ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে এক-এগারো সম্পর্কে প্রধান বিচারপতি লিখেছেন, দুই বছরের জরুরি অবস্থার নামে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। আর সেটা ঘটেছিল সেই সময়ের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের দূরদর্শিতার অভাব এবং গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে তাদের অনীহার কারণে।’ ত্রয়োদশ সংশোধনীর বিষয়ে প্রধান বিচারপতি লিখেছেন, ‘সংখ্যাগরিষ্ঠের রায়ে আপিল বিভাগ মত দিয়েছিলেন যে, দুটি সংসদীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে। তবে শর্ত হল, বিলুপ্ত হওয়া ৫৮(ক) অনুচ্ছেদের ৩ ও ৪ দফা অনুযায়ী সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কিংবা আপিল বিভাগের সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে প্রধান উপদেষ্টা পদে নিয়োগ করা যাবে না। প্রধান বিচারপতির নিয়োগ প্রক্রিয়ায় রাজনীতিকীকরণ হতে পারে, এদিকটি মাথায় রেখে আদালত উল্লিখিত নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
হাইকোর্টের রায়ের একটি অংশ তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি লিখেছেন, আমাদের অভিজ্ঞতা এটা দেখাচ্ছে যে, সংসদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের ফৌজদারি অপরাধের রেকর্ড রয়েছে। তারা দেওয়ানি মামলাগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত। কিন্তু ষোড়শ সংশোধনীর কারণে সংসদ সদস্যরা বিচারকদের কার্যত বসে (কর্তৃত্ব অর্থে) পরিণত হয়েছেন, যা উচ্চ আদালতের বিচারকদের স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালনে হুমকি সৃষ্টি করেছে। সংবাদপত্রের রিপোর্ট অনুযায়ী সংসদের ৭০ শতাংশ সদস্য ব্যবসায়ী। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং মুরাদ রেজা (অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল) এ তথ্যের বিষয়ে আপত্তি করেননি। আমরা আমাদের অভিজ্ঞতায় দেখতে পাই, আইন প্রণয়নসংক্রান্ত সংসদীয় বিতর্কে তারা কম আগ্রহী। এর পরিণাম হল, আজকের দিনে সংসদে পাস করা বেশিরভাগ আইন ‘ত্রুটিযুক্ত’। অসম্পূর্ণ এবং ‘নীচুমানের’ আইন প্রণয়নে তাদের দায়িত্ব উত্তমরূপে পালনের চেয়ে সুপ্রিমকোর্টের বিচারকদের অপসারণের প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হতে তারা বেশি আগ্রহী হয়ে পড়েছেন। বিচারকদের অসদাচরণ বা অসামর্থ্যরে বিচার করা আইনপ্রণেতাদের কাজ নয়।