সাতক্ষীরায় স্বামী ও ছেলে হত্যার বিচার চান আমেনা

২০১৩ সালে বাড়িতে ঢুকে স্বামী সিরাজুল ইসলামকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। একইভাবে ২০১৭ সালে ছেলে যুবলীগ নেতা রাসেল কবিরকে গুলি করে হত্যা করে। এ ছাড়া তাঁর বাড়িতে একাধিক হামলা ও আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

এসব হত্যা ও হামলার ঘটনার বিচার চান আমেনা বেগম। তিনি সাতক্ষীরার সদর উপজেলার আগরদাড়ি ইউনিয়নের কুচপুকুরের বাসিন্দা। মেয়ে লাভলিকে নিয়ে বিচারের জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি। আজ শুক্রবার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এসে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন আমেনা বেগম। তিনি এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

আমেনা খাতুন জানান, ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর রাতে তাঁর বাড়িতে ঢুকে একদল সন্ত্রাসী তাঁর স্বামী সিরাজুল ইসলামকে গুলি করে হত্যা করে। এ সময় তাঁর বোনের স্বামী কাওসার ও বোনের ছেলে শিমুল গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। এরপর তাঁর দেবর নজরুল ইসলামকে হত্যার উদ্দেশ্যে খুঁজতে থাকে। নজরুল ইসলাম আগরদাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি।

আমেনা জানান, নজরুল প্রাণে বাঁচতে সাতক্ষীরা থানায় আশ্রয় নেন। সন্ত্রাসীরা ২০১৭ সালের ১০ এপ্রিল রাতে তাঁর ছেলে রাসেল কবিরকে শহরের রাজারবাগান এলাকার ভাড়া বাড়ির সামনে গুলি করে হত্যা করে। রাসেল আগরদাড়ি ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

এ ঘটনায় তিনি ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে সাতক্ষীরা থানায় মামলা করেন। মামলায় তিনি উল্লেখ করেন রাসেল কবির তাঁর বাবা সিরাজুল হত্যাসহ সব মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী ছিলেন। কবিরকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছিল দুর্বৃত্তরা। প্রাণ বাঁচাতে রাসেল গ্রামের বাড়ি ছেড়ে শহরে এসেও রক্ষা পাননি। তিনি জানান, রাসেলকে হত্যার পর সন্ত্রাসীদের নজর রয়েছে তাঁর ছেলে নাহিদ হাসান অভির ওপর।

আমেনা খাতুন আরো জানান, ২০১৩ সালের ৩ মার্চ তাঁদের বাড়ি ও ধানচালের আড়তে সন্ত্রাসীরা আগুন ধরিয়ে দেয়। ওই বছরের ২৭ জুন তাঁদের দোকান লক্ষ্য করে সন্ত্রাসীরা পরপর চারটি বোমা মারে। এতে নজরুলের বোন শাহানা খাতুন ও বোনজামাই জাহান আলী আহত হয়ে পঙ্গু হয়ে গেছেন। এর কিছুদিনের মাথায় ২০ জুলাই নজরুলের বাড়িতে বোমা নিক্ষেপে আরো একটি শিশু আহত হয়। ওই বছরের  ১৬ নভেম্বর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে তাঁর স্বজন ইউসুফ আলীকে অপহরণ করে সন্ত্রাসীরা। কয়েকদিন পর তাঁকে মুক্তি দেয় সন্ত্রাসীরা। ২০১৬ সালের ৮ এপ্রিল আমেনার দেবর নজরুল ইসলামের বাড়িতে আবার সন্ত্রাসীরা বোমা হামলা করে। এতে তিনি আহত হন। এর পর থেকে আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ও তাঁর ভাতিজা যুবলীগ নেতা রাসেল কবির সাতক্ষীরা থানায় থাকতেন। একপর্যায়ে শহরে নতুন বাড়িভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকেন রাসেল কবির। এদিকে এসব ঘটনার পর আমেনা খাতুনের বাড়িতে বোমা হামলা চালানো হয়। একই সঙ্গে গুলিও করে। এতে বাড়ির দরজা-জানালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিনি জানান, সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য ছিল তাঁর ছেলে যুবলীগ নেতা রাসেল কবিরকে হত্যা করার।

আমেনা খাতুন বলেন, সব ঘটনায় মামলা হয়েছে। পুলিশ আসামিদের প্রেপ্তারের জন্য বারবার অভিযান চালিয়ে খুঁজে না পেলেও বাবা ও ছেলে হত্যার মূল আসামিরা অজ্ঞাত স্থান থেকে তাঁদের হুমকি দিচ্ছে।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মারুফ আহমেদ জানান, সব মামলা আদালতে চলমান রয়েছে। কয়েকটি মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযানও চলছে। রাসেল হত্যায় তিন আসামি শুকুর আলী, আইয়ুব আলী ও ইকবাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া রাসেলের বাবা সিরাজুল হত্যার দুই আসামি হবিবর ডাকাত  ২০১৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর ও আনিসুর রহমান পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন

Check Also

সাতক্ষীরা শহর শখার ২ নং ওয়ার্ডের উদ্যোগে সভা অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি সাতক্ষীরা শহর শখার ২ নং ওয়ার্ড (রাজারবাগান ও সরকারপাড়া ইউনিট) এর উদ্যোগে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।