‘কূটনৈতিক ব্যর্থতায় সরকার চীন-ভারত-রাশিয়াকে কনভিন্স করতে পারেনি’

কূটনৈতিক ব্যর্থতার জন্য সরকার চীন, ভারত ও রাশিয়াকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ‘কনভিন্স’ করতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শনিবার বিকাল ৪টার দিকে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সঙ্গে ২০ দলীয় জোটের এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

এ সময় আমিত্ব বাদ দিয়ে ক্ষমতাসীনদের প্রতি আবারও জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব।

সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ আজকে সিদ্ধান্ত একটাই, রোহিঙ্গা নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য মিয়ানমারকে বাধ্য করতে হবে। এজন্য স্যাকশন দিতে হবে, প্রয়োজনে তাদের ওপরে নিষেধাজ্ঞা বা অ্যামবারগো আরোপ করতে হবে এবং সেটা কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই করতে হবে।’

বন্ধুত্ব ‘একমুখী’ হয় না উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমার সরকারের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করতে হবে, কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের বাধ্য করতে হবে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার জন্য। দুর্ভাগ্য আমাদের যারা ঘনিষ্ঠ বন্ধু তারা মিয়ানমারের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।’

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সভায় চীন ও রাশিয়ার ভূমিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আমি খুব হতবাক হয়ে গেছি। চীন ও রাশিয়ার কারণে সেখানে সিদ্ধান্ত হতে পারেনি।’

মির্জা ফখরুল বলেন, আবারও সরকারের কাছে আহবান জানাতে চাই, আমিত্বকে বিসর্জন দিন এবং হিপোক্রেসিকে বাদ দিয়ে সত্যিকার অর্থে দেশকে রক্ষার করার জন্য, এই সমস্যা সমাধান করার জন্য আপনারা জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করুন। গণহত্যা বলেন, নিন্দা জানান এবং সেই দেশগুলোতে ডিপ্লোমেটিক মেন্যুভার করেন, যেসব দেশগুলো মিয়ানমারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ বৌদ্ধ নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক সুকোমল বড়ুয়া জানান, তারা অতি দ্রুত ১১ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের ‘শান্তি মিশন টিম’ গঠন করে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান ও দেশটির নেত্রী অং সান সু চির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এছাড়া তারা রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে জনমত গড়ে তুলতে ১১ দফা প্রস্তাবনাও উপস্থাপন করেন। এসবের মধ্যে আছে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময় এবং জেলা ও থানা পর্যায়ে মতবিনিময় অনুষ্ঠান।

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের করুণ অবস্থা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কোথাও কোনো সমন্বয় নেই। বহুদিন পরে সেনাবাহিনী দায়িত্ব নেয়ার পরে সেখানেও তারা বাধার সৃষ্টি করছে।’

রোহিঙ্গা সমস্যা কোনো ধর্মীয় বিষয় নয় উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ একটা জাতিকে নির্মূল করার বিষয়। হিন্দু না মুসলিম সেটা ইমম্যাটারিয়াল। মূল বিষয়টা হচ্ছে সেখানে একটা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীকে (রোহিঙ্গা) নির্মূল করা হচ্ছে।’

মতবিনিময় সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ২০ দলীয় জোটের শরিক জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, ইসলামী ঐক্যজোটের অ্যাডভোকেট এম এ রকীব, খেলাফত মজলিশের অধ্যাপক আহমেদ আবদুল কাদের, ন্যাপের জেবেল রহমান গানি, জাগপা’র রেহানা প্রধান, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা মহিউদ্দিন ইকরাম বক্তব্য রাখেন।

হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের গৌতম চক্রবর্তী, জন গোমেজ, বৌদ্ধ সম্প্রদায়েরর ম্যা মা চিং, সুশীল বড়ুয়া, উদয় কুমার বড়ুয়া, ঝন্টু কুমার বড়ুয়া প্রমূখ নেতারাও মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন।

Check Also

ট্রাইব্যুনালে আ.লীগ নেতাদের বিচার দেখতে এসে যা বললেন সাঈদী পুত্র

জুলাই-আগস্টের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া সাবেক ৯ মন্ত্রীসহ ১৩ জনকে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।