রহিম রেজা, রাজাপুর (ঝালকাঠি) থেকে
‘‘ব্রীজে ওঠতে মোগো ডর হরে, কহন জানি পইররা আত পাও ভাঙ্গে’’, ‘‘মাইয়া পোলার স্কুলে আওয়া-যাওয়া লইয়া আরও বেশি ডরে থাহি’’। মোগো এই ব্রীজটার জিন্নে কারো দয়া অয়না, মোরা এই ব্রীজটা ছাড়া কোনো হানে বাইরাইতেও পারি না। ঝালকাঠির রাজাপুরের মধ্য পুটিয়াখালির গ্রামের বড় খালের ওপরের ভাঙ্গা ও জরার্জিন ব্রীজ পারাপারের দুর্দশার বর্ণানা আঞ্চলিক ভাষায় এভাবেই দিলেন পিয়ারা বেগম (৪২)। চার সন্তানের জননী পিয়ারা ওই গ্রামের আঃ সত্তারের স্ত্রী। এমপি বিএইচ হারুনের নিজ ইউনিয়ন গালুয়ার এ ব্রীজের জন্য ওই এলাকার ৩ শতাধিক পরিবারসহ শিশু শিক্ষার্থী, বৃদ্ধ ও রোগীরা এভাবেই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ব্রিজটির উত্তর পারে আছে পাকা রাস্তা ও হাজেরা আহম্মদিয়া দাখিল মাদ্রাসা। ব্রিজটির দক্ষিন পারে রয়েছে রাস্তাবিহীন খালের পারের মাটির মেঠো পথ। ওই এলাকার বাসিন্দা ও তাদের ছেলে-মেয়েদের লেখা পড়া, হাট বাজারসহ সকল কর্মকান্ডে যাওয়ার জন্য ওই ব্রিজটি পার হওয়া ছাড়া আর কোন বিকল্প পথ নেই বলে জানান এলাকাবাসী। দির্ঘদিন ধরে ব্রীজটির এ বেহাল দশা দেখার কেউ নেই। পিয়ারা বেগম আরও জানান, প্রতিদিন খুব সকালে তার দু’সন্তান ফাহিমা (৮) ও রাকিবসহ (১০) একাধিক ছেলে মেয়ে ঝুঁকি নিয়ে ওই ব্রীজ পার হয়ে হাজেরা আহম্মদিয়া দাখিল মাদ্রাসায় কোরআন শিখতে যায় এবং বৃস্টির দিনে এ সমস্যা চরম আকার ধারন করে। কয়েকদিন দিন আগে বৃস্টির সময় ইউসুফের ছেলে ইয়াছিন (৯) ওই ব্রিজ পার হওয়ার সময় পড়ে গিয়ে তার ডান পা থেতলে যায়। বর্তমানে ব্রিজটির পাটা ভেঙ্গে বিচ্ছিন্নভাবে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকায় ব্রীজের নিচ থেকে এলাকাবাসী কাঠ দ্বারা ঠেক দিয়ে কোন মতে রেখেছেন। স্থানীয় গালুয়া ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মাসুদ হাসান তালুকদার ওরফে দুলাল তালুকদার জানান, প্রায় ১৬ বছর আগে আনুমানিক দেড় লাখ টাকা ব্যয়ে এ আয়রন পাটা ব্রিজটি নির্মান করা হয়। গত ১০ বছর ধরে এ রকম ভাঙ্গা ব্রীুজ দিয়ে এলাকার ৩ শতাধিক পরিবারের শিক্ষার্থী, শিশু, নারী ও বৃদ্ধসহ কয়েক হাজার লোক ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন। মাসুদ হাসান তালুকদার আরও জানান, স্থানীয় এমপি বিএইচ হারুনের ভাই গালুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুল হক কামালকে একাধিকবার জানালেও কোন ফল পাননি। উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী লুৎফর রহমান জানান, খোজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রাজাপুরে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা তোয়াক্কা না করে শিক্ষকরা অবাধে চালাচ্ছে কোচিং
রহিম রেজা, রাজাপুর (ঝালকাঠি) থেকে
ঝালকাঠির রাজাপুরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাকে অমান্য করে শিক্ষকরা অবাধে চালাচ্ছে কোচিং বাণিজ্য। প্রতিটি সরকারি বেসরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক শ্রেণির শিক্ষকরা অবৈধভাবে এ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। কোচিং সেন্টারগুলোতে শিক্ষকরা নিম্নমানের বিভিন্ন প্রকাশনীর গাইড বই পড়তে ও কিনতে বাধ্য করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। গাইড বই প্রকাশনীরগুলো অসাধু শিক্ষকদের দিচ্ছেন মূল্যবান উপঢৌকন ও মোটা অংকের অর্থ। এ কারণে বিদ্যালয়ে পাঠদানে শিক্ষকদের আন্তরিকতার অভাব রয়েছে বলে মনে করেন অভিভাবকরা। তাদের অভিযোগ, ছেলে মেয়েদের বাহিরের কোন শিক্ষকদের দ্বারা পড়ালে তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওই সকল শিক্ষকরা ছেলে মেয়েদের পরিক্ষায় নম্বর কমিয়ে দেবে বলে হুমকি দেয়। মোটা অঙ্কের ধায্য করা মাসোহারা দিতে দরিদ্র পরিবারগুলো হিমশিম খাচ্ছে, তারা অসহায় বানিজ্যিক শিক্ষা ব্যবস্থার কাছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নামে বেনামে গড়ে ওঠা বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে ৪র্থ শ্রেনি থেকে ১০ম শ্রেনি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন সন্ধা থেকে রাত্র ১১টা পর্যন্ত এক টানা উপস্থিত থাকতে বাধ্য করা হয়। এমনও অভিযোগ রয়েছে কোচিং চলাকালিন সময় শিক্ষকদের যথাযথ তদারকির অভাবে ছেলে মেয়েদের অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্তও হচ্ছে। সরকারি আইন অমান্য করে এসব চললেও অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় দেখার কেউ নেই। অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা অনুযায়ী এসব সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও শিক্ষা কর্মকর্তাদের রহস্যজনক ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে অভিভাবক মহলে। তারা এ বাণিজ্য রোধে প্রশাসনের সহযোগিতা চাইছেন। এমনকি প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান কামনা করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক জানান তার মেয়ে রাজাপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৯ম শ্রেনিতে পড়ে সেখানে কয়েকজন শিক্ষকরা আলাদা প্রাইভেট ও কোচিং করাচ্ছে, তার মেয়েকে তাদের কাছে পড়তে নির্দেশ দেয় এবং পরীক্ষায় বেশি নাম্বার দিবে বলে প্রলোভন দেখায়। এমন হাজারো অভিযোগ উপজেলা সদরের অনেক নামিদামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। এ বিষয় রাজাপুর ডিগ্রী কলেজের সাবেক সহকারী অধ্যাপক সোহরাব হোসেন জানান, ‘বর্তমানে শিক্ষকদের মধ্যে কোচিং বাণিজ্যের একটি অশুভ চর্চা শুরু হয়েছে। কমেছে শ্রেণি কক্ষে পাঠদানের মান। অভিভাবকরাও শিক্ষকদের কথায় প্ররোচিত হয়ে অধিক নম্বরের আশায় কোচিংকেই বেশি প্রধান্য দিচ্ছে। এ বিষয় উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সেক্রেটারি সাবেক অধ্যক্ষ শিক্ষাবিদ শাহজাহান মোল্লা জানান ‘এটি বর্তমানে এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা কোচিং বাণিজ্যর সাথে যুক্ত শিক্ষকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। যা পরিবারের উপর বাড়তি আর্থিক চাপ সৃষ্টি করেছে। এ ব্যয় নির্বাহে অভিভাবকগণ হিমশিম খাচ্ছেন। এছাড়াও অনেক শিক্ষক শ্রেণি কক্ষে পাঠদানে মনোযোগী না হয়ে কোচিং এ বেশি সময় ব্যয় করছে। এ ক্ষেত্রে দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীরা এবং অভিভাবকগণ চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন’। ইউএনও আফরোজা বেগম পারুল জানান, কোচিং বন্ধে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা পেয়েছি, নামে বেনামে গড়ে ওঠা কোচিং সেন্টার গুলোর তালিকা করেছি, শীঘ্রই অভিযানের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।