বাংলাদেশ সন্দেহভাজন অর্থ পাচারকারীদের একটি তালিকা পাঠিয়েছিল সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকে (এসএনবি)। জানতে চাওয়া হয়েছিল— ওই ব্যাংকে এদের কার হিসাবে কত টাকা জমা আছে। কোনো তথ্য দেয়নি এসএনবি। এমন কি তথ্য আদান প্রদানের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সইয়ের প্রস্তাব দিলে তাতেও সাড়া দেয়নি সুইস ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ফলে দেশ থেকে কারা টাকা পাচার করেছে এ বিষয়ে অন্ধকারেই রয়ে গেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) জানাচ্ছে, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশ থেকে কারা টাকা রাখছেন তা জানা সম্ভব হয়নি। কেবল রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আইনি সহায়তা চুক্তি থাকলেই এ ধরনের তথ্য পাওয়া যেতে পারে। সূত্রগুলো জানায়, গত ১২ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকে অবৈধ হুন্ডি তৎপরতা, বিদেশে অর্থ পাচার এবং মানিলন্ডারিং তৎপরতা প্রতিরোধ ও দমনের কার্যক্রম জোরদার করার লক্ষ্যে গঠিত কেন্দ্রীয় টাস্কফোর্সের সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানেও জানানো হয়, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি কারা টাকা রেখেছে সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানা যায়নি। ওই টাস্কফোর্সের প্রধান বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ও হেড অব বিএফআইইউ আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা চিঠি লিখেছিলাম তারা তথ্য দেয়নি। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে লিগ্যাল অ্যাসিসটেন্স চুক্তি ছাড়া এভাবে তথ্য পাওয়া সম্ভবও নয়। তবে দুই দেশের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের মাধ্যমে কিছু তথ্য আদান প্রদান হচ্ছে। সেখানে আমরা সন্দেহভাজন কিছু নামের তালিকা পাঠিয়েছিলাম। তারা শুধু জানিয়েছে, ওইসব নামে কোনো অ্যাকাউন্ট নেই তাদের ব্যাংক
সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসএনবি গত জুনে যে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে তাতে দেখা যায়, আগের বছরের চেয়ে ২০১৬ সালে তাদের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ ২০ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৫ সালে সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশের জমার পরিমাণ ছিল প্রায় ৪ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা, যা ২০১৬ সালে ৫ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। এর পরপরই বাংলাদেশ ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের কাছে তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠায়। এরপর ১১ জুলাই অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় সংসদে এক বিবৃতিতে জানান, মিডিয়ায় সুইস ব্যাংকে অর্থ গচ্ছিত রাখার যে তথ্য এসেছে তা অতিরঞ্জিত। রাজী হাসান বলেন, গণমাধ্যমে যে তথ্য এসেছে সেটি নিয়ে বিভ্রান্তি আছে। আমাদের হিসাবে ২০১৬ সালে সুইস ব্যাংকে জমা বাংলাদেশিদের টাকার পরিমাণ আগের বছরের চেয়ে কমেছে। সেখানে বাংলাদেশের হিসাবে যে অর্থ দেখানো হয়েছে তার মধ্যে মাত্র ৭ শতাংশ অর্থ বা ৪০০ কোটি টাকা বাংলাদেশি গ্রাহকের হিসাবে জমা থাকতে পারে। তবে এর মধ্যে কী পরিমাণ টাকা সরাসরি বাংলাদেশ থেকে গেছে সে ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি। এর একটি অংশ বিদেশে যেসব বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন বা স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন তাদের হতে পারে বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই ডেপুটি গভর্নর। জানা গেছে, এবারই প্রথম নয়, এর আগেও একাধিকবার সন্দেহজনক গ্রাহকের অ্যাকাউন্টের তথ্য চাওয়া হয়েছিল, তখনো সাড়া দেয়নি সুইজারল্যান্ডের ন্যাশনাল ব্যাংক। এমন কি সুইস ব্যাংকের স্বঘোষিত হিসাবধারী মুসা বিন শমসেরের বিষয়েও তথ্য চেয়ে পায়নি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অর্থ পাচারের অভিযোগে মুসা বিন শমসেরের বিরুদ্ধে সম্প্রতি মামলা করেছে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতর। শুল্ক গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে মুসা লিখিতভাবে জানান, সুইস ব্যাংকে তার ৯৬ হাজার কোটি টাকা গচ্ছিত আছে। মামলার পর সংস্থাটির মহাপরিচালক মঈনুল হোসেন খান বলেছিলেন, তিনি (মুসা) এই টাকার কোনো ব্যাংক হিসাব বা বৈধ উৎস দেখাননি। কয়েকবার নোটিস দিলেও তিনি তা জমা দেননি। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট জানাচ্ছে, তারাও মুসা বিন শমসেরের সুইস ব্যাংকে অর্থ পাচারের বিষয়টি তদন্ত করে দেখছেন।