শাহাজাহান চৌধুরীর ৩৫ পৃষ্ঠার চিঠি নিয়ে তোলপাড়

জামায়াত আমিরের কাছে ৩৫ পৃষ্ঠার একটি চিঠি লেখেন চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াত নেতা ও সাবেক এমপি শাহাজাহান চৌধুরী। ওই চিঠি এখন পুলিশের হাতে। গত ৯ই অক্টোবর ঢাকার উত্তরায় একটি বাসা থেকে জামায়াত আমিরসহ শীর্ষ ৯ নেতা গ্রেপ্তারের সময় চিঠিটিও কব্জা করেন পুলিশ। পরে চিঠিটি সম্পর্কে সাংবাদিকদের জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি (উত্তর) শেখ নাজমুল আলম। আর এ চিঠি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় চট্টগ্রামের রাজনীতিক অঙ্গনে। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এ নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা করছে। ফেসবুকেও নানা মন্তব্য করছে নেতাকর্মীরা।
তবে এ ব্যাপারে তেমন মাথা-ব্যাথা নেই চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি’র। জানতে চাইলে নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, জামায়াতের সাংগঠনিক কর্মতৎপরতা নিয়ে আমার বলার কিছুই নেই। তবে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিরোধীদের এভাবে দমন-পীড়ন মেনে নেওয়া যায় না। তিনি বলেন, তারা তো রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ করতে সেখানে বসেনি। সংগঠনের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিয়ে বসেছিলেন। তবুও কেন এই গ্রেপ্তার। এটা তো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বলেন, জামায়াত নিষিদ্ধ সংগঠন। সাংগঠনিক কাজ তো তারা চালাতে পারে না। চালালে নিশ্চয় রাষ্ট্রবিরোধী কাজ। তাছাড়া ফৌজদারি মামলার কোন আসামি এভাবে বৈঠকে মিলিত হতে পারে না, পুলিশ সেটা বলে দিয়েছে। পুুলিশ বলেছে, নাশকতার উদ্দেশ্যে তারা ঢাকায় মিলিত হয়েছে। তাছাড়া সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, চট্টগ্রামের জামায়াত নেতা ও সাবেক এমপি শাহাজাহান চৌধুরীর লিখিত ৩৫ পৃষ্ঠায় কি আছে। পুলিশ তো তদন্তের স্বার্থে ওই চিঠির সবকিছুই বলছে না। কিন্তু এ নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন ও উৎকন্ঠায় আছি। তিনি বলেন, জামায়াত আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন। এদের নাভি পাকিস্তানে। এ চিঠিতে জঙ্গি হামলা পরিকল্পনা বা গোপন কিলিংয়ের কোন নির্দেশনা নেই তো। তবে আশ্বস্তের বিষয় হচ্ছে- এ চিঠি পুলিশের হাতে যখন পড়েছে, তখন পরিকল্পনার সব কিছু উপড়ে ফেলবে। চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ ডবলমুরিং থানার যুগ্ম সম্পাদক ওয়াহিদুল আলম তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, জামায়াত নেতা শাহাজাহান চৌধুরী চট্টগ্রামে সিরিয়াল কিলিং মিশনের গোপন পরিকল্পনার বিষয়ে লেখেননি তো চিঠিতে। সাবধান চট্টগ্রামের লেখক, বুদ্ধিজীবি, আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতারা। প্রকৃতপক্ষে ৩৫ পৃষ্ঠার ওই চিঠিতে দলীয় নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে, অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনে জামায়াতের আমির মকবুল আহমদের হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানানো হয়। গত ৩রা অক্টোবর এ চিঠিটি হাতে পান মকবুল আহমেদ। চিঠিটি হাতে পাওয়ার এক সপ্তাহের মাথায়ই ৯ই অক্টোবর উত্তরায় বৈঠকে মিলিত হন শীর্ষ জামায়াত নেতারা। এরপরই পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের নেতাকর্মীরা জানান, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসন নিয়ে নায়েবে আমির শামসুল ইসলাম ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ চলে আসছে। শামসুল হকের পক্ষে রয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি এবং চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের একটি বড় অংশ। অন্যদিকে শাহজাহানকে সমর্থন করছে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জামায়াত ও স্থানীয় নেতারা। এ অবস্থার মধ্যেই কেন্দ্র থেকে শাহজাহানকে চট্টগ্রাম শহরের একটি কাজের নির্দেশ দেয়া হয়, যা তিনি করেননি। এতে ওই বিরোধ আরো প্রকট হয়। দুইজনের পক্ষে বিপক্ষে ফেসবুকে সরব হয়ে উঠেন সমর্থকরা। এমন অবস্থায় শাহজাহান চট্টগ্রাম জামায়াতের অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটাতে আমিরের হস্তক্ষেপ কামনা করে ওই চিঠি পাঠান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৯ই অক্টোবর উত্তরার ওই বাসায় সমঝোতা বৈঠক বসে। যেখানে কেন্দ্রীয় নেতারা গ্রেপ্তার হন। যদিও সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের মতে, গোপনে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করার ছক কষছিল জামায়াত। রাজপথে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে ও আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজেদের কর্মপন্থা নির্ধারণ করতেই গোপন বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন দলটির শীর্ষ নেতারা। এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি (উত্তর) শেখ নাজমুল আলম বলেন, আমাদের কাছে তথ্য ছিল যে জামায়াত নেতারা উত্তরার ওই বাসায় বৈঠকে মিলিত হয়ে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র করছিলেন। সেখানে একত্রিত হওয়া প্রত্যেক নেতার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল। ফৌজদারি মামলার আসামিরা কখনই একত্রিত হয়ে বৈঠক করতে পারে না। তিনি আরো বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া জামায়াত নেতাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে। এসব তথ্যের ভিত্তিতে অধিকতর অনুসন্ধান ও তদন্ত চলছে।http://www.mzamin.com

Please follow and like us:

Check Also

অনিশ্চয়তার নতুন যুগে মধ্যপ্রাচ্য

ইউক্রেন-রাশিয়া রেশ কাটতে না কাটতেই ফিলিস্তিনের গাজায় শুরু হয় ইসরাইলি আগ্রাসন। এরপর থেকে অশান্ত হতে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।