চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী নায়করাজ রাজ্জাক আর নেই। আজ সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ১৩ মিনিটে তিনি ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।
বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতাল সূত্র জানায়, সোমবার বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে হার্ট অ্যাটাক হওয়া অবস্থায় নায়ক রাজ্জাককে হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সব ধরনের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। ৬টা ১৩ মিনিটে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
মৃত্যুকালে নায়করাজ স্ত্রী, সন্তানসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। ২০১৪ সালে মেরিল-প্রথম আজীবন সম্মাননা পাওয়া এ অভিনেতার মৃত্যুসংবাদ শুনে তাঁকে শেষবারের মতো দেখতে হাসপাতালে ছুটে গেছেন দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা।
১৯৬৬ সালে ‘বেহুলা’ চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে ঢাকাই ছবিতে দর্শকনন্দিত হন কিংবদন্তি এ অভিনেতা।
নায়করাজ রাজ্জাক প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন ‘কি যে করি’ ছবিতে অভিনয় করে। পাঁচবার তিনি জাতীয় সম্মাননা পান। ২০১১ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তিনি আজীবন সম্মাননা অর্জন করেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস) পুরস্কার পেয়েছেন অসংখ্যবার।
বর্তমান সময়ে চলচ্চিত্রে খুব কমই অভিনয় করছেন নায়করাজ রাজ্জাক। শুধু নায়ক হিসেবেই নয়, পরিচালক হিসেবেও বেশ সফল। ‘আয়না কাহিনী’ ছবিটি নির্মাণ করেন রাজ্জাক। নায়ক হিসেবে নায়করাজ প্রথম অভিনয় করেন জহির রায়হান পরিচালিত ‘বেহুলা’ ছবিতে। এতে তাঁর বিপরীতে ছিলেন সুচন্দা।
‘অবুঝ মন’, ‘আলোর মিছিল’ ‘ছুটির ঘণ্টা’, ‘রংবাজ’, ‘বাবা কেন চাকর’, ‘নীল আকাশের নিচে’, ‘জীবন থেকে নেওয়া’ ‘পিচঢালা পথ’, ‘অশিক্ষিত’, ‘বড় ভালো লোক ছিল’সহ অসংখ্য ছবিতে অভিনয় করা রাজ্জাক সর্বশেষ অভিনয় করেছেন ছেলে বাপ্পারাজ পরিচালিত ‘কার্তুজ’ ছবিতে।
ষাটের দশকের মাঝের দিকে রাজ্জাক চলচ্চিত্র অভিনেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। সত্তরের দশকেও বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পের প্রধান অভিনেতা হিসেবে বিবেচনা করা হতো। তিনি একাধারে অভিনেতা, প্রযোজক, পরিচালক হিসেবে সুনাম অর্জন করেন।
চলচ্চিত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউ ডাকলে তাতে সাড়া দিতেন ‘বেহুলা’, ‘আগুন নিয়ে খেলা’, ‘এতটুকু আশা’, ‘অশ্রু দিয়ে লেখা’, ‘ওরা ১১ জন’, ‘অবুঝ মন’-এ অভিনয় করা রাজ্জাক। আমৃত্যু এই শিল্পের সঙ্গেই থাকতে চাওয়ার কথা জানিয়ে একসময় বলছিলেন, ‘আমি রাজ্জাক হয়তো অন্য কোনো চাকরি করতাম অথবা ঘুরে বেড়াতাম। কিন্তু ছোটবেলার অভিনয় প্রচেষ্টাকে আমি হারাতে দিইনি। আমি নাটক থেকে চলচ্চিত্রে এসেছি। সবাই আমাকে চিনেছে। পেয়েছি সাফল্যও। বাংলার মানুষজন আমাকে একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবেই দেখেন ও আমাকে ভালোবাসেন। আজকে আমার যা কিছু হয়েছে, সবই এই চলচ্চিত্রশিল্পের কল্যাণে।
রাজ্জাক এ-ও বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের ছোট একটি দেশ হতে পারে, তারপরও এই দেশের একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবে আমি গর্ববোধ করি। যাঁদের জন্য আমি রাজ্জাক হয়েছি, আমি সব সময় তাঁদের কাছাকাছি থাকতে চাই।
১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন কিংবদন্তি নায়ক রাজ্জাক। সেখানেই ছোটবেলা কাটে। মঞ্চনাটকে অভিনয়ের হাতে খড়িও সেখানে।
নায়করাজের দুই ছেলে বাপ্পারাজ ও সম্রাটও চলচ্চিত্র অভিনয়শিল্পী।
প্রধানমন্ত্রীর শোক
ঢাকাই ছবির কিংবদন্তি অভিনেতা নায়করাজ রাজ্জাকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে রাজ্জাকের অবদানের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘তাঁর মৃত্যুতে দেশের চলচ্চিত্রশিল্পের জন্য একটি অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। তিনি ছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের উজ্জ্বল নক্ষত্র।’
শেখ হাসিনা নায়করাজের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন।
এ ছাড়া শোক জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ।