অর্থ বিভাগের পরস্পরবিরোধী দুই প্রজ্ঞাপনে অহেতুক বিপাকে পড়েছে মৃত অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবীর পেনশনভোগী বিপুলসংখ্যক পরিবার। এসব চাকরিজীবীর সবাই মৃত্যুর আগেই শতভাগ পেনশন উত্তোলন করেছিলেন। তাদের ব্যাপারে জারি করা এক প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, একই সঙ্গে ১৩ বছরের উৎসব ও চিকিৎসা ভাতা উত্তোলন করেছেন সুবিধাভোগীরা। এ অর্থ খরচও করে ফেলেছে অধিকাংশ পরিবার। কিন্তু তাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে সম্প্রতি জারি করা আরেক প্রজ্ঞাপনে। যেখানে বলা হয়েছে, উত্তোলনকৃত সমুদয় অর্থ ফেরত দিতে হবে। এক্ষেত্রে পেনশনভোগী পরিবারের চলমান আর্থিক সুবিধা থেকে পর্যায়ক্রমে এ অর্থ সমন্বয় করে কেটে নেয়া হবে।
কিন্তু একাধিক পেনশনভোগীর অভিযোগ, সমন্বয় করে উৎসব ও চিকিৎসা ভাতা কেটে রাখা হলে তারা আর্থিক দৈন্যদশায় পড়বেন। সরকারের সংশ্লিষ্টদের ভুলের মাশুল কেন তারা দেবেন। হঠাৎ করে কেনইবা আগের ১৩ বছরের এ আর্থিক সুবিধা দেয়া হল, আবার কেনইবা তা কেটে নেয়ার সিদ্ধান্ত হল- এগুলো তাদের কাছে বোধগম্য নয়। এ ভোগান্তির জন্য সরকারের যারা দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি জানান তারা। সরকারের সংশ্লিষ্টদের চরম অদক্ষতা ও অবহেলার কারণেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখার যুগ্ম সচিব মো. শাহজাহান বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, দুটি প্রজ্ঞাপনই সঠিকভাবেই জারি করা হয়েছে। ২০১৬ সালের জারি করা প্রজ্ঞাপনে মৃত পেনশনভোগীর পরিবারের সুবিধা পাওয়ার বিষয়টি অস্পষ্ট ছিল। নতুন প্রজ্ঞাপনে তা স্পষ্ট করা হয়। তিনি বলেন, মৃত পেনশনভোগীর পরিবার যে আর্থিক সুবিধা পাবে, তা প্রথম প্রজ্ঞাপনে ছিল না। এখন আজীবন দেয়া হবে তাদের সুবিধা। তবে কিছু অস্পষ্টতার কারণে অনেকে এ টাকা ২০০৪ সাল থেকে তুলে নিয়েছেন বলেও জানান তিনি। তবে ২০০৪ সাল থেকে আর্থিক সুবিধা দেয়া সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনের বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে কোনো মন্তব্য করতে চাননি তিনি।
২০১৬ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি অর্থ বিভাগ একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। সেখানে বলা হয়, একশভাগ পেনশন বিক্রিকারী অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী বছরে দুটি উৎসব ও চিকিৎসা ভাতা পাবেন। শতভাগ পেনশন বিক্রি না করলে যে পরিমাণ অর্থ মাসিক নিট পেনশন হিসেবে পেতেন, সে পরিমাণ অর্থ হবে প্রতিটি উৎসব ভাতার সমপরিমাণ। এতে আরও বলা হয়, প্রচলিত বিধান মতে, মৃত পেনশনভোগীর ক্ষেত্রে এ সুবিধা পাবেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির যোগ্য সদস্যরা। এক্ষেত্রে আরও বলা হয়, ‘কারও ক্ষেত্রে যদি এ ভাতা অনুত্তোলিত/বকেয়া থাকে, তাহলে প্রথম পরিপত্রে উল্লিখিত কার্যকারিতার তারিখ অর্থাৎ ১/৭/২০০৪ হতে পেনশনার/পারিবারিক পেনশনার উক্ত বকেয়া প্রাপ্ত হবেন।’ এছাড়া প্রচলিত বিধান মতে, পারিবারিক পেনশনভোগীরা সাধারণ পেনশনারদের মতো নির্ধারিত হারে মাসিক চিকিৎসা ভাতা প্রাপ্য হবেন।
এসব সুবিধা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে বলেও উল্লেখ করা হয় ওই প্রজ্ঞাপনে। এদিকে চলতি বছরের ৩ আগস্ট অর্থ বিভাগের আরেক প্রজ্ঞাপনে ২০০৪ সাল থেকে দেয়া মৃত অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবীর পরিবারের পেনশন সুবিধা স্থগিত করা হয়। এতে বলা হয়, শতভাগ বিক্রি করে দেয়া পেনশনভোগীর বিধবা স্ত্রী, বিপত্নীক স্বামী ও প্রতিবন্ধী সন্তান ২০১৬ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে বছরের দুটি উৎসব ও চিকিৎসা ভাতা পাবেন। তবে এই তারিখের আগে কোনো উৎসব ও চিকিৎসা ভাতা উত্তোলন করে থাকলে তা ফেরত দিতে হবে। এক্ষেত্রে তাদের পরবর্তীকালে প্রাপ্য চিকিৎসা ভাতা ও উৎসব ভাতা থেকে এ পাওনা সমন্বয় করা হবে।
মৃত পেনশনকারীর এক বিধবা স্ত্রী যুগান্তরকে বলেন, এককালীন মোটা অঙ্কের টাকা পেয়ে পরিবারের দীর্ঘদিনের কিছু চাহিদা পূরণ করেছি। কিন্তু টাকা তুলে নেয়ার এক বছরের মাথায় পুনরায় এ টাকা ফেরত চাওয়া হচ্ছে। বিধবা স্ত্রী হিসেবে আমার কোনো আয় নেই। কীভাবে এ টাকা ফেরত দেব। এ টাকা আগামী পাওনা সুবিধা থেকে কেটে রাখা হলেও নিদারুণ কষ্টে দিন কাটাতে হবে।
এদিকে এ প্রজ্ঞাপন নিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই ফোন করে প্রজ্ঞাপনের ব্যাখ্যা বুঝতে চাচ্ছেন।যুগান্তর