ঢাকা: নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধি নিয়ে সর্বদলীয় সরকার গঠন করে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি। সেনা মোতায়েনের পাশাপাশি তফসিল ঘোষণার পূর্বেই চলমান দশম জাতীয় সংসদ ভেঙে দেয়ারও দাবি জানায় দলটি। অন্যদিকে নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিপক্ষে মত দিয়েছে ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন। রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে রোববার বিকেলে অনুষ্ঠিত ইসির সাথে মতবিনিময়ে এসব দাবি জানান তারা। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন।
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এম এ মুকিনের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দল বৈঠকে অংশ নেয়।
সংলাপে অংশ নিয়ে মোট ১২টি প্রস্তাব দেয় দলটি।
এগুলোর মধ্যে রয়েছে- নির্বাচনের কমপক্ষে ছয় মাস আগে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করে তালিকা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রকাশের ব্যবস্থা করা। নির্বাচনের তিন মাস আগ থেকে এবং নির্বাচনের পর কমপক্ষে এক মাস ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েনের ব্যবস্থা নিতে দাবি জানান তারা।
এছাড়া জাতীয় নির্বাচন একদিনই না করে প্রতিটি বিভাগে আলাদা আলাদা দিনে নির্বাচন করে একদিনে ফলাফল প্রকাশ করা, রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের নির্বাচনের যেকোনো কাজ থেকে দূরে রাখা, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা বসানো, প্রবাসীদের ভোটার করে ভোট দানের ব্যবস্থা, প্রতিটি সংসদীয় আসনে সব ধরনের মিছিল সমাবেশ নিষিদ্ধ করে ইসির খরচে ও উদ্যোগ অংশ নেয়া সব প্রার্থীকে একই মঞ্চে পর্যাপ্ত পরিমাণ পরিচিত সভা করা।
দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য আনুপাতিকহারে সংসদে আসন সংরক্ষিত রাখা, ব্যালটে ‘না’ ভোটের বিধান রাখা এবং সবার জন্য সমান সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার দাবি জানান তারা। এর আগে সকালে ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন এর সাথে সংলাপ করে ইসি। সংলাপে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিপক্ষে মত দিয়েছে দলটি।
তবে বিশেষ জরুরি অবস্থায় বিজিবিসহ অন্যান্য বাহিনী নিয়োগ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার দাবি জানায়। এছাড়াও সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা বজায় রাখার জন্য বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনেই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন চান তারা।
ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাহানারা বেগম আলোর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল এতে অংশ নেন।
জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলনের লিখিত ১০ দফা সুপারিশের মধ্যে রয়েছে- কালো টাকা, সন্ত্রাস ও পবিত্র ধর্মের অপব্যবহারমুক্ত নির্বাচনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা; দলীয় প্রচারে কোনো অবস্থায় দলসমূহ ধর্মীয় বিষয়কে ভোট সংগ্রহের জন্য ব্যবহার করতে না দেয়া; ধর্মের নামে রাজনীতি করে এমন দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ না দেয়া; এমন দলের নিবন্ধন বাতিল করা এবং ভবিষ্যতে নিবন্ধন না দেয়া; নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে সম্পাদনের জন্য সব দলের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করা; সুষ্ঠু নির্বাচন উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা যাতে সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে এবং জনগণ যাতে নির্ভয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সে ব্যবস্থা করা।
ভোটার সংখ্যা অনুপাত এবং প্রশাসনিক এরিয়া বিবেচনায় রেখে সংসদীয় এলাকার সীমানা নির্ধারণ করা; নির্ভুল ও স্বচ্ছ ভোটার তালিকা করার জন্য পর্যাপ্ত দক্ষ লোকবল নিয়োগ করে খসড়া তালিকা তৈরির পর প্রতিটি ওয়ার্ডের একাধিক উপযুক্ত স্থানে জনসম্মুখে খসড়া তালিকা উপস্থাপন করা এবং উপস্থিত এলাকার জনগণের মাধ্যমে পুনঃযাচাই সাপেক্ষে নির্দিষ্ট সময় পরে (কমপক্ষে ১৫ দিন সময় দিয়ে) ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা।
নিবন্ধিত দল যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী কিন্তু নানা কারণে নির্বাচনে কখনও অংশগ্রহণ করেনি সেসব দলের নিবন্ধন চলমান রাখা অর্থাৎ বাতিল করা যাবে না যদি না কোনো দল দেশদ্রোহী কাজে লিপ্ত হয়, নির্বাচনপূর্ব এবং নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে মাঠে রাখতে হবে যেন ধর্মীয় সংখ্যালঘু এলাকাসহ সব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় স্বাভাবিক অবস্থা বজায় থাকে; একই দিনে ৩০০ আসনে নির্বাচন সম্পন্ন করা এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র অনলাইনে জমা দেয়ার সুযোগ নিশ্চিত করা।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে অংশীজনদের সাথে সংলাপ শুরু করেছে ইসি। এরই ধারাবাহিকতায় এ সংলাপ।
গত ৩১ জুলাই সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, ১৬ ও ১৭ আগস্ট গণমাধ্যম প্রতিনিধির সাথে মতবিনিময় করে ইসি। ২৪ আগস্ট থেকে দলগুলোর সাথে মতবিনিময় শুরু হয়েছে।