ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে পূর্ণাঙ্গ রায় দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে প্রশ্ন তোলার স্বাধীনতা নেই

উচ্চ আদালতে বিচারপতিদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের মধ্য দিয়ে ৯৬ অনুচ্ছেদের ছয়টি ধারা পুনর্বহাল করেছে সুপ্রিম কোর্ট। ফলে প্রধান বিচারপতি ও আপিল বিভাগের দুই সিনিয়র বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে বিচারপতি অপসারণের আবারো সুযোগ তৈরি হয়েছে।
71

মঙ্গলবার প্রকাশিত ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ বিষয়ে উল্লেখ করা হয়।

রায়ে আপিল বিভাগ বলেছে, বর্তমান ব্যবস্থায় জাতীয় সংসদ ও প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ সংসদ সদস্যদের একটি দলের (গ্রুপ) হাতে। এ ব্যবস্থায় দলীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে সংসদে প্রশ্ন তোলার স্বাধীনতা নেই কোনো সংসদ সদস্যের। এমনকি তার দল যদি কোনো ভুল সিদ্ধান্ত বা নিদের্শনা দেয় তাহলেও তার বিরুদ্ধে ভোট বা মতামত দেয়ার সুযোগ নেই। তারা দলের নীতি নির্ধারক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হন।

রায়ে আরও বলা হয়, জনগণ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক অপসারণ ক্ষমতা সংসদকে দেয়নি। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য জনগণের দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস রয়েছে। তাদের মৌলিক অধিকার রক্ষা ও নির্বাহী বিভাগের দ্বারা অযাচিত ক্ষমতার প্রয়োগের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে।

রায়ে বলা হয়, ৭০ অনুচ্ছেদ থাকার কারণে দলীয় নির্দেশনার বাইরে একজন সংসদ সদস্য স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। সেখানে বিচারক অপসারণের বিষয়ে তারা কিভাবে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে মত দেবেন, সেটাই প্রশ্নবিদ্ধ।

সংসদের হাতে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা দেয়া হলে বিচারকেরা দলের হাইকমাণ্ডের অনুকম্পানির্ভর হয়ে পড়বেন।

এক-এগারো সম্পর্কে প্রধান বিচারপতি লিখেছেন, ‘দুই বছরের জরুরি অবস্থার নামে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। আর সেটা ঘটেছিল সেই সময়ের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের দূরদর্শিতার অভাব এবং গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে তাদের অনীহার কারণে।

৭৯৯ পৃষ্ঠার রায়ে এই পর্যবেক্ষণ দিয়ে বিচারপতিদের জন্য ৩৯ দফা আচরণবিধিমালাও প্রণয়ন করে দিয়েছে আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে এসব আচরণ বিধিমালা ভঙ্গ করলে গুরুতর অসদাচরণের শামিল হবে।

এদিকে বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা বিধানে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সংবিধানের পরিপন্থী বলে এ রায়ে মতামত দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। তবে এর সঙ্গে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতি এক মত না হওয়া এবং অর্ডার অব দ্য কোর্টে ১১৬ অনুচ্ছেদ সম্পর্কে কিছু উল্লেখ না করায় ১১৬ অনুচ্ছেদ বাতিল হয়েছে বলে মনে করেন না অ্যাটর্নি জেনারেল। সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছেন, ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার ফলে ৯৬(৩) অনুযায়ী সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল প্রতিষ্ঠিত হল। ১১৬ অনুচ্ছেদের বৈধ-অবৈধ নিয়ে এ মামলায় বিচার্য বিষয় ছিল না অতএব এটা বৈধ-অবৈধের প্রশ্ন অবান্তর বলে মন্তব্য করেছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক।

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির স্বাক্ষরের পর মঙ্গলবার এ রায় প্রকাশ করা হয়। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের মূল রায়টি লিখেছেন প্রধান বিচারপতি। এই রায়ের সঙ্গে একমত পোষণ করে তাতে স্বাক্ষর করে নিজস্ব অভিমত দিয়েছেন বিচারপতি মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি মো. ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।

বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা অবসরে যাওয়ায় তার পক্ষে রায়ে স্বাক্ষর করেছেন বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার। আপিল বিভাগের সাতজন বিচারপতির মধ্যে পাঁচজন বিচারপতি প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণের সঙ্গে একমত পোষণ করার পরও আলাদা করে নিজেরা পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন।

তবে বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা প্রধান বিচারপতির রায়ের সঙ্গে সহমত পোষণ করে তার বাইরে আর কিছু লেখেননি।

রায়ে আপিল বিভাগ বলেছেন, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো সংসদ সদস্য নিজ দলের বিরুদ্ধে ভোট দিলে তার সংসদ সদস্যপদ থাকে না। এতে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে ৭০ অনুচ্ছেদ সংসদের স্থায়িত্ব ও দলের সদস্যদের মধ্যে শৃংখলা ধরে রাখার জন্য একটা ব্যবস্থা মাত্র। এটা দেশের জাতীয় রাজনীতিকে রাজনৈতিক বেচা-কেনা থেকে দুরে রাখার জন্য।

রায়ে বলা হয়, একজন সংসদ সদস্য যদি দরকষাকষির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন বা সন্দেহ হয় যে তিনি দরকষাকষির সঙ্গে যুক্ত তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিধান সংবিধানে নেই। এ অবস্থায় তারা (সংসদ সদস্য) উচ্চ আদালতরে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা কিভাবে নিতে চান?

রায়ে বলা হয়, ৭০ অনুচ্ছেদ থাকার কারণে দলীয় নির্দেশনার বাইরে একজন সংসদ সদস্য স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। সেখানে বিচারক অপসারণের বিষয়ে তারা কিভাবে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে মত দেবেন, সেটাই প্রশ্নবিদ্ধ।

প্রধান বিচারপতি মনে করেন, সংবিধানের ৯৫(২)গ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো আইন না করা সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগে নির্বাহী বিভাগকে একটি বিশেষ সুবিধা দিয়েছে। আর ১১৫ ও ১১৬ অনুচ্ছেদ ’৭২-এর সংবিধানে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় নির্বাহী বিভাগের প্রভাব পড়বে।’ তিনি লিখেছেন, ‘কোনো সন্দেহ নেই, ৭০ অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য হলো সরকারের স্থিতিশীলতা ও ধারাবাহিকতা রক্ষা করা। দলের সদস্যদের মধ্যে শৃঙ্খলা বজায় রাখা।

প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন রেখেছেন, ‘সংসদ সদস্যদের যদি সন্দেহের চোখেই দেখা হয়, তাহলে তাদের কী করে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের মতো দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত নেয়ার কাজে ন্যস্ত করা যায়।
তাই এই অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্যের চেতনা হলো সংসদের নির্বাচিত সদস্যরা তাদের মনোনীত করা দলের প্রতি আনুগত্য বজায় রাখবেন। আসলে তারা তাদের দলের উচ্চপর্যায়ের হাতে জিম্মি। তাই ৭০ অনুচ্ছেদের বিষয়ে হাইকোর্ট বিভাগ যে দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েছেন, তার মধ্যে আমরা কোনো বৈকল্য দেখি না। সংসদের হাতে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা দেয়া হলে বিচারকেরা দলের হাইকমাণ্ডের অনুকম্পানির্ভর হয়ে পড়বেন।

পূর্ণাঙ্গ রায়ে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, ‘আমাদের সংবিধানের ভিত্তি হচ্ছে, “আমরা জনগণ” সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। জাতীয় সংসদ সংবিধানের পরিপন্থী কোনো আইন প্রণয়ন করতে পারে না এবং কোনো আইন সংবিধানসম্মত কি না, তা বিচার করার অধিকার সংবিধান সুপ্রিম কোর্টকেই দিয়েছে।’

তিনি লিখেছেন, ‘১৯৭১ সালে আমরা যে অলঙ্ঘনীয় ঐক্য গড়েছিলাম, তা শত্রুরা নস্যাৎ করতে ব্যর্থ হয়েছিল। আজ আমরা একটি মুক্ত, স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশে বাস করি। অথচ আজ ঔদ্ধত্য এবং অজ্ঞতাকে আমরা প্রশ্রয় দিয়ে চলছি। কোনো একজন ব্যক্তি দ্বারা কোনো একটি দেশ বা জাতি তৈরি হয়নি। আমরা যদি সত্যিই জাতির পিতার স্বপ্নে সোনার বাংলায় বাঁচতে চাই, তাহলে এই আমিত্বর আসক্তি এবং আত্মঘাতী উচ্চাভিলাষ থেকে আমাদের মুক্ত থাকতে হবে। এই আমিত্ব হলো কেবল এক ব্যক্তি বা একজন মানুষ সবকিছুই করতে পারেন এমন ভাবনা।’

এক-এগারো সম্পর্কে প্রধান বিচারপতি লিখেছেন, ‘দুই বছরের জরুরি অবস্থার নামে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। আর সেটা ঘটেছিল সেই সময়ের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের দূরদর্শিতার অভাব এবং গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে তাদের অনীহার কারণে।’

ত্রয়োদশ সংশোধনীর বিষয়ে প্রধান বিচারপতি লিখেছেন, ‘সংখ্যাগরিষ্ঠের রায়ে আপিল বিভাগ মত দিয়েছিলেন যে দুটি সংসদীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে। তবে শর্ত হলো, বিলুপ্ত হওয়া ৫৮(ক) অনুচ্ছেদের ৩ ও ৪ দফা অনুযায়ী সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কিংবা আপিল বিভাগের সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে প্রধান উপদেষ্টা পদে নিয়োগ করা যাবে না। এই আদালত উল্লিখিত নির্দেশনা এ কথা মনে রেখে দিয়েছিলেন যে প্রধান বিচারপতির নিয়োগপ্রক্রিয়ায় তাহলে রাজনৈতিকীকরণের সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে পারে।’

নির্বাচন যাতে সর্বদাই অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতে পারে, সে জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে আরও বেশি ক্ষমতা এবং তার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করতে হবে উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি লিখেছেন, ‘এই আদালত লক্ষ করেছেন যে প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দল যারাই নির্বাচনে হেরে যায়, তারা নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে এং বিরোধী দল সংসদে সহযোগিতা করে না। শেষ পর্যন্ত দশম সংসদ নির্বাচনে একটি বড় রাজনৈতিক দল অংশ নেয়নি। এই আদালতের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সব ক্ষমতা দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করা। সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়াই নির্বাচন কমিশনের শূন্য পদগুলো স্বয়ংক্রিয়ভবে পূরণ হবে। কিন্তু পরবর্তী সরকারগুলোর কেউ এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এমনকি বিরোধী রাজনৈতিক দলও সংসদে কিংবা কোনো ফোরামে এই প্রশ্ন তোলেনি এবং তার ফল দাঁড়িয়েছে, নির্বাচন কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ ঘটেনি।’

রায়ে প্রধান বিচারপতি লিখেছেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন যদি নিরপেক্ষভাবে এবং কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়াই স্বাধীনভাবে না হতে পারে, তাহলে গণতন্ত্র বিকশিত হতে পারে না। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের অনুপস্থিতিতে একটি গ্রহণযোগ্য সংসদও প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। সে কারণে আমাদের নির্বাচনপ্রক্রিয়া এবং সংসদ শিশু অবস্থায় রয়ে গেছে। জনগণ এ দুটি প্রতিষ্ঠানের ওপর আস্থা অর্পণ করতে পারছে না। এ দু’টি প্রতিষ্ঠান যদি জনগণের আস্থা এবং শ্রদ্ধা অর্জনের জন্য প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ থেকে বিরত থাকে, তাহলে কোনো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে না। একটি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের অভাবে বিজ্ঞ রাজনীতিবিদদের দিয়ে সংসদ গঠিত হতে পারে না, বরং তা সংসদের নিজের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণকে ব্যাহত করতে পারে।’

প্রধান বিচারপতি হাইকোর্টের রায়ের একটি অংশ তুলে ধরেন, যেখানে বলা হয়েছিল, ‘আমাদের অভিজ্ঞতা এটা দেখাচ্ছে যে সংসদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের ফৌজদারি অপরাধের রেকর্ড রয়েছে। তারা দেওয়ানি মামলাসমূহের সঙ্গে সম্পৃক্ত। কিন্তু ষোড়শ সংশোধনীর কারণে সাংসদেরা বিচারকদের কার্যত বসে (কর্তৃত্ব অর্থে) পরিণত হয়েছেন, যা উচ্চ আদালতের বিচারকদের স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালনে হুমকি সৃষ্টি করেছে। সংবাদপত্রের রিপোর্ট অনুযায়ী সংসদের ৭০ শতাংশ সদস্য ব্যবসায়ী। মাহবুবে আলম এবং মুরাদ রেজা (অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল) এই তথ্যের বিষয়ে আপত্তি করেননি। আমরা আমাদের অভিজ্ঞতায় দেখতে পাই, আইন প্রণয়নসংক্রান্ত সংসদীয় বিতর্কে তারা কম আগ্রহী। এর পরিণাম হলো আজকের দিনে সংসদে পাস করা বেশির ভাগ আইন ‘ত্রুটিযুক্ত’। অসম্পূর্ণ এবং ‘নিচু মানের’ আইন প্রণয়নে তাদের দায়িত্ব উত্তমরূপে পালনের চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণের প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হতে তারা বেশি আগ্রহী হয়ে পড়েছেন। বিচারকদের অসদাচরণ বা অসামর্থ্যের বিচার করা আইনপ্রণেতাদের কাজ নয়।’

রায়ে বলা হয়, বিচারক অপসারণ ক্ষমতা যদি সংসদ সদস্যদের হাতে যায় তবে তার প্রভাব বিচার বিভাগে পড়বে-এতে কোনো সন্দেহ নেই। এছাড়া দীর্ঘদিন সুপ্রিম জুডিশিয়াল ব্যবস্থা না থাকায় প্রধান বিচারপতির প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণও বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। এ অবস্থায় কেউ কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারবে না যে আমাদের আদালতেও ভারতের মত একজন বিচারপতি (কারনান) নেই। যদি কোনো একজন বিচারকের তার বিভাগের প্রধানের প্রতি দায়বদ্ধ না থাকে তবে ওই বিভাগ অকার্যকর হয়ে পড়তে বাধ্য। একারণে হাইকোর্ট যথাযথভাবেই এই সংশোধনীকে (১৬তম) সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করেছে। এ সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে অন্য কোনো অভিমত দেয়ার কারণ খুঁজে পাই না।

রায়ে আরও বলা হয়, উচ্চ আদালত ও নিন্ম আদালতের শৃংখলার বিষয়ে দেশে কোনো বিধান নেই যা বিচার বিভাগের জন্য আত্মঘাতী। এক্ষেত্রে অ্যাটর্নি জেনারেলের অভিমত হলো নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষই ব্যবস্থা নিতে পারবে। তার কাছ থেকে এ জাতীয় মন্তব্য আদালত প্রত্যাশা করেনি। তার এ যুক্তি নির্বাহী বিভাগের বক্তব্যের প্রতিফলন। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন যে দেশে বর্তমানে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ব্যবস্থা বলবত নেই। এ অবস্থায় ষোড়শ সংশোধনী বাতিল হলে একটি শূন্যতার সৃষ্টি হবে। তার এ যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ বর্তমান ব্যবস্থা বাতিল হলে আগের ব্যবস্থা অর্থাৎ সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ব্যবস্থা দ্রুত বলবত্ হবে। এখানে শূন্যতা সৃষ্টির কোনো সুযোগ নেই।

রায়ে আরও বলা হয়, জনগণ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক অপসারণ ক্ষমতা সংসদকে দেয়নি। এটা সংবিধানের ৮৮(খ) (আ), ৮৯(১) এবং ৯৪(৪) অনুচ্ছেদে প্রতিফলিত হয়েছে। সংবিধানের ৯৪(৪) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারক বিচার কাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকবেন। একইভাবে ১১৬(ক) অনুচ্ছেদ বলা হয়েছে যে বিচার-কর্মবিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিগণ এবং ম্যাজিস্ট্রেটগণ বিচার কাজ পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকবেন। কিন্তু সংবিধানে বলা হয়নি যে প্রজাতন্ত্রের অপর দুটি অঙ্গ তাদের কাজে স্বাধীন থাকবে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য জনগণের দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস রয়েছে। তাদের মৌলিক অধিকার রক্ষা ও নির্বাহী বিভাগের দ্বারা অযাচিত ক্ষমতার প্রয়োগের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে।

Check Also

ট্রাইব্যুনালে আ.লীগ নেতাদের বিচার দেখতে এসে যা বললেন সাঈদী পুত্র

জুলাই-আগস্টের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া সাবেক ৯ মন্ত্রীসহ ১৩ জনকে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।