ইংরেজী ১৯৪১ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা থানার ২নং নগরঘাটা ইউনিয়নের নিজ গ্রাম মিঠাবাড়ীতে শেখ আব্দুস সাত্তার, পিতা- মরহুম শেখ আমিনউদ্দীন, মাতা- মরহুমা হামিদা খাতুন জন্ম গ্রহন করেন। শৈশবে তিনি নিজ গ্রাম মিঠাবাড়ীতে বড় হয়ে মিঠাবাড়ী সরকারী প্রাইমারী স্কুল হতে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে বর্তমানে সাতক্ষীরা জেলার সাতক্ষীরা সদর থানার তুজলপুর জি.সি. হাইস্কুলে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে ইং ১৯৬০ সালে ম্যাট্রিক পাশ করেন। এরপর তিনি সাতক্ষীরা ছেড়ে যশোর জেলায় যশোর এম.এম. কলেজে ভর্তি হয়ে সেখান থেকে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রী পাশ করেন।
ইং ১৯৬৯ এর এম.সি নির্বাচনে স.ম আলাউদ্দীন আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন পাওয়ার পর তিনি এম.সি.এ স.ম আলাউদ্দীন ও এম.এল.এ সালাউদ্দীন ইউসুফ সাহেবের এর পক্ষে সরাসরি নির্বাচনী প্রচারনায় অংশগ্রহন করেন। এরপর যখন পাক সরকারের পতনের ডাক আসে তখন তিনি স.ম আলাউদ্দীনের সাথে নিজ গ্রাম মিঠাবাড়ী ছেড়ে ভারতের পোলতা গ্রামে চলে যান এবং সেখানে তিনি ৪৫ দিন অবস্থান করেন। ভারতে থাকাকালীন সময়ে ভারতের হাকিমপুরে ক্যাপ্টেন শফি সাহেব এবং তৎকালীন পাকিস্তান থেকে সাতক্ষীরা অঞ্চলে ক্যাপ্টেন মাহবুব সাহেব বাংলাদেশ স্বাধীন করার পক্ষে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কাজ করেন। তখন তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা স.ম. আলাউদ্দীন এর সাথে ভারতের ঘোজাডাঙ্গা ও সাতক্ষীরা অঞ্চলে স্বাধীনতার স্বপক্ষে যারা কাজ করতেন তাদের সাথেও তিনি কাজ করেন। এরপর তিনি নগরঘাটা কবি নজরুল বিদ্যাপীঠ প্রতিষ্ঠা করেন এবং প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষক হিসাবে যোগদান করে অত্র প্রতিষ্ঠানে তিনি দীর্ঘ সাত বছর বিনা বেতনে শিক্ষকতা করেন। সেই থেকে তিনি সাত্তার মাষ্টার নামে পরিচিতি লাভ করেন।
এরপর তিনি গ্রাম মিঠাবাড়ীতে যুবক সমবায় সমিতি গঠন করেন। এই সমবায় সমিতি গঠনের মাধ্যমে গ্রামের গরীব ও মধ্যবিত্ত লোকের কাছে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেন। এই যুবক সমবায় সমিতি পরিচালনা করাকালীন সময়ে তিনি তালা থানার সমবায় অফিসার মোঃ নজরুল ইসলাম সাহেবের সুনজরে পড়েন। এরপর তিনি সাতক্ষীরা সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংকের ডাইরেক্টর কাম ট্রেজারার পদে নির্বাচিত হন এবং তিনি অত্র প্রতিষ্ঠানের নামে ১৪ (চৌদ্দ) লক্ষ টাকা এফ.ডি.আর ও তৎকালীন সময়ে তিনি ব্যাংকের ঋণ কার্যক্রম প্রায় এক কোটি টাকায় উন্নীত করেন। এরপর তিনি হাইস্কুলের শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে সাতক্ষীরা সেন্ট্রাল মাল্টিপারপাস মার্কোটং সোসাইটি (সিসিএমপিএস) এর ডাইরেক্টর কাম ট্রেজারার পদে অধিষ্ঠিত হন। পরবর্তীতে তিনি খুলনা জেলা সমবায় ইউনিয়নের ডাইরেক্টর কাম ট্রেজারার পদে অধিষ্ঠিত হন। এরপর তিনি ইং ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) তালা থানায় প্রতিষ্ঠা করেন এবং প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি বিআরডিবি তালা থানার কার্যক্রম নিষ্ঠা ও সুনামের সাথে পরিচালনা করেন। তিনি বিআরডিবি, তালা এর সাথে মহিলা প্রোগ্রাম যুক্ত করে মহিলা সমবায় সমিতি ও ভূমিহীন সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে তিনি তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুর রহমান ব্যাপারীর সহযোগিতায় তালা উপজেলা পরিষদ চত্বরে বিআরডিবি ভবন এর জায়গা চিহ্নিত করেন এবং বিআরডিবি’র ভবন নির্মাণ করেন। এরপর ইং ১৯৮১ সালে তিনি তালা উপজেলার বর্তমানে পাটকেলঘাটা থানার পাটকেলঘাটা বাজারে খুলনা জেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির রেজিষ্ট্রেশন, অফিস ভবনের স্থান চিহ্নিতকরণ, জমি অধিগ্রহণ ও অফিস ভবন প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি এই প্রতিষ্ঠানের (বর্তমানে সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির) প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মূল ভবন সংলগ্ন গেটের পশ্চিম পার্শ্বে পাথরে খোদাই করা বোর্ড সভার সদস্যদের নাম ও দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞদের নাম সম্বলিত নামফলক সন্নিবেশিত আছে।
খুলনা জেলা সমবায় ইউনিয়নের ডাইরেক্টর পদে অধিষ্ঠিত থাকাকালীন সময়ে খুলনা থেকে প্রকাশিত দৈনিক পূর্বাঞ্চল পত্রিকার সম্পাদক মরহুম আলহাজ্জ লিয়াকত আলী সাহেবের সাথে পরিচয় হয় এবং বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। বন্ধুত্বের সুবাদে তিনি শেখ আব্দুস সাত্তারকে দৈনিক পূর্বাঞ্চল পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি ও সাতক্ষীরার ব্যুরো চীফ হিসাবে নিয়োগ দেন। তালা থানা যখন তালা উপজেলায় উন্নীত হলো তখন তিনি তালা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর তিনি সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের একাধিকবার কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও অর্থ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্র প্রনয়ন ও সাংবাদিকদের কল্যাণ ফান্ডের জন্য আরব বাংলাদেশ (এবি) ব্যাংক, সাতক্ষীরা শাখায় পঞ্চাশ হাজার টাকা এডিআর করেন। সেই এফডিআরের টাকা দিয়ে বর্তমানে সাংবাদিক কল্যাণ ফান্ডের যাত্রা শুরু হয়। তিনি ইং ১৯৬৫ সাল হতে ইং ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বপূর্ণ পদে থাকাকালীন সময়ে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার, ঢাকা ও খুলনার বিভিন্ন সাক্ষাতকার অনুষ্ঠানে একাধিকবার সাক্ষাৎকারে অংশগ্রহন করেন। এছাড়াও মিঠাবাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ও নগরঘাটা আলিম মাদ্রাসার গভর্ণিং বডিতে কার্যনির্বাহী পদে থাকাকালীন সময়ে মিঠাবাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিল্ডিং এবং নগরঘাটা আলিম মাদ্রাসার দক্ষিন পার্শ্বের বিল্ডিং নির্মাণসহ এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনা করেন। তিনি দৈনিক পূর্বাঞ্চল পত্রিকা প্রকাশের পর থেকে মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত দৈনিক পূর্বাঞ্চলের বিশেষ প্রতিনিধি ও সাতক্ষীরার ব্যুরো চীফ হিসাবে দীর্ঘ ৪০ বছরের অধিকাল যাবৎ দক্ষ, সৎ, ও নিষ্টার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।
ইং ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য থাকাকালীন সময়ে তিনি ডায়াবেটিস ও জ্বরে মারাত্মকভাবে অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। প্রথমে তাঁকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ও পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজী বিভাগে দীর্ঘ চার মাস চিকিৎসাধীন ছিলেন। চিকিৎসা শেষে তিনি ২০১১ সালের মার্চ মাসে তার কর্মস্থল সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে আবার ফিরে আসেন। তিনি দীর্ঘদিন নিরব ঘাতক ব্যাধি ব্লাড ক্যান্সার ও ডায়াবেটিস রোগে ভুগতেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি আবারও অসুস্থ্য হয়ে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। অবশেষে ইং ২০১১ সালের ০৯ ই সেপ্টেম্বর রোজ- শুক্রবার সকাল ১০ টা ১০ মিনিটে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মুত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। তিনি পাঁচ পুত্র ও তিন কন্যার জনক ছিলেন। তিনি নিষ্ঠা ও সততার সাথে কাজ করে জেলা, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ে যেসব প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন করে গেছেন সেসব প্রতিষ্ঠান তাঁর স্বাক্ষ্য বহন করে চিরদিন টিকে থাকবে। পরিশেষে তার এই ৬ষ্ঠ মৃত্যু বার্ষিকীতে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই এবং তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাতের জন্য সবার কাছে দোয়া কামনা করি।
বিনীত
এবিএম মোস্তাাফিজুর রহমান (সাংবাদিক)
দ্যা নিউ নেশন, সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি ও
কার্যনির্বাহী সদস্য, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব, সাতক্ষীরা।
মোবাইল ঃ ০১৭১৫-২৬৮০৮৫, ০১৭৫৭-৮০২৫৮৪
Check Also
সাতক্ষীরায় লটারীতে টিকে থাকা ৭১ শিক্ষার্থীকে ভর্তির সুযোগের দাবিতে অভিভাবকদের সংবাদ সম্মেলন
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি ভর্তির লটারীতে টিকে থাকার পরও শুধুমাত্র বয়সের অজুহাতে সাতক্ষীরা সরকারি বালক ও বালিকা …