ছেলেকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখলেন মা!

টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে না পারায় নিজের পাগল ছেলেকে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছেন মা। তবুও মায়ের মন বলে কথা, ছেলে সাইফুল 77171_33ইসলামকে বাড়ির উঠানে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে মা বাবলী বেগম ঘুরে বেড়াচ্ছেন গ্রামের বাড়ি বাড়ি। এমন অমানবিক দৃশ্যের দেখা মেলেছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালাপুর ইউনিয়নের উত্তর কালাপুর গ্রামে। সরজমিনে ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানের একটি সুপারি গাছের সঙ্গে পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে সাইফুলকে। আর সাইফুলের মা ছেলের চিকিৎসার জন্য টাকা জোগাড় করতে  ইউপি সদস্য সাহিদা বেগম রুপা ও প্রতিবেশী রাজিয়া চৌধুরীকে সঙ্গে নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন গ্রামের বাড়ি বাড়ি। যে যাই দিচ্ছেন তাই তিনি হাত পেতে নিচ্ছেন। কেউ দিচ্ছেন নগদ টাকা কেউবা দিচ্ছেন চাল। আবার কেউ দিচ্ছেন শুধু সাহায্যের আশ্বাস মাত্র। আর এভাবে গত তিনদিনে তার জোগাড় হয়েছে মাত্র ৫৬০ টাকা আর বার কেজি চাল। কিন্তু এভাবে কতদিনে ছেলের চিকিৎসার টাকা জোগাড় হবে জানতে চাইলে এর কোনো উত্তর দিতে না পেরে কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবলী বেগম। চোখ বেয়ে জল ফেলেই জানিয়ে দেন নিজের অসহায়ত্বের কথা।
বাবলী বেগম এ প্রতিবেদককে বলেন, সাত বছর আগে তার স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে ছেলে সাইফুলই ছিল সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী। সে রাজ মিস্ত্রির যোগালীর কাজ করে দৈনিক দেড়শ টাকা পেতো। এই টাকা দিয়ে কোনো মতে তার দুই মেয়েসহ চার সদস্যর সংসার চলে যেত। গত এক মাস আগে হঠাৎ ছেলের মাথায় দোষ দেখা দেয়। বাড়ির জিনিসপত্র ভেঙে ফেলে। ছোট বাচ্চাদের কোলে নিয়ে ছুড়ে ফেলে দেয়। গ্রামের রাস্তা দিয়ে লোকজন আসা যাওয়ার পথে সে জাপটে ধরে। এভাবে দিনে দিনে তার পাগলামি বেড়ে যাওয়ায় গত সপ্তাহ দশদিন ধরে তাকে শেকল দিয়ে বেঁধে রেখেছেন। একমাস ধরে ছেলে কাজে যেতে না পারায় এলাকাবাসীর সাহায্য নিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। কিভাবে ছেলের চিকিৎসা করাবেন এর কোনো সুপথ দেখছেন না তিনি।
সাইফুলের ছোট বোন শাম্মী আক্তার বলেন, পাগল হয়ে যাওয়ায় ভাইকে দিনের বেলায় গাছের সঙ্গে আর রাতে ঘরের বারান্দায় বেঁধে রাখা হয়। দাঁড়িয়ে থেকেই সে সারারাত কাটিয়ে দেয়। শিকল ছিঁড়ে ফেলার জন্যও খুব চেষ্টা করে।
ইউপি সদস্য সাহিদা বেগম রুপা প্রতিবেশী রাজিয়া চৌধুরী ও দিলারা বেগম জানান, প্রাথমিক অবস্থায়ই সাইফুলের চিকিৎসা করানো প্রয়োজন। তাহলে সে ভালো হয়ে যেতে পারে। আমরা চেষ্টা করছি সাহায্য তুলে তার চিকিৎসা করানোর জন্য।
কালাপুর ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মুজুল বলেন,‘আমি ওই এলাকার মেম্বারকে বলেছি তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য’। শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোবাশশেরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা উপজেলা পরিষদ থেকে সাইফুলের সুচিকিৎসার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।

Check Also

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা: ১৫জেলে উদ্ধার ও সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করতে ১১হাজার আবেদন

: সুন্দরবন-সংলগ্ন দুবলার চরের জেলেদের ওপর হামলা চালিয়ে ১৫জনকে অপহরণ করেছে দস্যুরা। রবিবার (২৬ জানুয়ারি) …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।