কোটিপতিদের ক্লাবে পরিণত হয়েছে সংসদ: সুজন

ঢাকা: জাতীয় সংসদ কোটিপতিদের ক্লাবে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।
শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
‘সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সুস্পষ্ট করণীয় : ভোটার তালিকার সঠিকতা নিশ্চিতকরণ, সীমানা পুনর্র্নির্ধারণ, ভোটারদের তথ্যভিত্তিক ক্ষমতায়ন, নির্বাচনী ব্যয় হ্রাস ও নিয়ন্ত্রণ’ শীর্ষক এ আলোচনার আয়োজন করে সুজন।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচনী ব্যয়ের বৈধসীমা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। বিগত কমিশন এ ব্যয়সীমা ১৫ লাখ থেকে ২৫ লাখ টাকা করেছে। ফলে সাধারণ নাগরিকদের ভোটাধিকার থাকলেও প্রতিনিধি হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আর জাতীয় সংসদ পরিণত হয়েছে কোটিপতিদের ক্লাবে। বস্তুত আমাদের বর্তমান ব্যবস্থা হয়ে পড়েছে ‘বেস্ট ডেমোক্রেসি মানি ক্যান বাই’। তাই কমিশনকে নির্বাচনী ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরতে হবে, একইসঙ্গে নির্বাচনী ব্যয়ের বৈধসীমা কমাতে হবে।
সুজনের সম্পাদক আরও বলেন, আইন অনুযায়ী বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার কথা। কিন্তু এখনও বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়নি। এজন্য ভোটার তালিকায় অসঙ্গতি রয়েছে।
তিনি বলেন, গত নির্বাচনে নিরাপত্তার জন্য ৩৩৩ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। এই টাকা আমরা কাদের দিলাম এবং তার থেকে কী পেলাম? যাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দলীয়করণের অভিযোগ আছে, যারা পক্ষপাতদুষ্ট এবং শুধু তাই নয়, আমরা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দেখেছি- তারাই সিল মেরেছে, তারাই ভোটারদের যেতে দেয়নি। তাই আমরা বলতে চাই, নিরাপত্তার বিষয়টি কোটি কোটি টাকা খরচ করে ইজারা না দিয়ে নির্বাচন কমিশনকেই নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে।
বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চলনায় এবং সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী প্রমুখ।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অবশ্যই সরকারের সদিচ্ছার প্রয়োজন। রাজনৈতিক সংস্কৃতি এখন সুবিধাভোগী সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। এটা পরিবর্তন না হলে নির্বাচন কমিশনে আপনি মোহাম্মদ আলীকে বসিয়ে দিলেও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না।
আমলাদের রাজনীতিকরণ করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ছয় লাখ লোক লাগে বাংলাদেশে একটি নির্বাচন সম্পন্ন করতে। এই ছয় লাখ লোক আমলা এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী। এটা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব নয়।
নির্বাচন কমিশনের বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো আইন হয়নি। যাকে যেভাবে দরকার তাকে সেভাবে নিয়োগ দেয়া হয়। এটা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
নির্বাচন কমিশনারদের প্রথম ‘হেডেক’ নিরাপত্তা ইস্যু উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাজেটের ৭৫ শতাংশ খরচ হয় নিরাপত্তায়। শেষ নির্বাচনে, যেখানে ১৫৪ জন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন, সেখানে ৩৩৩ কোটি টাকা শুধু নিরাপত্তা খাতে খরচ হয়েছে।
‘কী নিরাপত্তা আমাদের দেয়? আমরা যদি পুলিশের লোকদের জিজ্ঞাসা করি গত নির্বাচনে কোন কোন জায়গায় কী কী সমস্যা হয়েছিল- এর কোনো তথ্য নেই তাদের কাছে। নির্বাচন কমিশনও এ তথ্য সংগ্রহ করে না,’ বলেন সাখাওয়াত হোসেন।
ভোটার তালিকার বিষয়ে তিনি বলেন, এখন যে ভোটার তালিকা আছে এর থেকে সঠিক ভোটার তালিকা এই উপমহাদেশে আর নেই। এই ভোটার তালিকা ৯৯ দশমিক ৯ শতাংশ সঠিক। দুনিয়াতে কোনো ভোটার তালিকা ৯৯ শতাংশ সঠিক হয় না।
হাফিজউদ্দিন বলেন, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হলো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। তার জন্য যা কিছু করা দরকার, নির্বাচন কমিশনকে করতে হবে। যদি আইনের কোনো ঘাটতি থাকে তাহলে সরকারকে বলতে হবে- এটি করে দাও, এটা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। নির্বাচন কমিশন থেকেই এই উদ্যোগ নিতে হবে।

সভায় অন্যান্য বক্তারা বলেন, রাজনীতি এখন সুবিধাভোগী সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। আমলাদের রাজনীতিকরণ করা হচ্ছে। নির্বাচনের নিরাপত্তা ইস্যুতে অস্বাভাবিক অর্থ খরচ করা হচ্ছে।
বর্তমান পদ্ধতিতে নিরপেক্ষ নির্বাচন সরকারের সদিচ্ছা ছাড়া সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন বক্তারা।

Check Also

ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়

দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।