ঢাকা: দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও বড় পরাজয় টাইগারদের। ৩৫৩ রানের পাহাড় টপকাতে মাঠে নেমে ২৪৯ রানেই অলআউট। এতে শনির দশা যেন কোনোমতেই কাটছে না। টাইগারদের আজকের পরাজয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই ২-০ তে সিরিজ জিতে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম ওয়ানডেতেও ১০ উইকেটে হেরেছিল বাংলাদেশ।
আজ দুই ওভার বাকি থাকতেই ২৪৯ রানে অলআউট বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশ হারলো ১০৪ রানে। সঙ্গে সিরিজ হারও নিশ্চিত হয়ে গেল বাংলাদেশের। ইমরুল আর মুশফিক ছাড়া কেউ ৫০ পেরোতে পারেনি। অন্যদের মধ্যে মাহমুদুল্লাহ ৪৬ বলে করেন ৩৫ রান। বাংলাদেশ শেষ ৬ উইকেট হারালো ৬৫ রানের মধ্যে।
এদিন ব্যাটিং করতে নেমে ইমরুল কায়েস ও মুশফিকুর রহিম ছাড়া আর কেউ দায়িত্বের সঙ্গে খেলতে পারেননি। প্রথম ওয়ানডেতেও এই দুজন ছিলেন ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ স্কোরার। সেই ম্যাচে ১০ উইকেটে হারে বাংলাদেশ।
৩৫৪ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে আজ শুরুতে বেশ ইতিবাচকভাবে ব্যাটিং করেন তামিম ও ইমরুল। তবে অষ্টম ওভারে এসে প্রতিরোধটা শেষ হয়। দলীয় ৪৪ রানে ডিন প্রিটোরিয়াসের বলটা ঠেকাতে পারেননি তামিম। বল এসে লাগে তাঁর প্যাডে। প্রোটিয়া ফিল্ডারদের আবেদনে সাড়া দিতে মোটেও সময় নেননি আম্পায়ার। তামিমও রিভিউ নেওয়ার সাহস করেননি। ২৩ রান করেন তিনি।
এরপর ভালো খেলছিলেন লিটন দাস। ফেলুকায়োর বলে তিনিও লেগ বিফোর হন। রিভিউ নিলেও বাঁচতে পারেননি এই ব্যাটসম্যান। ১৪ রান করেন লিটস। এরপর লড়াইটা চালিয়ে যান ইমরুল কায়েস ও মুশফিকুর রহিম। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৯৩ রান যোগ করেন তাঁরা। এরপর দলীয় ১৬২ রানে ফিরে যান ইমরুল। খানিক বাদে ফিরে যান সাকিব আল হাসানও। ইমরুল ৬৮ রান করেন। সাকিব করেন মাত্র ৫ রান।
মুশফিকুর রহিমের ব্যাটের দিকে তাকিয়ে ছিল বাংলাদেশ। গত ম্যাচের এই সেঞ্চুরিয়ান এই ম্যাচেও দুর্দান্ত খেলছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত লড়াইটা টেনে নিয়ে যেতে পারেননি তিনি। প্রিটোরিয়াসের বলে ডুমিনিকে ক্যাচ দেন এই ব্যাটসম্যান। আউট হওয়ার আগে ৭০ বলে চারটি চারে ৬০ রান করেন মুশি।
মুশফিকের বিদায়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের শেষ আশাটুকুও শেষ হয়ে যায়। এরপর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, নাসির হোসেন, সাব্বির রহমানরা কেবল রানের ব্যবধানটাই কমিয়েছেন। প্রোটিয়া বোলারদের মধ্যে অ্যানদিলে ফেলুকায়ো নিয়েছেন চারটি উইকেট। এ ছাড়া ইমরান তাহির নেন তিন উইকেট।
এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার মাঠে আগে ব্যাট করে সাড়ে তিন শ রান করা মোটেও অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়।
কিন্তু চলতি সফরে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের ফর্ম এই টার্গেটকেই কঠিন করে ফেলেছে। সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে ডি ভিলিয়ার্সের বিধ্বংসী সেঞ্চুরি আর হাশিম আমলার ব্যাটিং দাপটে ৫ উইকেটে ৩৫৩ রান তুলে প্রোটিয়ারা। রুবেলের ৩ উইকেট আর সাকিবের ২ উইকেটে রানবন্যা আটকানো সম্ভব হয়নি।
ইনিংসের শুরু থেকে সাবলীলভাবেই খেলছিল প্রোটিয়ারা। আরেকটি শতরানের ওপেনিং জুটি গড়ার আগেই আঘাত হানেন বিশ্বসেরা অল-রাউন্ডার সাকিব আল হাসান। সাকিবের ঘূর্ণিবলে লাইন মিস করে এলবিডাব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন আগের ম্যাচে দেড় শতাধিক রান করা কুইন্টন ডি কক (৪৬)রানে ফিরে এসেছিল সাজ ঘরে। ৯০ রানে উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর দ্বিতীয় ব্রেক থ্রু টিও এল একই ওভারে। দুর্দান্ত ফ্লাইট ডেলিভারিতে অধিনায়ক ফাফ ডু-প্লেসিসের স্টাম্প উড়ে গেল। কোনো রান না করেই ফিরতে হলো ডু-প্লেসিসকে।
৯০ রানে ২ উইকেট হারানোর পর ১৩৬ রানের জুটি গড়ে বিপদ সামাল দেন ডি ভিলিয়ার্স এবং গত ম্যাচের শতাধীক রানের অধীকারি হাশিম আমলা। ওই মুহূর্তে একটি ব্রেক থ্রু দরকার ছিল। হাশিম আমলাকে (৮৫) মুশফিকুর রহিমের তালুবন্দি করে সেই ব্রেক থ্রু এনে দেন রুবেল হোসেন।
কিন্তু কামব্যাক ম্যাচে ঠিকই ক্যারিয়ারের ২৫তম সেঞ্চুরি তুলে নেন বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান এবি ডি ভিলিয়ার্স। ৬৮ বলে ঝড়ের গতিতে সেঞ্চুরির পর রুবেলের বলে ক্যাচ দেওয়ার আগে করেন ১০৪ বলে ১৫ চার ৭ ছক্কায় ১৭৬ রান। এরপর ডুমিনি (৩০) আর প্রিটোরিয়াসকেও (০) শিকারে পরিণত করেন রুবেল।
সংক্ষিপ্ত স্কোরকার্ড-
বাংলাদেশ : (৪৭.৫ ওভারে ২৪৯) (তামিম ২৩, ইমরুল ৬৮, লিটন ১৪, মুশফিক ৬০, সাকিব ৫, মাহমুদুল্লাহ ৩৫, সাব্বির ১৭, নাসির ৩, মাশরাফি ০, তাসকিন ৩*, রুবেল ৮; রাবাদা ০/৪০, প্যাটারসন ১/৬৭, প্রিটোরিয়াস ২/৪৮, ফেহলুকওয়ায়ো ৪/৪০, তাহির ৩/৫০)।
দক্ষিণ আফ্রিকা : (৫০ ওভারে ৩৫৩/৬) (ডি কক ৪৬, আমলা ৮৫, ডু প্লেসি ০, ডি ভিলিয়ার্স ১৭৬, ডুমিনি ৩০, বেহার্ডিন ৭*, প্রিটোরিয়াস ০, ফেহলুকওয়ায়ো ০*; মাশরাফি ০/৮২, তাসকিন ০/৭১, সাকিব ২/৬০, নাসির ০/৪৯, রুবেল ৪/৬২, সাব্বির ০/১১, মাহমুদুল্লাহ ০/১৬)।