদের। ভগবান ওদেরকে কেন আমার বুক থেকে কেড়ে নিলা ?’
সিংমেহ্লা (১৭) বাঙ্গাহালিয়া খ্রিষ্টান মিশন থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়ে বেসরকারি সংস্থা ঢাকা আহছানিয়া মিশন সংস্থায় টিউটর হিসেবে কাজ করত আর সিংমেচিং (১৬) বান্দরবান সদরে সাঙ্গু উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
দুই মেয়ের মধ্যে সোমবার বিকেলে সিংমেহ্লা’র মরদেহ উদ্ধার করা গেলেও ছোট মেয়ে সিমেচিংর মরদেহ এখনও উদ্ধার করতে পারেনি দমকলবাহিনীর সদস্যরা। তবে রোববার দুপুরে বাঁশখালি উপজেলার সাঙ্গুর মোহনা থেকে নিখোঁজ মুন্নি বড়ুয়ার মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
এখনও রুমা’র পোস্ট মাস্টার জবিউল আলম, কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা গোপাল কুমার নন্দী ও পাইন্দু ইউনিয়নের মংশৈপ্রু পাড়াপ্রধানের মেয়ে সিংমেচিং মারমাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন বান্দরবান ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক ইকবাল হোসেন।