‘খায়রুল হকের কারণে মানুষ ভোটাধিকার হারিয়েছেন’

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে খায়রুল হকের দেয়া ত্রয়োদশ সংশোধনী রায়ের মাধ্যমে দেশে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে দেশের মানুষ তাদের ভোটের অধিকার হারিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলেনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

‘তিনি (বিচারপতি এবিএম খাইরুল হক) পঞ্চম ও ত্রয়োদশ সংশোধনীর রায়কেও বির্তকিত করেছেন। তাই বিচারপতি খায়রুল হক ষোড়শ সংশোধীর রায় বাতিলে পূর্বপরিকল্পনার গন্ধ পাচ্ছেন’- যোগ করেন জয়নুল আবেদীন।

suprim

ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিচার ব্যবস্থা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক তার অবস্থান স্পষ্ট করেছেন বলেও দাবি করেন বিএনপির এই আইনজীবী।

ষোড়শ সংশোধনীর রায়কে পূর্ব ধারণাপ্রসূত বলে বুধবার সংবাদ সম্মেলনে খায়রুল হক যে বক্তব্য দিয়েছেন সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের এ নেতা বলেন, তাহলে কি ত্রয়োদশ সংশোধনীর রায়ও পূর্ব ধারণাপ্রসূত?

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি খায়রুল হকসহ বিভিন্ন মহলের প্রতিক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া জানাতে সংবাদ সম্মেলন করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহাবুব উদ্দিন খোকনসহ বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা উপস্থিত হন। সংবাদ সম্মেলনের সামনের সারিতে আসন নেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদসহ অন্যান্যরা।

কিছুক্ষণ পর সমিতির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট ওজিউল্লাহর নেতৃত্বে সমিতির সাবেক সম্পাদক শ. ম রেজাউল করিমসহ আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হন।

এরপর আইনজীবী সমিতির ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জয়নুল আবেদীন। লিখিত বক্তব্যের মধ্যেই শুরু হয় হট্টগোল।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক মুন সিনেমা হলের অধিগ্রহণ সংক্রান্ত মামলার রায় দিতে গিয়ে উদ্দেশ্যমূলক, পূর্বপরিকল্পিত ও অপ্রাসঙ্গিকভাবে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করেছেন।’

‘তিনি পঞ্চম ও ত্রয়োদশ সংশোধনীর রায়কেও বির্তকিত করেছেন। এ কারণে বিচারপতি খায়রুল হক ষোড়শ সংশোধীর রায় বাতিলে পূর্বপরিকল্পনার গন্ধ পাচ্ছেন। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে খায়রুল হক যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে তিনি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।’

সভাপতির এমন বক্তব্যে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা করতালি দিলেও হট্টগোল শুরু করেন আওয়ামীপন্থীরা।

হট্টগোলের মধ্যেই জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘ত্রয়োদশ সংশোধনীর রায়ের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে খায়রুল হক যে রায় দিয়েছেন ওই রায়ের কারণেই দেশে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। দেশের মানুষ ভোটাধিকার হারিয়েছেন।’

খায়রুল হকের দেয়া ত্রয়োদশ সংশোধনী সংক্ষিপ্ত ও পূর্ণাঙ্গ রায় নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘বিচারপতি খায়রুল হক ত্রয়োদশ সংশোধনীর সংক্ষিপ্ত রায়ে দুই মেয়াদের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকা উচিৎ বলে জানিয়েছিলেন।পরর্তীতে কার ইঙ্গিতে, কী উদ্দেশ্যে ১৬ মাস পর পূর্ণাঙ্গ রায়ে সেই অবস্থান থেকে সরে গেলেন?’

scort

‘অবসরে যাওয়ার ১৬ মাস পর রায় লেখার এখতিয়ার নেই’ দাবি করে জয়নুল আবেদীন বিষয়টি বিচারিক অসততা বলেও মন্তব্য করেন।

তিনি লিখিত বক্তব্যে আরও বলেন, সম্প্রতি সকারের মন্ত্রী, এমপি এবং সরকারি দলের নেতৃবৃন্দ ষোড়শ সংশোধনীর রায় নিয়ে বিভিন্ন প্রকার অনভিপ্রেত বক্তব্য রাখছেন। বিচার বিভাগকে সরকার জনগণের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন এবং বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে জনমত তৈরিতে বক্তব্য রাখছেন।

গতকাল মঙ্গলবার আইন কমিশন আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক বলেছিলেন, ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে অনেক অপ্রাসঙ্গিক বিষয় আছে।

বিচারপতি খায়রুল হকের ওই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে জয়নুল আবেদীন প্রশ্ন রাখেন, তাহলে কি মুন সিনেমা হলের অধিগ্রহণ সংক্রান্ত মামলার রায় দিতে গিয়ে পূর্বপরিকল্পিত ও অপ্রাসঙ্গিকভাবে পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করেছিলেন তিনি?

সংবদ সম্মেলনে জয়নুল আবেদিন আরও বলেন, আমি দলীয় বক্তব্য দিতে আসিনি, আইনজীবী সমিতির সকলের পক্ষে বক্তব্য দিতে এসেছি।

কিন্তু তার এ বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গে হট্টগোল করে প্রতিক্রিয়া জানাতে থাকেন আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা।

সভাপতির বক্তব্য শেষ হলে আওয়ামীপন্থী আইনজীবী ও সমিতির সহ-সভাপতি ওয়াজি উল্লাহ বক্তব্য দিতে চাইলে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা সংবাদ সম্মেলনের ব্যানার খুলে নিয়ে যান। এরপর দু’পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়।

বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা মিলনায়তন ত্যাগ করলে সমিতির সহ-সভাপতি ওজিউল্লাহ সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘সমিতির সভাপতি যে বক্তব্য দিয়েছেন তা একান্তই তার নিজের বক্তব্য।’ কিন্তু সমিতির সভাপতির বক্তব্যের সময় তিনিও পাশে বসা ছিলেন।

Check Also

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করেননি সমাজী

জুলাই-আগস্টের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার সাবেক ৯ মন্ত্রীসহ ১৩ জনকে আন্তর্জাতিক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।