‘দাফন খরচ ও ঝামেলা এড়াতে লাশ ভাসিয়ে দেয়া হলো নদীতে’

 নওগাঁ: নওগাঁর আত্রাই নদীতে ভেসে আসা অজ্ঞাত অর্ধগলিত এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার না করার অভিযোগ পাওয়া গেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।
পুলিশ জানিয়েছে, ময়নাতদন্ত, দাফন, খরচ ও ঝামেলা এড়াতে লাশটি নদীর স্রোতে ভাসিয়ে দেয়া হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে আত্রাই থানার পাশে দিয়ে বয়ে যাওয়া আত্রাই নদীতে এই ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, উপজেলার শাহাগোলা ইউনিয়নের মিরাপুর নামকস্থানে নদীতে বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে প্রথমে ওই অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ ভেসে থাকতে দেখতে পান এলাকাবাসী। এরপর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান থানায় জানানোর পরও পুলিশ লাশটি উদ্ধার না করায় শুটকিগাছা রাবার ড্যাম এলাকায় আত্রাই নদীতে আটকে যায়। ঘটনাস্থালে পুলিশ এলেও লাশ উদ্ধার না করে চলে যায়।
ড্যামে প্রায় এক ঘন্টা আটকে থাকার পর নদীর পানিতে লাশটি ভাসতে ভাসতে থানার পাশে সাহেবগঞ্জ এলাকায় ঘাসের সাথে আটকে যায়। এরপর স্থানীয় এলাকাবাসী থানায় আবারও সংবাদ দেন।
এ দিকে লাশটির সংবাদটি জেলায় কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কর্মীদের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার বিকেলে পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেনকে জানানো হয়। পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন তাৎক্ষণিক বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্যে বলেন।
কিন্তু লাশটি পুলিশ উদ্ধার করে বিকেলে আত্রাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: বদরুদ্দোজ্জার নির্দেশে আত্রাই ও রাণীনগর উপজেলার লাশ বহনকারী মো: আব্দুল লতিফ লাশটি একটি বাঁশ দিয়ে আবারও নদীতে দিয়ে ভাসিয়ে দেন।
আত্রাই (আহসানগঞ্জ) বাজার এলাকার লোকমান হাকিম, সুব্রত সরকার জানান, গলিত ওই লাশটি থানা সংলগ্ন এলাকায় নদীর ধারে ঘাসে আটকে যায়। এ সময় লাশটি দেখতে শত শত লোক নদীর পাড়ে ভিড় করেন। এরপর বিকেলে পুলিশের নির্দেশে আব্দুল লতিফ লাশটি নদীর মাঝে ঠেলে দেন।

স্থানীয় ব্যবসায়ী করিম সরদার, ফরমান, সাদেকুল ইসলামসহ অন্যান্যরা জানান, লাশটি থানা পুলিশ উদ্ধার না করে দায়িত্বের পরিচয় দেননি। পুলিশের উচিত ছিল লাশটি উদ্ধার করে প্রয়োজনীয় কাজ শেষে সরকারিভাবে দাফন সম্পন্ন করা।
আব্দুল লতিফ জানান, ময়নাতদন্ত, দাফন, খরচ ও ঝামেলার হাত থেকে বাঁচতে থানা পুলিশ লাশটি উদ্ধার করতে দেননি। ফলে বাঁশ দিয়ে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। নদী দিয়ে ভাসতে ভাসতে চলন বিল এলাকায় চলে গেছে।
উপজেলার শাহাগোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বাবু জানান, ঘটনাটি স্থানীয়রা তাকে জানানো পর দ্রুত থানায় জানানো হয়। এরপর আত্রাই উপজেলার নদীর পানিতে ভেসে থাকা ওই লাশটি প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা থাকলেও থানা পুলিশ তা উদ্ধার করেনি। ফলে ওই লাশটি কোথা থেকে ভেসে এসেছে এবং কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে তার কারণ জানা সম্ভব হলো না।
আত্রাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: বদরুদ্দোজ্জার সেল ফোনে শুক্রবার একাধিবার যোগাযোগ করা হলেও ফোন রিসিভ না করায় তার সাথে কথা বলা যায়নি।
এবাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল হক জানান, গতকাল এলাকাবাসীরা পুলিশকে খবর দিয়েছিল কি-না বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি।

Check Also

প্রত্যেকটা অফিসের কেরানি পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের দোসর : আসিফ মাহমুদ

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।