মীর খায়রুল আলম:
আলোচিত রহস্যময়ী নজরুল হত্যার রহস্য উন্মোচন হতে চলেছে। তবে পরিবারের দাবী নজরুল হত্যা সুপরিকল্পিত ভাবে করা হয়েছে। আর এই হত্যা কান্ডে চোরাচালানীর গডফাদার, প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তি ও জনপ্রতিনিধিরা জড়িত বলেও পরিবার দাবি করেছে। উল্লেখ্য যে, গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে কে বা কারা বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকার সুযোগে একটি সাদা রঙ্গের প্রাইভেট কার যোগে কয়েকজন সখিপুর হাসপাতালের রোগী বহনকারী ট্রলির উপরে রেখে পালিয়ে যায়। পরে কর্তব্যরতরা তাকে দেখতে পাই। তার কাছে গেলে মৃত অবস্থায় দেখতে পেয়ে দেবহাটা থানা পুলিশকে খবর দিলে দেবহাটা থানার অফিসার ইনচার্জ কাজী কামাল হোসেন দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌছে লাশটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। এসময় মৃত ব্যক্তির মাথার ডান সাইটে একটু ফোলা এবং গালে রক্ত ছাড়া আর কোন ক্ষত চিহ্ন দেখা যায়নি।
তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সে বিজিবি সহ বিভিন্ন বাহিনীর সোর্স হিসাবে কাজ করতো। এমনকি নিজেও চোরা চালানীর সাথে যুক্ত রেখেছিল। যার ফলে পূর্বের শত্রুতার জের ধরে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে মনে করেন নিহতের পরিবার। তবে ফেলে রেখে যাওয়া লাশটি অজ্ঞাত হওয়ায় আইনী প্রক্রিয়ায় পুলিশ ময়না তদন্ত শেষে শুক্রবার সকালে পৌর গোরস্থানে তাকে দাফন করে। ঐ দিন দেবহাটা থানার এসআই আল আমিন বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। যার মামলা নং-০১, তাং- ০১/০৯/২০১৭। পরে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছবিসহ বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে পরিবারের সদস্যরা জানতে পারে। কিন্তু তার পূর্বেই বে-ওয়ারিশ লাশটি সরকারি প্রক্রিয়ায় দাফন করা হয়।
বিষয়টি নিয়ে পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তার ২য় স্ত্রী রেবেকা বেগম প্রভাবশালীদের ভয়ে প্রথমে মুখ খুলতে রাজি না হলেও পরবর্তীতে সাংবাদিকদের সামনে রহস্যের বিভিন্ন সূত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, তার স্বামীর ২টি বিয়ে থাকলেও কখনো দুই পরিবারের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়নি। এমনকি তাদের দুই পরিবারের মধ্যে এখনো পর্যন্ত ভাল সম্পর্ক রয়েছে। তবে তিনি ইতিপূর্বে মনোহরি সহ বিভিন্ন ফেরি ব্যবসার এক পর্যায়ে স্থানীয় চোরাচালানীর গডফাদার ও বর্তমান বিভিন্ন জন প্রতিনিধিদের সিন্ডিকেটে জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে তাদের সাথে ব্যবসায়ী সু-সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একই সাথে তিনি বিভিন্ন প্রভাবশালীদের অবৈধ মালের চালান ধরিয়ে দিতে সহযোগিতা করতেন। এ কারনে তার নামে একাধিক মামলা দিয়ে তাকে বাড়ি ছাড়া করে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পরিকল্পিত ভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার দিন সন্ধা থেকে আলিপুর বাজারে তাকে স্থানীয়রা ঘুরতে দেখে। তাছাড়া ঐ দিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে মোবাইল ফোনে পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা হয়। কিন্তু রাত ১১টার পরে তার ফোনে যোগাযোগ করলে তার ফোন বন্ধ দেখাতে থাকে। এরপর থেকে তার কোন খবর মেলেনি। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবিসহ বিষয়টি প্রকাশ হলে তারা জানতে পারে। তবে তার একজন ঘনিষ্ঠতম বন্ধু জনপ্রতিনিধি তিনি লাশটি অজ্ঞাত বলে জানান। পরে দাফন শেষে নিহতের পরিবারের কাছে চিনতে না পারার ভুল শিকার করেছেন। যা অতি সন্ধেহের রুপ নিয়েছে।
এ বিষয়ে নিহতের মা আনোয়ারা বেগম বলেন, নজরুল প্রায়ই সময় ব্যবসায়ীক কারনে বাড়ির বাইরে থাকতো। সে কারনে আমরা তার কোন খোঁজ খবর নেইনি। তবে যারা এটা করেছে তারা তার ব্যবসার ঘনিষ্ঠ লোক ও খুব প্রভাবশালী। তবে প্রশাসন যদি সুষ্ঠ তদন্ত করেন তাহলে আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে।
এবিষয়ে মামলার বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আল আমিন জানিয়েছেন, বিষয়টি নির্দিষ্ট কোন কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে রহস্য উন্মোচনে আইন প্রক্রিয়া চলছে। অতি শিঘ্রই হত্যার বিষয়ে নিশ্চিত ভাবে বলা যাবে এবং প্রকৃত আসামীদের আইনের আইনের আওতায় আনা হবে।
এ বিষয়ে দেবহাটা থানার অফিসার ইনচার্জ কাজী কামাল হোসেন জানান, নিহত ব্যক্তি নজরুল ইসলামের একাধিক বিয়ে আছে। সে কখন কোথাই থাকে কেউ জানতো না। তাছাড়া সে একাধিক মামলার আসামী এবং বিজিবি সোর্স ছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। মামলা গ্রহন করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। অতি দ্রুত আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশ তৎপর আছে।
মীর খায়রুল আলম
সাতক্ষীরা
০১৯২৯৪৪৫০৭৭
Check Also
সাতক্ষীরায় লটারীতে টিকে থাকা ৭১ শিক্ষার্থীকে ভর্তির সুযোগের দাবিতে অভিভাবকদের সংবাদ সম্মেলন
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি ভর্তির লটারীতে টিকে থাকার পরও শুধুমাত্র বয়সের অজুহাতে সাতক্ষীরা সরকারি বালক ও বালিকা …